পূর্ব তুর্কীস্তানে একজন উইঘুর মুসলিম চিকিৎসক আট বছর দখলদার চীনের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী থেকে মুক্তি পান। এরপর গত সেপ্টেম্বের রহস্যজনকভাবে মারা যান তিনি।
পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত কিছু ব্যক্তি এবং স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, তুদাহুন নুরিহেমেত নামের সেই চিকিৎসককে অন্য আরেক উইঘুর মুসলিমের চিকিৎসা করার ‘অপরাধে’ বন্দী করা হয়েছিলো। কারণ তুদাহুন যার চিকিৎসা করেছিলেন, তিনি ছিলেন দখলদার প্রশাসনের দৃষ্টিতে একজন ‘সন্দেহভাজন অপরাধী’।
তুদাহুন নুরিহেমেত ছিলেন পূর্ব তুর্কীস্তানের আকসু বিভাগের উচতুর্পণ শহরে অবস্থিত আচাতাঘ হাসপাতালের প্রাক্তন প্রধান।
২০১৩ সালে আকসুর আইকোল শহরে সংঘর্ষের সময় এক উইঘুর গুলিবিদ্ধ হন। তুদাহুন একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করেন এবং সেই উইঘুর মুসলিমের চিকিৎসা করেন। আর শুধুমাত্র এই অজুহাতে তুদাহুনকে বন্দী করে আট বছরের কারাদণ্ড দেয় দখলদার চাইনিজ প্রশাসন।
আকসুর আইকোল শহরে সেদিন যা হয়েছিলো:
রমাদানের শেষ দিকে সেদিন একটি মসজিদের ‘নিরাপত্তা পরীক্ষার’ নামে মুসলিমদের হয়রানি করতে আসে দখলদারদের পুলিশ বাহিনী। সেসময় উইঘুর মুসলিমদের সাথে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এবং এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের সময় সন্ত্রাসী পুলিশ নিরস্ত্র ও নিরীহ মুসলিমদের উপর গুলি চালায়। এতে তিনজন উইঘুর তাদের প্রাণ হারায়। এছাড়াও আহত হয় ২০ জন উইঘুর। আহতদের পরবর্তীতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেই আহতদেরই একজনের চিকিৎসা করেছিলেন তুদাহুন। আপাতদৃষ্টিতে তিনি একজন আহতের চিকিৎসা করেছিলেন, একজন ডাক্তার হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু এটিই তার ‘অপরাধ’ হয়ে দাঁড়ায়। শুধুমাত্র একারণেই পরে তাকে আট বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে বর্বর চাইনিজ প্রশাসন।
কারাগারে কিডনি রোগ:
“নুরক্সিনিম উইঘুর” নামের এক ব্যক্তির ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানা যায়, তুদাহুনকে তার স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে তার পরিবারের কাছে ছাড়া হয়। এরপর গত ১৮ই সেপ্টেম্বর কিডনির জটিলতার কারণে তিনি মারা যান। নুরক্সিনিম উইঘুর মূলত পূর্ব তুর্কীস্তানে মৃত উইঘুরদের তথ্য ফেইসবুকে পোস্ট করেন।
আচাতাঘ শহরের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, তুদাহুন উরুমকির ৬ নম্বর কারাগারে সাজা ভোগ করেছেন। তবে তুদাহুনের মৃত্যুর ব্যপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।
আচাতাঘের একটি গ্রামের পুলিশ সদস্য জানায়, দুই সন্তানের পিতা তুদাহুন মাত্র এক বছর আগেই মুক্তি পান। তার কিডনিতে মারাত্মক সমস্যা ছিল এবং তিনি ঠিকমতো হাঁটতেও পারতেন না। অথচ বন্দী হবার আগে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। কারাগারে বন্দী থাকার সময়ই তিনি রহস্যজনকভাবে কিডনির রোগে আক্রান্ত হন এবং এ কারণেই তিনি মারা যান।
সেই গ্রামেরই আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, ঈদের তৃতীয় দিনই তুদাহুনকে বন্দী করা হয়। বন্দীর সময় তার উপর ‘সন্ত্রাসীদের সহায়তা করার’ অভিযোগও আনা হয়।
তুদাহুন ছিলেন একজন দক্ষ চিকিৎসক। এমনকি অন্যান্য গ্রাম ও শহরেও ছিলো তার ব্যাপক পরিচিতি। আর এমনই একজন চিকিৎসককে বিনা কারণে আট বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে দখলদার চাইনিজ প্রশাসন। আর কারাগারে বিভিন্ন অজানা কারণে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয় দুই সন্তানের বাবা তুদাহুন নুরিহেমেতের।
লেখক : ওবায়দুল ইসলাম
তথ্যসূত্র:
1. Uyghur doctor jailed for treating a ‘terrorist’ dies after release from prison
– https://tinyurl.com/5cnphkrj