হত্যা মামলা থেকে আনিসুল, সালমান ও জিয়াউল আহসানকে অব্যাহতির চেষ্টা

0
111

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যার দুটি মামলায় সাবেক আওয়ামী স্বৈরাচার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিল পুলিশের এক তদন্ত কর্মকর্তা। অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বহু গুম-খুনের মাস্টারমাইন্ড জিয়াউল আহসানকেও। তবে আদালতে ওঠার আগেই বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। আবার তদন্ত করা হচ্ছে।

নথিপত্র ও পুলিশ সূত্র বলছে, তদন্ত কর্মকর্তা তার ডিবির পরিচয় গোপন করে থানা–পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি আদালতে জমার চেষ্টা করেছিল। সে এ ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নেয়নি। বিষয়টি জানাজানির পর সে অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে চলে গেছে।

আনিসুল হক ও সালমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল সবুজ মিয়া ও মো. শাহ-জাহান মিয়া হত্যা মামলায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় সবুজকে মারধর করে ও শাহ-জাহানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরের দিন নিউমার্কেট থানায় মামলা হয়। সবুজের চাচাতো ভাই মো. নুরনবী ও শাহ-জাহানের মা আয়শা বেগম মামলার বাদী হন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৩ আগস্ট আনিসুল ও সালমানকে আটক করে এই দুই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ১৬ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া মেজর জেনারেল জিয়াকে।

মামলা দুটির তদন্ত করছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) রমনার পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আরিফ। সে গত ২৩ অক্টোবর দুই মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করে। নথিতে দেখা যায়, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নিজেকে সে নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক পরিচয় দিয়েছে। যদিও সে কর্মরত ডিবিতে।

মামলা দুটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার চেষ্টার আগে তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরিফ সাক্ষ্য–স্মারকলিপিতে (মেমো অব এভিডেন্স বা এমই) ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সই নেয়নি। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ডিবি থেকে কোনো মামলায় অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য–স্মারকলিপিতে তদন্ত–তদারক কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার, অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রশাসন), উপকমিশনার এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কমিশনার ও ক্ষেত্রবিশেষ কমিশনারের সই লাগে। জাহাঙ্গীর আরিফ কর্মকর্তাদের সই নেওয়া এড়াতে নিজেকে নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক বলে উল্লেখ করেছে।

দুটি হত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া এবং আনিসুল ও সালমানকে অব্যাহতির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে অসুস্থতা দেখিয়ে ছুটিতে রয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরিফ।

ডিবি সূত্র বলছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর আরিফ দাবি করেছে, সে অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিনের (এখন এপিবিএনে কর্মরত) নির্দেশে কাজটি করেছে।

বিষয়টি নিয়ে এডিসি সানজিদা বলে, সে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। এ রকম আলোচিত মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সিদ্ধান্তের এখতিয়ার তার নেই।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বারডেম হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানায় আটকে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত) দুই কেন্দ্রীয় নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতাকে ব্যাপক মারধরের ঘটনায় আলোচনায় এসেছিল এডিসি সানজিদা। ডিএমপি ও ডিবি সূত্র জানায়, মামলা থেকে আনিসুল ও সালমানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া চেষ্টার ঘটনায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী এডিসি সানজিদার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। সানজিদা ব্যাখ্যা দিয়েছে। সেই ব্যাখ্যা ডিএমপির কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি।


তথ্যসূত্র:
১. আনিসুল, সালমান ও জিয়াকে অব্যাহতির চেষ্টা, তদন্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার
– https://tinyurl.com/346x2n22

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশে ২২টি সেচ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন
পরবর্তী নিবন্ধইসলামি আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই আমেরিকার বিরুদ্ধে ২০ বছর যুদ্ধ করেছি: আফগান উপ প্রধানমন্ত্রী