বাঁওর থেকে এক কোটি টাকার মাছ লুট; মিলে- মিশে একেকার আওয়ামীলীগ- বিএনপির নেতারা

0
45

যশোরের চৌগাছা উপজেলার বল্লভপুর বাঁওড় জলমহালটির ইজারাদার বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ইজারা নিয়ে বাঁওড়টি চাষ করছে সমিতির সদস্যরা। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বাঁওড়র নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে টানা চার মাস ধরে বাঁওড়ের মাছ লুট করে আসছে চক্রটি। তারা প্রায় এক কোটি টাকার মাছ লুট করেছেন।

গত ১২ ডিসেম্বর সমিতির সদস্যরা মাছ ধরতে বাঁওড়ে নামলেও স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের বাঁধায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী হিন্দুপাড়ায় মহড়া দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি, মাছ ধরার জাল ও নৌকা কেড়ে নেওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সমিতির সদস্যরা।

স্থানীয়রা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, চৌগাছা উপজেলার বল্লভপুর বাঁওড়টি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ছয় বছর মেয়াদে ইজারা নিয়ে চাষ করছেন বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা। কিন্তু গ্রামের একটি চক্র জোর করে বাঁওড়টি দখলের পাঁয়তারা করছে। স্থানীয় সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জিন্নাত আলী, আওয়ামী লীগ নেতা আইজেল হক, মিজানুর রহমান ও তার সহযোগীরা গত জুন মাস থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার ছত্রচ্ছায়ায় বাঁওড়টি দখলের চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ওই চক্রটি বিএনপির নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় রাতারাতি বিএনপির কর্মী বনে যায়।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জিন্নাত আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান আসাদ স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক হওয়ায় তার দাপট দেখাতে শুরু করে জিন্নাত আলী, আইজেল হক ও মিজানুর রহমান গংরা। জিন্নাত আলী আওয়ামী লীগের নেতা হলেও তার আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই সম্পর্ক ব্যবহার করে রাতারাতি বেপরোয়া হয়ে ওঠে জিন্নাত আলী ও তার সহযোগীরা। তাদের নেতৃত্বে ৬ আগস্ট থেকে বল্লভপুর বাঁওড়ের মাছ লুট শুরু হয়। যা এখনো চলছে। চার মাস ধরে বাঁওড়ের মাছ লুট করায় সমিতির সদস্যদের প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গণমাধ্যমের বরাতে আরও জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সম্মতি ও প্রশাসনকে অবহিত করে গত ১২ ডিসেম্বর বাঁওড়ের মাছ শিকারের সিদ্ধান্ত নেয় সমিতির সদস্যরা। কিন্তু ওইদিন সকালে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আসাদের অনুসারী ও আত্মীয় বিএনপির কর্মী রুস্তম আলী, মশিয়ার রহমান, হুজুর আলী, সেলিম, মনিরুজ্জামানসহ ১৫-২০ জন সমিতির সদস্যদের মাছ ধরতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে নৌকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। ওইদিন পুলিশের হস্তক্ষেপে পরে তারা নৌকা ফেরত দেয়। পরে রাতের আঁধারে তালা ভেঙে চারটি নৌকা নিয়ে যায় জিন্নাত আলী ও আইজেল হকের ক্যাডার বাহিনী।

বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, গত ১৪ ডিসেম্বর সকালে বল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা আইজেল হক, সাহাঙ্গীর, সাবদার, মনিরুল, আসাদুল, আলম বিশ্বাস, সুজন, তবি, রশিদ, হাসান, সাদুল্লা, জাহাঙ্গীর, সুকুর মল্লিক, গহর মল্লিক, শহর মল্লিকসহ ২৫-৩০ জন জোর করে বাঁওড়ে মাছ ধরতে নামেন। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আইজেল হককে আটক করলেও মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এসময় সমিতির তিনটি নৌকা পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন সমিতির সদস্যরা বাঁওড়ে মাছ ধরতে নামলে আইজেল হক, জিন্নাত আলীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হিন্দুপাড়ায় মহড়া দেয়। এসময় তারা বাড়িতে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। একপর্যায়ে বাঁওড়ে নেমে সদস্য ও শ্রমিকদের জিম্মি করে জাল ও একটি নৌকা কেড়ে নিয়ে যান তারা।

তারা আরও জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালেও তেমন কোনা পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ১৭ ডিসেম্বর পুলিশের হস্তক্ষেপে ছিনতাই হওয়া জাল ও একটি নৌকা উদ্ধার করে সমিতির সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে এখনো সমিতির সদস্যদের বাঁওড়ে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তারা।


তথ্যসূত্র:
১. বাঁওড়ের মাছ লুট করতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একাট্টা
– https://tinyurl.com/24duc82w

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্কুলগামী ছাত্রীদের ইভটিজিং করায় জঙ্গি ছাত্রলীগ নেতাকে গাছের সঙ্গে বাঁধলো স্থানীয়রা
পরবর্তী নিবন্ধগাজায় সন্ত্রাসী ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত