যুক্তরাজ্যে হাসিনা-ঘনিষ্ঠদের ৬ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান

0
66

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীরা সম্পত্তি কেনার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা) খরচ করেছে। এমনটিই দাবি করেছে দেশটির গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। শনিবার (৩০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে গণমাধ্যমটি এ তথ্য জানায়।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট বিমানবাহিনীর সি-১৩০ জুলিয়েট বিমানে করে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে হাজারো মরদেহ আর আহতদের ওপর ভর করে বাংলাদেশ এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর হাসিনা সরকারের নানা দুর্নীতি, লুটপাটের তথ্যগুলোর দলিল দস্তাবেজ সামনে আসতে থাকে।

গার্ডিয়ান জানায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি প্রভাবশালী পরিবার অবৈধভাবে কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড অর্জন করেছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে নেয়া অপরিশোধিত বিশাল ঋণও রয়েছে। আর্থিক অপরাধ তদন্তের সঙ্গে জড়িতদের ধারণা দক্ষিণ এশিয়ায় বহুল প্রচলিত অর্থ স্থানান্তরের হুন্ডি পদ্ধতি ব্যবহার করে এ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে।

তদন্তকারীদের মতে সে অর্থের কিছু অংশ অবৈধ অর্থে সম্পদ কেনার পরিচিত গন্তব্য যুক্তরাজ্যে পাঠনো হয়েছে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নামে প্রায় ৩৫০টি সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে সুবিশাল অট্টালিকা (ম্যানশন) পর্যন্ত রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও দেশটির বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (অফশোর কোম্পানি) নামে এই সম্পত্তির বেশিরভাগ কেনা হয়েছে।

অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা ওই সম্পত্তির অনেকগুলোর মালিকানায় রয়েছে শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরও অনেক সম্পত্তির মালিকানা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সালমানের পরিবারের সদস্যদের লন্ডনের মেফেয়ার এলাকার গ্রোসভেনর স্কয়ারে সাতটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা বা মালিকানায় অংশীদারত্ব রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা। এর মধ্যে ২০২২ সালের মার্চ মাসে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন সালমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান। সেখানে ৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ডে কেনা তার একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে।

এ ছাড়া গ্রোসভেনর স্কয়ারে এবং এর কাছাকাছি এই পরিবারের আরেক সদস্য আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের আরও চারটি সম্পত্তি রয়েছে। এর মূল্য ২ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড। অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে এসব সম্পত্তি কেনা।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশটিতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের ৩০০টির বেশি সম্পদ রয়েছে। এগুলোর মূল্য অন্তত ১৬ কোটি পাউন্ড।

এর আগে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বৈশ্বিক সম্পত্তি নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে থাকা সম্পত্তির মূল্য আনুমানিক ৫০ কোটি মার্কিন ডলার।

রাজনীতিবিদদের বাইরে বাংলাদেশের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদেরও যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের সারে এলাকায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যদের দুটি সম্পত্তি রয়েছে। ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড দিয়ে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া এলাকাটি পরিদর্শনের সময় আহমেদ আকবর সোবহানের এক ছেলের মালিকানাধীন একটি অট্টালিকার সন্ধান পেয়েছে অবজারভার।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার পরিবারের সদস্যরা লন্ডনের কেনসিংটনে ৩ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ডের পাঁচটি সম্পত্তি কিনেছে।

এভাবে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন হর্তা-কর্তারা দেশের মানুষের সম্পদ লুট করে বিদেশে নিজেদের জন্য সেইফ হাউজ বানিয়েছে। দেশকে পঙ্গু করে দিয়ে তারা নিজেদের আখের গুছিয়েছে।


তথ্যসূত্র:
১. Money trail: questions over deposed Bangladeshi elite’s £400m UK property empire
– https://tinyurl.com/3hah6d9x
২. যুক্তরাজ্যে হাসিনা-ঘনিষ্ঠদের ৬ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান
– https://tinyurl.com/mph4hche

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন মুজাহিদিনরা
পরবর্তী নিবন্ধভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালালো উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা