আফগানিস্তানে মুসলিম শিশুহত্যার সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি এবং পশ্চিমা মিডিয়ার ‘ক্ষতিপূরণ’ স্তুতিপাঠ

    1
    964

    আফগানিস্তানে ব্রিটিশ বাহিনীর আগ্রাসনে নিহত ৬৪ জন শিশুর জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। সাম্প্রতিক এমন খবর ফলাও করে প্রচার করছে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো।

    ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসিতে বলা হচ্ছে, নিহত শিশুর এই সংখ্যা ব্রিটিশ বাহিনীর প্রকাশিত আগের শিশুর সংখ্যার চেয়ে চারগুন বেশি। অর্থাৎ ব্রিটিশ বাহিনী দীর্ঘ বিশ বছরের আগ্রাসনে মাত্র ১৬ শিশুকে হত্যা করার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করলো। বলা হয়, ২০০৬-২০১৪ সালের মধ্যে ব্রিটিশ বাহিনীর অভিযানে এসব শিশু নিহত হয়েছিল।

    ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্স (এওএভি) তথ্যের স্বাধীনতার অনুরোধ জানানোর পর শিশুদের এই সংখ্যা এনে বলা হয় যে, খুন হওয়া ৬৮ শিশুর পরিবারকে গড়ে ১,৬৫৬ পাউন্ড করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হামলায় নিহত আফগান শিশুর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি ১৩৫ জন পর্যন্তও হতে পারে।

    সংস্থাটি ৮৮১ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হলেও ব্রিটিশ সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে মাত্র এক-চতুর্থাংশের জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।

    অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এখানে ঐসকল শিশুদের হিসেবে ধরা হয়েছে, যেসব শিশুর পরিবার তালিবানের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক নেই, বরং তাদের অনেকেই পশ্চিমাদের স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো। পরবর্তীতে এসব এজেন্টারাই ব্রিটিশদের কাছে অভিযোগ করে যে, আমাদের শিশুরা আপনাদের হামলায় নিহত হয়েছে। আর এসব পরিবারের মাত্র এক-চতুর্থাংশ ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। আর এই ঘটনাকে আফগানিস্তানে ব্রিটিশদের হামলায় হতাহতের পরিসংখ্যান বলে চালিয়ে দিচ্ছে দালাল মিডিয়া।

    ব্রিটিশ সন্ত্রাসীরা ১৮৩৮ সালে আফগানিস্তানে নিজেদের সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠায় আগ্রাসন চালায়, এবং ১৮৪২ সালে পরাজিত হয়। এরপর ১৮৭৮ সালে দেশটিতে ফের আগ্রাসন চালায় ব্রিটিশ বাহিনী কিন্তু তখনও মাত্র ২ বছরের মাথায় ১৮৮০ সালে চরম পরিণতি হয় কুখ্যাত সন্ত্রাসী বাহিনীর।

    এরপর যখন বিশ্ব সন্ত্রাসী আমেরিকা ২০০১ সালে আফগানে ক্রুসেড যুদ্ধের ঘোষণা দেয়, তখন ব্রিটিশরা আবারো ক্রুসেডের অংশ হিসেবে আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়। সন্ত্রাসী অ্যামেরিকা, ব্রিটেন ও ক্রুসেডার ন্যাটো জোট এবং তাদের গোলাম সৈন্যরা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চলা আগ্রাসনে হাজার হাজার নিরীহ বেসামরিক মুসলিমকে হত্যা করেছে, লাখ লাখ মানুষকে উদ্বাস্তু করেছে; প্রতিদিন হামলার শিকার হয়ে হতাহত হয়েছে গড়ে ৫ জন শিশু।

    আর এই কথিত বিশ্ব-সম্প্রদায় বা পশ্চিমারাী এখন আবার ‘নারী ও শিশু অধিকার রক্ষা’ করার দোহাই দিয়ে আফগানিস্তানের নতুন তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। যদিও তালিবান ইসলামি শরিয়াহ্‌র আলোকে নারী ও শিশু সহ সকল আফগান নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করেছে।

    শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইউনিসেফ জাতিসংঘের বরাতে জানায় যে, ২০০৫-২০২১ পর্যন্ত ২৮,৫০০ আফগান শিশুকে খুন করেছে ন্যাটো জোট। ইউনিসেফ ২০০১-২০০৪ সাল পর্যন্ত হতাহত শিশুর সংখ্যা প্রকাশ করেনি। অথচ প্রথম চার বছর সবচেয়ে বেশি শিশু নিহত হয়েছিল। জাতিসংঘের করা রিপোর্টেই যদি ২৮,৫০০ শিশুর কথা উল্লেখ্য থাকে তাহলে বাস্তবতা কত ভয়াবহ তা সবার কাছেই স্পষ্ট।

    মূলত আফগানিস্তানে ক্রুসেডার ব্রিটিশ বাহিনীর অপরাধের ফিরিস্তি বিশাল হওয়া সত্বেও দালাল মিডিয়া অপপ্রচার চালিয়ে বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানাতে চাচ্ছে।

    মহান আল্লাহ তা’য়ালার ইচ্ছায় ১৫ আগস্ট, ২০২১ সালে আফগানে ক্রুসেডার জোটের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটে। আর এরপর থেকেই তারা ব্যস্ত রয়েছে নিজেদের অপরাধ গোপন করার কূটকৌশলে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকতেই এখন তারা এই মিডিয়া-নাটকের মঞ্চায়ন করছে; মূল নিহতের সংখ্যা কম করে দেখিয়ে বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দিতে চাইছে। তাছাড়া, ধোঁকাবাজ ব্রিটিশরা এটাও বুঝাতে চাইছে যে, ব্রিটিশ সেনারা কোন অপরাধ করলে তাদের নিজের দেশেই তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার লোক আছে!


    আফগানিস্তানে ক্রুসেডার ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর আগ্রাসন গোপন করতে দালাল মিডিয়ার কার্যক্রম জানতে পড়ুন, “আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সেনাদের গোপন গণহত্যার রিপোর্ট প্রকাশ : বিবিসি’র কেন এতো দায়!”
    https://alfirdaws.org/2021/11/17/54084/



    লিখেছেন :  ইউসুফ আল-হাসান



    তথ্যসূত্র:
    1. At least 64 children killed in UK military Afghan operations
    https://tinyurl.com/233jhttd
    2. UK army killed 64 children in Afghanistan between 2006-14: Report
    https://tinyurl.com/bdkcska
    3. Over 28,000 children killed in Afghanistan since 2005 – UNICEF
    https://tinyurl.com/28hsps93

    ১টি মন্তব্য

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধশুধু সন্দেহের বশে বাচ্চাসহ মুসলিম মহিলাকে ১৬ মাসের জেল
    পরবর্তী নিবন্ধপূর্ণ শরিয়াহ্ আইন জারি করলেন ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের সুপ্রিম লিডার আখুন্দজাদা (হাফি.)