ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৩০ নভেম্বর। সম্মেলনের শেষে ঢাকার দুই নগরীর শীর্ষ চার নেতার নাম ঘোষণা করা হয়। সে সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্দেশনা দেন পরবর্তী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার। কিন্তু প্রায় তিন মাসের মতো বেধে দেওয়া তার সে সময় পেরিয়ে গেছে আরও ছয় মাস আগে। এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিটির সার্বিক কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে।
আসন্ন এ কমিটিতে যে কোনো মূল্যে ঠাঁই পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ক্যাসিনোকাণ্ড-সহ নানা অপকর্মে অভিযুক্ত বিতর্কিত নেতারা। নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তো বটেই, কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাদের কাছেও চলছে তাদের জোর লবিং। এমনকী বিগত দিনে আওয়ামী লীগ বা এর কোনো অঙ্গসহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না- এমন লোকও নগরের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে উঠেপড়ে লেগেছেন। আর এসব নিয়ে নগরের দুই শীর্ষনেতার মধ্যে স্নায়ুর লড়াই চলছে বলেও জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ক্যাসিনো কর্মকান্ড-, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অপকর্মের কারণে বিতর্কিত ছিলেন যেসব নেতা, তাদের অনেকেরই আনাগোনা বেড়ে গেছে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। জোর গুঞ্জন রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলটির গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি বাগিয়ে নিতে মোটা অঙ্কের টাকা ঢালতেও প্রস্তুত কেউ কেউ। তাদের এখন দেখা যাচ্ছে প্রভাবশালী নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে। নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে অভিযুক্ত ঢাকার দুই সিটির অন্তত চারজন কাউন্সিলর জোর লবিং শুরু করেছেন নতুন কমিটিতে ভালো পদ পেতে।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন যারা, তাদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী। তারা তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ নন; আগে কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত পর্যন্ত ছিলেন না। অথচ টাকার জোরে দলীয় পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। উত্তর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি পদে এমন ব্যবসায়ীদের দেখা যেতে পারে বলে ইতোমধ্যে খবর চাউর হয়েছে।
ঢাকার দুই অংশে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, আওয়ামী লীগের এমন দুই নেতা আমাদের সময়কে জানান, ক্যাসিনোকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল এমন ১২ নেতাকে মহানগরের কমিটিতে রাখার চেষ্টা চলছে। শুধু তাই নয়, চাঁদাবাজি ও পদবাণিজ্যের অভিযোগ থাকা ব্যক্তিরাও প্রভাব খাটিয়ে নগরের কমিটিতে ঠাঁই পেতে চান। এ দুই নেতার ভাষ্য, চূড়ান্ত কমিটিতে যদি বিতর্কিতরা আসেন- তা হলে সেটি হবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের বিপরীতে অবস্থান নেওয়ার শামিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা উপেক্ষা করেই চলছে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রস্তুতি। আমাদের সময়