পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র গ্রুপের ছড়াছড়ি, বাড়ছে অস্থিরতা ও লাশের সংখ্যা

মুহাম্মাদ ইব্রাহীম

0
953

চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিরতা দীর্ঘদিনের। তবে বর্তমানে পাহাড়ি এ অঞ্চলটিতে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এই অস্থিরতা। দিনকে দিন অঞ্চলটিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে অবৈধ সশস্ত্র সংগঠনের ততপরতা। যারা রুটিন মাফিক চাঁদাবাজিসহ হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলে। প্রায়ই গ্রুপেগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

আজ (১৮ জুলাই) ভোরে এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছে।

জানা যায়, ভোর সোয়া ৫টার দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের দুর্গম সুকুমার কার্বারী পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম অদুত ত্রিপুরা ওরফে উত্তম ত্রিপুরা। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আহতের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ২৩ বিজিবির যামিনী পাড়া ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদুল করিম জানান, ভোর ৫টা থেকে সোয়া ৫টার মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এমন সংবাদের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তারা। এ সময় একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ১টি একে ২২ রাইফেল, ২টি ম্যাগাজিন, ৩ রাউন্ড গুলি, ৩১ রাউন্ড গুলির খোসা, ১টি ডেমো রাইফেল, চাঁদা আদায়ের রশিদ, তালিকাসহ হিল উইমেনস ফেডারেশনের একটি ব্যানার পাওয়া যায়। সাংগঠনিক কাগজপত্র ও নিহত ব্যক্তি ইউপিডিএফ মূল দলের বলে ধারণা করা হচ্ছে বলেও জানায় বিজিবি।

এছাড়াও, গত ১৫ জুলাই বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন সদর উপজেলার ৬নং জামছড়ি ইউনিয়নে একদল সশস্ত্র গ্রুপ কর্তৃক শৈসিংমং মারমা, পীং-খ্যিদুং মারমা নামে দুই নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে গলাকেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।

আনুমানিক রাত ২:৩০ টার দিকে জামছড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাঘমারা হেডম্যান পাড়ায় ভিকটিমের নিজ বাড়িতে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

নিহত শৈসিংমং মারমার স্ত্রী উম্যানু মারমা (৩৬) জানান, ‘কয়েকজন মুখোশধারী লোক গভীর রাতে ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে গলাকেটে হত্যা করে।’ বাড়িতে শৈসিংমং মারমা, তার স্ত্রী ও তাদের দুই কন্যা সন্তান থাকত বলে জানা গেছে। ঘটনার পরপরই উম্যানু মারমা ভয়ে তার দুই সন্তান নিয়ে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নেয় বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য, যে গ্রামে শৈসিংমং মারমা হত্যার শিকার হয়েছেন সশস্ত্র গ্রুপ ইউপিডিএফ দলের বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি হেডম্যান মংপু মারমার বাড়িও সেই গ্রামে। ধারণা করা হয় যারাই এসব গ্রুপের নীতি ও আদর্শের বিরুদ্ধে কাজ করে তাদেরকেই টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক এই উপজাতি সশস্ত্র গ্রুপগুলর মধ্যে যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চলছে, সেটা মূলত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জুম্মল্যান্ড আন্দোলন থেকে ব্যাপক ভিত্তিক খ্রিস্টান রাষ্ট্র কায়েমের দিকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করছে। আর যেহেতু এই অঞ্চলের মুসলিমদের  ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরেও এদেশের দালাল সরকার কোন পদেক্ষেপ নিচ্ছে না, তাই মুসলিমদেরকেই এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহব্বান জানিয়েছেন হক্কানী উলামায়ে কেরাম।


তথ্যসূত্র:
——–
১। খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত ১: অস্ত্র, গুলি উদ্ধার-
https://tinyurl.com/y25rmeb5
২। বান্দরবানে দুর্বৃত্ত কর্তৃক এক মারমা গ্রামবাসীকে গলাকেটে হত্যা-
https://tinyurl.com/mrynhfev

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে দেশে ইসলাম বিদ্বেষ: জার্মানিতে হিজাবি মহিলাকে হেনস্থা
পরবর্তী নিবন্ধকাশ্মীরে গ্রেনেড বিস্ফোরণে হিন্দুত্ববাদী ভারতের ২ সেনা অফিসার নিহত, আহত ৪