“কর্মসূচিতে অনিয়মিত হওয়ায় দুই ঢাঃবিঃ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন ছাত্রলীগের”

ত্বহা আলী আদনান

2
1267
“কর্মসূচিতে অনিয়মিত হওয়ায় দুই ঢাঃবিঃ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন ছাত্রলীগের”

ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনিয়মিত হয়ে পড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে রাতভর মারধর ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগ কর্তৃক নির্যাতিত হওয়া শিক্ষার্থীরা হচ্ছে মাস্টারদা সূর্যসেন হলের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আরিফুল ইসলাম ও থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তরিকুল ইসলাম।

নির্যাতিত আরিফুল সাংবাদিকদের জানায়, “পড়ালেখা ও পরীক্ষার কারণে আমি এবং তরিকুল বেশ কিছুদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি ও গেস্ট রুমে অনিয়মিত হয়ে যাই। এ কারণে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। তারা আমাদের হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টাও করে কিন্তু আমাদের রুমটা প্রশাসনের মাধ্যমে বরাদ্দ হওয়ায় সেটি করতে তারা ব্যর্থ হয়।”

আরিফুল আরো বলে,”গত ৭ নভেম্বর, রবিবার রাতে আমি এবং আমার বন্ধু তরিকুল রুমে ঘুমাচ্ছিলাম। রাত আড়াইটার দিকে ছাত্রলীগ কর্মী সিফাত উল্লাহ এবং মাহমুদ অর্পণ আমাদের রুমে আসে। তারা আমাদের ৩৫১ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আরও চারজন উপস্থিত ছিলো।

তারা শুরুতে আমাদের বকাবকি করে। বকাবকির একপর্যায়ে উত্তেজিত সিফাত ও মাহমুদ আমাদের দিকে রড, স্টাম্প নিয়ে তেড়ে আসে। সেখানে উপস্থিত থাকা অন্যান্য ছাত্রলীগ কর্মীরা এসময় আমাদের দুইজনকে ধরে রাখার চেষ্টা করে। তারপর তারা রড ও স্ট্যাম্প ফেলে দিয়ে আমাদের কিল-ঘুষি মারতে থাকে।

একপর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মী সিফাত ও মাহমুদ আমাকে দেয়ালের সঙ্গে গলা চেপে ধরে। আমি অ্যাজমা রোগী হওয়ায়, আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ইনহেলার নিতে হবে জানালেও তারা আমাকে ছাড়েনি। আমি অসুস্থ হয়ে রুমেই শুয়ে পড়ি। এ সময় তারা আমাদের বাবা-মাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে।

রাত চারটার দিকে আমাদের ছেড়ে দেয়া হয়। যাওয়ার সময় তারা আমাদের ৮ নভেম্বর সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। হল ত্যাগ না করলে আমাদের হত্যা করে হলের পানির ট্যাংকের পেছনে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয় ছাত্রলীগ। ভয়ে আমরা রাতেই হল থেকে বের হয়ে যাই।”

রাতভর নির্যাতনের শিকার আরিফ জানায়, আমাদের যখন রুম থেকে ডেকে নেওয়া হয়, তখন আমি হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ইমরান সাগর ভাইকে ফোন দেই। সে বলে, ‘যাও, দেখো তারা কী বলে।’ নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ কর্মীরাও জানায়, তারা ইমরান ভাইকে জানিয়েই আমাদের রুমে এসেছে। সুতরাং, আমাদের মারধরের ব্যাপারে ইমরান সাগর ভাইয়ের নির্দেশ ছিল।

জানা যায়, নির্যাতনকারী দুই ছাত্রলীগকর্মীদের মধ্যে সিফাত উল্লাহ সিফাত উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের এবং মাহমুদুর রহমান অর্পণ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংলিশ ফর স্পিকার্স অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজেস বিভাগের ছাত্র।

উল্লেখ্য, এর আগেও সাধারণ ছাত্রদের উপর নির্যাতন করার কারণে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল এ দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে।

নির্যাতনকারী এই দুই দুষ্কৃতকারী হল ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং ক্যাম্পাসে হল ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ইমরান সাগরের ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত।

নির্যাতিত আরিফুল জানায়,”নির্যাতনের সময় ৩৫১ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগের উক্ত দুই কর্মীর সঙ্গে আরো চার লীগ কর্মী উপস্থিত ছিলো। তারা হলো, চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাকিল, রেজওয়ান, তাসকিন ও মারুফ। এদের মধ্যে শাকিল উর্দু বিভাগের আর রেজওয়ান ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের।”

তথ্যসূত্র:
=======
১। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় দুই শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন
https://bit.ly/3bV5qrG

2 মন্তব্যসমূহ

Leave a Reply to khaled123 প্রতিউত্তর বাতিল করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআল-ফিরদাউস নিউজ বুলেটিন || নভেম্বর ১ম সপ্তাহ, ২০২১ঈসায়ী
পরবর্তী নিবন্ধ“গণহত্যার প্রস্তুতি : সিসি ক্যামেরা ভেঙে মুসলিমদের উপর হামলা, ‘জয় শ্রী রাম’স্লোগান দিয়ে মুসলিম যুবকেকে নির্যাতন।”