দিল্লিতে ‘জিন্স জিহাদ’-এর অভিযোগ তুলে মুসলিম দর্জিদের ব্যবসা বন্ধ করল প্রশাসন

0
74

সম্প্রতি ভারতের রাজধানী দিল্লির খ্যালা এলাকায় ‘জিন্স জিহাদ’-এর অভিযোগ তুলে মুসলিম দর্জিদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লির শিল্পমন্ত্রী ও স্থানীয় বিজেপি নেতা মনজিন্দর সিংহ সিরসা।

গত ৩০ জুলাই ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে খ্যালা ও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছিল একটি জমজমাট জিন্স প্রস্তুত শিল্প। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হাজার হাজার মুসলিম দর্জি এখানে কাজ করতেন। এই শিল্পে হিন্দু ও শিখ ব্যবসায়ীরাও যুক্ত ছিলেন। ২০২১ সালে সরকারিভাবে খ্যালাকে একটি শিল্পাঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতিও দেওয়া হয়।

কিন্তু ২০২৫ সালের মাঝামাঝি থেকে মন্ত্রী সিরসা দাবি করতে শুরু করে যে, এই শিল্পে ‘বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী’ কাজ করছে এবং মুসলিমরা পরিকল্পিতভাবে এলাকা থেকে হিন্দু ও শিখদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটিকে সে ‘জিন্স জিহাদ’ বলে উল্লেখ করেছে। তার এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে।

এরপর থেকেই খ্যালা ও আশপাশের এলাকায় ‘অবৈধ ব্যবসা’র নামে শুরু হয় দোকান বন্ধের অভিযান। অভিযানে বহু ছোট-বড় জিন্স কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে কয়েক হাজার দরিদ্র মুসলিম শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। অনেকেই বাধ্য হয়ে তাদের নিজ এলাকায় ফিরে গেছেন। কিছু ব্যবসায়ী ভয়ে নিজেরাই কারখানা গুটিয়ে ফেলেছেন।

এ ঘটনায় এই মন্ত্রী দাবি করেছে যে, সে এলাকার নিরাপত্তা ও নিয়ম শৃঙ্খলার স্বার্থেই কাজ করছে। স্থানীয় বহু বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী বলছেন, এটি একটি সাম্প্রদায়িক প্রচার, যার বাস্তব ভিত্তি নেই। স্থানীয় শিখ ও হিন্দু বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা মুসলিমদের সঙ্গে বহু বছর ধরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করছেন এবং কখনও কোনো সমস্যা হয়নি। একজন শিখ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই শিল্পের জন্যই এলাকার সম্পত্তির দাম বেড়েছে। এখানে কারও সঙ্গে আমাদের সমস্যা নেই।’

জিন্স প্রস্তুতকারক আবিদ খান নামে একজন জানিয়েছেন, আগে যেখানে ১৫,০০০-এর বেশি শ্রমিক কাজ করতেন, এখন সেখানে মাত্র কয়েকশ’ শ্রমিকও নেই। যারা রয়ে গেছেন, তাদের কাজ প্রায় প্রতিদিনই বন্ধ থাকে সরকারি পরিদর্শনের কারণে। বদায়ুঁনের দর্জি শানু খান বলেন, ‘এখানে আর কাজ নেই, ধাবাগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমাকে নয়ডা গিয়ে কাজ খুঁজতে হবে।’ আরেক দর্জি আমান পাঠান বলেন, ‘ওরা যা খুশি বলতে পারে, কারণ ওরাই তো ক্ষমতায়।’

স্থানীয় হিন্দু ব্যবসায়ী শ্রিকান্ত পোদওয়াল জানিয়েছেন, তিনি খ্যালা এলাকায় কখনও বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গা শ্রমিক দেখেননি। তিনি জানান, ‘সবাই উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা দরিদ্র মানুষ।’


তথ্যসূত্র:
1. ‘Jeans jihad’: How Delhi’s industries minister shut down a booming, Muslim-dominated garment hub
– https://tinyurl.com/3ycjuy3d

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধজমানো টাকা দিতে পারছে না ব্যাংক; চরম ভোগান্তিতে গ্রাহকরা
পরবর্তী নিবন্ধনওগাঁ ও পঞ্চগড় সীমান্তে নারী ও শিশুসহ ২৭ জনকে পুশইন করলো বিএসএফ