প্রকাশ্যে ‘লাল সন্ত্রাসের’ ঘোষণা দিয়েছে উগ্ৰবাদী বামপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মেঘমল্লার বসু।
শুক্রবার রাত (১৭ জানুয়ারি) তার ফেসবুক ওয়ালে ইংরেজিতে করা এক পোস্টে এই ঘোষণা দেয় মেঘমল্লার।
ফেসবুকে করা ওই পোস্টে মেঘমল্লার লেখে, এখন মুক্তির একমাত্র পথ হলো লাল সন্ত্রাস। কথিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষামূলক সহিংসতা ( লাল সন্ত্রাস) বিকল্প নেই।
সে তার দলের লোকদের রক্ষার নামে সন্ত্রাসের উস্কানি দিয়ে বলে, মিছিল মিটিং পালন করে (যা কখনো সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে না) তুমি তোমাদের কমরেডদের রক্ষা করতে পারবে না। কারো আরও একটি লিবারেল দলের প্রয়োজন নেই।
তার ফেসবুক পোস্টের এক পর্যায়ে সে ডানপন্থীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সে দাবি করে, ডানপন্থীরা কখনো (পাহাড়ীদের) অধিকার নিয়ে কথা বলে না। সে আরও দাবি করে, কেবল তারাই পাহাড়ীদের অধিকার নিয়ে কথা বলে।
তার করা পোস্টের শেষ পর্যায়ে সে জঙ্গীবাদের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলে, ‘প্রকাশ্যে মিছিল বন্ধ করো, কমিটি পোস্টিং বন্ধ করো। যদি আমরা সতর্ক না হই তাহলে আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো। মিমস বানিয়ে ও ট্রল করে এ থেকে বের হতে পারবে না।’
শেষে গোপন হত্যার ইঙ্গিত দিয়ে সে বলে, ‘যা করার আন্ডারগ্ৰাউন্ডে করো কমরেড। অপেক্ষা করো। এর বেশী প্রকাশ্যে বলার নেই।’
এমন এক সময় সে এই সন্ত্রাসবাদী গুপ্ত হত্যার ঘোষণা দিল যখন পতিত স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
অনেকেই বলছেন, ভারত সরাসরি আওয়ামীলীগের পর তাদের ‘বি-টিম’ হিসেবে বামপন্থী ও পাহাড়ীদের মাঠে নামিয়েছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।
মেঘমল্লার বসুর লাল সন্ত্রাসের ডাক দেয়ার পরপরই প্রতিবাদ মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাত ১২:১৫ মিনিটে আয়োজিত ওই মিছিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেঘমল্লারের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
ওই বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘লাল সন্ত্রাসের আস্তানা এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘ উদ্যানের গাজাখোর; উদ্যানে ফিরে যা’, ‘মেঘমল্লার তুই জঙ্গি’, ‘ শাহাবাগী তুই গোসল কর’, ‘জঙ্গী বসুর ঠিকানা; এই ক্যাম্পাসে হবে না।’ স্লোগান দিতে থাকেন।
স্লোগান শেষে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ভাষণ দেন আয়োজকরা। এসময় বক্তব্যে এক বক্তা বলেন, ‘ ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী ছাত্রলীগ থাকা অবস্থায় প্রতিটি ছাত্র সংগঠনের উপর হামলা চালালেও তারা কখনও ছাত্র ইউনিয়নের উপর হামলা চালায়নি। কেননা ছাত্র ইউনিয়ন তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে।’
প্রকাশ্যে সন্ত্রাসের ঘোষণা দেওয়ায় মেঘমল্লারকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্ৰেফতার করা আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে লাল সন্ত্রাসের সূচনাকারী সিরাজ শিকদার গ্ৰাফিতি মুছে দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেঘমল্লারের ডাকের প্রতিবাদ জানাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
অনেকেই বলছেন, যদি কোনও দাড়ি-টুপি পরিহিত কেউ এই ঘোষণা দিত তাহলে তাদের এতক্ষণে গ্ৰেফতার করা হতো। অতি দ্রুত মেঘমল্লার সহ তার সাথে জড়িতদের গ্ৰেফতারের দাবি করেছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, লাল সন্ত্রাস বা রেড টেরর হলো সোভিয়েত রাশিয়ায় বলশেভিকদের মাধ্যমে পরিচালিত রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং মৃত্যুদণ্ডের একটি প্রচারণা। যা প্রধানত চেকা নামক বলশেভিক গোপন পুলিশের মাধ্যমে করা হতো। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে শুরু হয়েছিল এবং ১৯২২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। ভ্লাদিমির লেনিনের হত্যা চেষ্টা এবং পেট্রোগ্রাদ চেকা নেতা মোইসেই ইউরিতস্কি ও পার্টি সম্পাদক ভি. ভলোদারস্কির সফল হত্যাকাণ্ডের পর, যা বলশেভিক গণপ্রতিহিংসার জন্য প্রতিশোধমূলক বলে অভিযোগ করা হয়। লাল সন্ত্রাস ফরাসি বিপ্লবের ত্রাসের শাসনের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে এবং এর লক্ষ্য ছিল বলশেভিক শক্তির বিপক্ষে রাজনৈতিক বিরোধিতা, প্রতিপক্ষ এবং অন্য যেকোনো ধরনের হুমকি নির্মূল করা।
তথ্যসূত্র:
১.https://tinyurl.com/4tbps6v5