দিল্লির একটি বস্তিতে গত ২ নভেম্বর রাতে মুসলিম বাসিন্দাদের উপর হামলা চালিয়েছে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ।
বস্তিবাসীরা জানিয়েছে, পুলিশ তাদের বাড়িতে পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের মারধর করে, বাংলাদেশী বলে গালাগাল করে। অবশেষে পুলিশি তাণ্ডবের প্রমাণ নষ্ট করতে এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে দেয়। অন্যান্য ভিডিও প্রমাণ নষ্ট করে দিয়েছে।
পুলিশ স্বীকার করেছে যে তারা সেই রাতে বস্তি থেকে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, কিন্তু বরাবরের মতই তারা অন্যায়, সহিংসতা ও নির্যাতনের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বস্তির বাসিন্দা সাবিনা খাতুন বলেছেন, পুলিশ বলেছে, এই দেশ ছেড়ে চলে যাও, তোমরা সবাই বাংলাদেশী, তোমাদের ওখানেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
বস্তির আরেক বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সী সামিরুল খান বলেছে, পুলিশ সে রাতে আমাকে আটক করে বলেছে, “তোমরা বাংলাদেশিরা, এখান থেকে চলে যাও। তোমরা এখানে পরগাছা”
হিংস্র পুলিশ গর্ভবতীসহ বেশ কয়েকজন মহিলাকেও লাঞ্ছিত করেছে।
লাঞ্ছিত হওয়া সেই গর্ভবতী মহিলা সাবিনা খাতুন বলেছেন “আমি তাদের অনুরোধ করছিলাম, “আমি গর্ভবতী, আমাকে মারবেন না।” কিন্তু তারপরও তারা আমাকে লাঠি দিয়ে মারধর করে। তিনি আরও বলেন, “পুলিশরা মাতাল ছিল। তারা আমাদের বাড়িতে ঢুকে আমার পেটে ও অন্যত্র মারধর করে। হামলায় আমার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।”
সাবিনা নামে আরেক নারী বলেন, “আমি যখন তাদের আমাদের গালাগালি না করতে বলেছিলাম, তখন তারা আমার পিঠে মারধর করে। এটা এখন ফুলে গেছে। আমি ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যাই। তারপর তারা ক্যামেরা ভেঙ্গে তাদের হামলার প্রমাণ নষ্ট করে দেয়।”
“আমরা কি অপরাধ করেছি যে দিল্লি পুলিশ আমাদের মহিলাদের এত নৃশংসভাবে মারধর করেছে? পুলিশের কর্মকাণ্ডের তদন্ত হওয়া উচিত – কে পুলিশকে আমাদের এভাবে মারধর করার ক্ষমতা দিয়েছে?”
বস্তির বাসিন্দা মিমি বিবি বলেন,পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয়রাও আমাদের আক্রমণ করেছে।
বাশারুলের স্ত্রী মিমি বিবি বলেন, ‘ওরা আমার স্বামীকে জুয়ায় জড়িত বলে অভিযোগ করে। পুলিশ যখন আমার স্বামীকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি আমাদের একটি ভিডিও রেকর্ড করতে বলেছিলেন। তারপর পুলিশ ফোনটি ভেঙে দেয়।”
বাশারুলের চাচাতো ভাই এবং বস্তির বাসিন্দা রাজেশ খান তার দৃশ্যমান ক্ষতিগ্রস্থ ফোনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “যখন তারা মহিলাদের মারধর করছিল, আমি তাদের নির্যাতনের ভিডিও করছিলাম। তারপর তারা আমার মোবাইল ফোন ভেঙ্গে ফেলে।
মিমি বিবি তার বাসভবনের উপরে রাখা সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “পুলিশরা এখানে এই সিসিটিভি ক্যামেরাটি ভেঙে দিয়েছে। তারা অন্যায়ভাবে হামলা করছিল, তাই তারা কোনো প্রমাণ রেখে যেতে চায়নি। তারা ডি.বি.আর(ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) নিয়ে গেছে। এটি আমাদের বাড়িতে লাগানো ছিল। যদি পুলিশের দোষ না থাকত, তাহলে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙল কেন?”
সামিরুল খান বলেন, “ওরা আমাদের দরজায় লাথি মারছিল। আমার বাবা বাড়িতে খাচ্ছিল, যখন ওরা ঢুকে ওকে তুলে নিয়ে গেল। ওরা আমার সামনেই ওকে মারধোর করে। ওরা আমাদের বাড়ি থেকে শুরু করে সারা রাস্তা মারছিল।
২রা নভেম্বর মধ্যবর্তী রাতের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ স্থানীয় কয়েকজনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
মুসলিম নির্যাতনের আরেক ঘটনা ঘটে মধ্যপ্রদেশে। হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস হিসাবে একটি দীপাবলির মিম দেওয়ার তুচ্ছ অভিযোগ এনে মুসলিম যুবকের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালিয়েছে একদল উগ্র হিন্দু সন্ত্রাসী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে প্রকাশিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, একদল উগ্র হিন্দু ‘জয় শ্রী রাম’স্লোগান দিতে দিতে মুসলিম যুবকের বাড়িতে যায়। সেখানে আত্মীয়স্বজনের সামনেই যুবকের উপর এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারতে থাকে।
তথ্যসূত্র:
======
১। বস্তিতে হামলার ভিডিও লিঙ্ক
https://dai.ly/x85c0h9
https://tinyurl.com/n5yh2934
২।’Police Assaulted Us, Broke CCTV Cams’: Residents of North West Delhi Slum
https://tinyurl.com/x96pfr45
৩। মুসলিম যুবককে মারধর
https://tinyurl.com/tbzvxcfp
https://tinyurl.com/ks2tt4ft