বুড়িগঙ্গার তীর দখল করে চাঁদাবাজি

0
66

নদীর দুই তীরে রাস্তার পাশে অস্থায়ী অসংখ্য দোকান। প্রতিটি দোকানেই বাহারি জাতের ফল, পান-সুপারি, শাক-সবজির পসরা সাজানো। এ চিত্র রাজধানীর সদরঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরের। এছাড়া অবৈধ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বুড়িগঙ্গা নদী পারাপার ও নৌকা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে লঞ্চে যাত্রী তোলার মাধ্যমে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এভাবে বুড়িগঙ্গা তীরের রাস্তা দখল করে নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনা করছে বিআইডব্লিউটিএর কিছু কর্মকর্তা। এ কারণে পথচারী এবং যানবাহন চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে এবং নৌ-পারাপারে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা ও নৌ পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো থেকে প্রতিদিন ৩০০ করে টাকা তুলে নূর হোসেন, বেগুন আলী ও ফারুক নামে তিন ব্যক্তি। শ্রমিকলীগ নেতা হিসাবে তারা পরিচিত এবং বুড়িগঙ্গার মাফিয়া হিসাবে খ্যাতি রয়েছে তাদের।

বুড়িগঙ্গার দুই তীরে ভাসমান দোকানিদের প্রত্যেকেই বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের টাকা দেওয়ার কারণে দোকানের জায়গা বৈধ বলে মনে করে। যে বৈধতার অনুমোদন দেয় বিআইডব্লিউটিএ নদীবন্দর সদরঘাটের সমন্বয় কর্মকর্তা মনির। যার নেতৃত্বে দীর্ঘ ১২ বছর চাঁদাবাজি কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। মাসখানেক আগে তার অপকর্ম প্রকাশ হলে সে বদলি হয়ে নতুন দায়িত্ব নেয় ফরিদ।

আস্থাভাজন ফরিদ রয়ে গেছে মনিরের প্রতিনিধি হিসাবে। অভিযোগ আছে মনিরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে আগের নিয়মেই টাকা তুলছে ফরিদ। তিন ব্যক্তি নদীর দুই তীরের দোকানগুলো থেকে দৈনিক এবং সাপ্তাহিক ভিত্তিতে চাঁদা তুলে বলে জানান ভাসমান দোকানিরা। তারা হলো- লাঠি মনির, ডাকোয়া এবং পোর্টার সুমন। কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গার তীরে আছে ৮০টির মতো দোকান এবং সদরঘাটের দিকে শ্যামবাজার থেকে শুরু করে চাঁদপুর ঘাট পর্যন্ত ৩০০টির মতো দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে ন্যূনতম ৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত দৈনিক চাঁদা তোলা হয়।

শুধু তাই নয়, ঢাকা নৌ বন্দরের ৪৭টা খেয়াঘাটের ইজারা কার্যক্রমও নিয়ন্ত্রণ করে চক্রটি। প্রতিটি ঘাট থেকে মাসিক চার্জের নামে ৫০০০ টাকা করে প্রায় আড়াই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করার প্রতিবেদনও রয়েছে মনিরের নামে। এমনকি দুই তীরে বিভিন্ন কোম্পানিকে কিংবা ব্যক্তিকে মৌখিক চুক্তিতে স্পট অনুযায়ী মাসে ৩০, ৪০ ও ৫০ হাজার টাকা করে জমি ভাড়া দিয়েছে চক্রটি। সদরঘাটের একাধিক টং দোকানি জানান, বিআইডব্লিউটিএর লোকেরা প্রতি মাসে এক হাজার ২০০ টাকা আর ঘাট ইজারা মালিককে তিন হাজার টাকা দিতে হয়। না হলে দোকান ভেঙে ফেলে।

চাঁদপুর ঘাটে অস্থায়ী পান-সুপারির দোকানদার রনি বলেন, প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিনই দিতে হয়। ফল বিক্রেতা মাইনুদ্দিন শিকদার বলেন, প্রতিদিন ২০০ টাকা করে দোকান ভাড়া দিতে হয়। পিঁয়াজ আড়তদার নাসির বলেন, সরকারি জায়গায় বসার জন্য প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে জমা দিতে হয়।

সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা বলে, নৌকা দিয়ে লঞ্চে যাত্রী উঠানো এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকার বেপরোয়া চলাচলের ব্যাপারে আমি অবগত। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারি না।


তথ্যসূত্র:
১. বুড়িগঙ্গার তীর দখল করে চাঁদাবাজি
– https://tinyurl.com/yck79za6

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিলেট সীমান্ত থেকে ১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
পরবর্তী নিবন্ধইসরায়েলে আবারো অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা জার্মানির