বিজয়ের মাস: মাহে রমাদানের গৌরবদীপ্ত বিজয়-সিরিজ।।পর্ব-৫।। ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়: আরব উপদ্বীপে পৌত্তলিকদের নাপাক আধিপত্যের অবসান।(প্রথম কিস্তি)

0
1190
বিজয়ের মাস: মাহে রমাদানের গৌরবদীপ্ত বিজয়-সিরিজ।।পর্ব-৫।। ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়: আরব উপদ্বীপে পৌত্তলিকদের নাপাক আধিপত্যের অবসান।(প্রথম কিস্তি)

প্রারম্ভিকা :

তৎকালীন আরব বিশ্বে কুফরের আখড়া ও নিরাপদ-মজবুত ঘাঁটি ছিল মক্কা নগরী। এখান থেকেই কুফর ও শিরকের বিস্তার হত সমগ্র আরবে। বাইতুল্লাহর অবস্থানকে কেন্দ্র করে আরবের মুশরিকদের নিকটেও মক্কা ছিল তীর্থভূমি বা পুণ্যস্থান।

মক্কার হর্তাকর্তারা সমগ্র আরবে আলাদা দাপট নিয়ে চলাফেরা করত। বাইতুল্লাহর দেখভাল-দায়িত্ব পরম্পরাগতভাবে তাদের উপর অর্পিত থাকায় আরবের লোকেরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তাদেরকে একটু বেশিই সমীহ করে চলত। আর তারাও এর যথাযথ ফায়েদা নিয়ে আশপাশের গোত্রগুলিতে কর্তৃত্বের ছড়ি ঘোরাত। এ কারণেই মক্কার আশপাশের গোত্রগুলো গোপনে গোপনে ইসলাম গ্রহণ করলেও বা ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করতে পারলেও, মক্কার কুরাইশদের ভয়ে তা প্রকাশ করতে পারত না। একারণে ইসলামের দাওয়াতকে ব্যাপক করার ক্ষেত্রে মক্কা ছিল সবচেয়ে বড় বাধা।

অষ্টম হিজরীর ২০-এ রমাদান মোতাবেক ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারী। দিনটি ছিল ইসলামী ইতিহাসে অত্যন্ত গৌরবময় দিন। এ দিনেই আল্লাহ তা’আলার অপার অনুগ্রহে কুফরের এই আখড়া পদানত হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাতে। বাইতুল্লাহকে পবিত্র করা হয় নাপাক মূর্তির অশুভ ছায়া থেকে। মুহাজির সাহাবায়ে কেরাম ফিরে পান নিজেদের হারানো মাতৃভূমি। শত শত বছর ধরে কুফরের নাপাক অধিকৃত থেকে মুক্ত হয় মুসলিমদের ঐক্যের নিদর্শন পবিত্র বাইতুল্লাহ।

এই বিজয়ের পর মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে। পরবর্তী বছর আরবের বিভিন্ন গোত্র থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে ইসলাম গ্রহণ করতে এত অধিক পরিমাণ “ওয়াফদ” আসে যে, ইতিহাসের পাতায় হিজরী নবম বছরকে ওয়াফদের বছর নামেই আখ্যায়িত করা হয়। সব মিলিয়ে মক্কা বিজয় ছিল ইসলামের ইতিহাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ এক বিজয়। বিজয়ের এই পবিত্র মাসে ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের চুম্বকাংশ তুলে ধরতে চাই পাঠকের সামনে, ইনশাআল্লাহ!


হুদাইবিয়ার যুগান্তকারী সন্ধি; তৈরী হলো মক্কা বিজয়ের প্রেক্ষাপট :

হিজরী ষষ্ঠ বছর শেষ হতে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। হঠাৎ একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্ন দেখলেন-“সাহাবীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করছেন। এরপর কেউ মাথা মুণ্ডিয়ে আর কেউ চুল খাটো করে হালাল হচ্ছেন।”

সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) নিজেদের অন্তরে বাইতুল্লাহর প্রতি যে অকৃত্রিম ভালোবাসা এতদিন পর্যন্ত চাপা দিয়ে রেখেছিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র যবান থেকে স্বপ্নের এই বিবরণ শোনার পর তা অদম্য গতিময়তায় তাদের সর্বসত্ত্বাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।  তাদের অন্তর ব্যকুল হয়ে ওঠে বাইতুল্লাহকে এক পলক দেখার জন্য। যে নগরীর রাস্তাঘাটে জড়িয়ে আছে তাদের ফেলে আসা দিনগুলির হাজারো স্মৃতি, দিনে পাঁচবার যে-ই নগরীর দিকে মুখ করে তারা সালাত আদায় করেন সেই নগরীর প্রতি অন্তরের এই ব্যকুলতা মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করে দিলেন যে, তিনি উমরাহ করতে মক্কা যাবেন। যারা তাঁর সাথে যেতে চায় তারা যেন দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এই ঘোষণা শোনার সাথে সাথে মদীনার অলিতে-গলিতে আনন্দের হিল্লোল বয়ে গেল। ষষ্ঠ হিজরীর পহেলা যিলক্বদ, রোজ সোমবার।

তিনি (সাঃ) প্রায় ১৪০০/১৫০০ সাহাবায়ে কেরামের এক মোবারক কাফেলা নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কুরাইশদের সাথে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা তাঁর নাই। তিনি কোনো ধরনের হানাহানি, মারামারিতে না গিয়ে নিরাপদে উমরাহ সেরে ফিরে আসতে চান। তাই যুদ্ধের কোনো প্রস্তুতি নিয়ে বের হন নি। শুধু পথের নিরাপত্তার জন্য নগন্য কিছু অস্ত্র ছাড়া ভারী কোনো অস্ত্রও সাথে নেন নি। যুল হুলাইফা নামক স্থানে পৌঁছে তিনি সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে উমরাহর ইহরাম বাঁধেন।

পথিমধ্যে সংবাদ পান, কুরাইশরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ দু’শ অশ্বারোহীর একটা বাহিনী খালিদ ইবনুল ওয়ালিদের [১] নেতৃত্বে গামীম [২] নামক স্থান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।

তথ্যগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য খুবই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি তো যুদ্ধ করার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে বের হন নি। কিন্তু মক্কাবাসী যুদ্ধের সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন করে ফেলেছে। তবুও তিনি সঙ্ঘাত এড়াতে রাস্তা পরিবর্তন করেন। চলাচলের মূল রাস্তা পরিহার করে অন্য রাস্তা ধরে চলতে থাকেন এবং হুদাইবিয়া [৩]  নামক স্থানে ছাউনি ফেলে অবস্থান নেন।

সেখান থেকেই হযরত উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দুটি’ বার্তা দিয়ে মক্কায় প্রেরণ করেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
১। আবু সুফিয়ানসহ মক্কার অন্য সর্দারদের নিকট পৌঁছে দাও যে, আমরা যুদ্ধ করতে আসিনি; শুধু উমরাহ করতে এসেছি।
২। মক্কার নিপিড়ীত মুসলিমদের এই সুসংবাদ শুনিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা’আলা খুব শীঘ্রই তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করবেন।

রাসূলের এই বার্তা পৌঁছে দিতে হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু মক্কায় প্রবেশ করেন এবং কুরাইশদের দ্বারা আটক হন। কিন্তু মুসলিমদের মাঝে এটা ছড়িয়ে পড়ে যে, মক্কাবাসী উসমানকে হত্যা করে ফেলেছে। এই সংবাদ শোনার সাথে সাথে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে মৃত্যুর বাইয়াত দেন। ইতিহাসে এই বাইয়াত “বাইয়াতুর রিদওয়ান” [৪] নামে প্রসিদ্ধ৷

কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় উসমানের মৃত্যুর খবর মূলত গুজব ছিল। বাইয়াতের এই খবর মক্কায় পৌঁছলে মক্কাবাসী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং দ্রুত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ছেড়ে দেয়। তিনি অক্ষত অবস্থায় মুসলিম তাবুতে ফিরে আসেন।


দশ বছরের যুদ্ধ বিরতি-চুক্তি :

উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ফিরে আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের ইচ্ছা পরিহার করে সন্ধির জন্য চেষ্টা শুরু করেন। একদিন খুযা’আহ গোত্রের সর্দার বুদাইল ইবনে ওরকা [৫] রাসূলের দরবারে এসে বলল, ‘আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হুদাইবিয়ার আশপাশে কুরাইশরা বিশাল সেনাদল একত্রিত করছে।’

তিনি (সাঃ) বললেন, “আমি তো তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসিনি। যুদ্ধ কুরাইশদের এমনিই অনেক দুর্বল করে দিয়েছে। আমি তো এসেছি শুধু উমরাহ করতে। তবে কুরাইশরা চাইলে আমি তাদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ বিরতির চুক্তি করতে পারি। এই সময়ের মধ্যে তারাও আমার সাথে যুদ্ধে জড়াবে না; আমিও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না। আমার ইসলাম প্রচারের কাজেও তারা কোনোরূপ বাধা সৃষ্টি করবে না; তাদের বাণিজ্যিক কাফেলার পথও আমি রোধ করব না।”

রাসূলের সন্ধির ইচ্ছা জানতে পেরে কুরাইশরাও সন্ধি করতে আগ্রহী হলো এবং মক্কা থেকে একের পর এক প্রতিনিধি দল আসতে থাকলো রাসূলের দরবারে। সবশেষে সুহাইল ইবনে আমরের মধ্যস্থতায় চারটি শর্তের উপর উভয় দল চুক্তিবদ্ধ হয়।

১। উভয় বাহিনীর মাঝে আগামী দশ বছর পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে কেউ কারো উপর আক্রমণ করবে না।

২।  কুরাইশদের কেউ মুসলমান হয়ে মদীনা চলে গেলে মুহাম্মাদ তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু মদীনা থেকে কেউ মক্কা চলে আসলে কুরাইশরা তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে না। [৬]

৩। মুহাম্মাদ এ বছর মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। আগামী বছর কাযা উমরাহ করতে শুধুমাত্র তিন দিনের জন্য মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে৷ কোনো হাতিয়ার সাথে আনতে পারবে না। শুধু তরবারি নিয়ে আসবে সেটাও থাকবে খাপবদ্ধ।

৪। মক্কা ও মদীনার আশপাশের গোত্রগুলির এই স্বাধীনতা থাকবে যে, তারা এই দুই পক্ষের যে কোনো পক্ষের চুক্তিভুক্ত হতে চাইলে হতে পারবে। এতে অপর পক্ষের কোনো আপত্তি থাকবে না। সেমতে বনু খুযা’আহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুক্তিভুক্ত আর বনু বকর কুরাইশদের চুক্তিভুক্ত হয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নেয়।

চুক্তিনামা লেখা শেষ হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানেই মাথা মুণ্ডিয়ে ও পশু কুরবানী করে হালাল হন এবং সাহাবীদেরকেও একই নির্দেশ দেন। এরপর তিনি ফিরে আসেন মদীনায়। পথিমধ্যে সূরা ফাতহ অবতীর্ণ হয়৷ উক্ত সূরার মধ্যে আল্লাহ তা’আলা হুদাইবিয়ার এই সন্ধিকে “ফাতহে মুবীন” বা স্পষ্ট বিজয় বলে অভিহিত করেছেন।


বনু বকর ও বনু খুযা’আহ :

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও সীরাত গবেষক মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের বর্ণনামতে বনু বকর ও বনু খুযা’আহর মধ্যে প্রাচীনকাল থেকেই পরম্পরাগতভাবে যুদ্ধ চলে আসছিল। ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে এ গোত্র দু’টির মাঝে হর-হামেশাই যুদ্ধ লেগে থাকত। ঐতিহাসিকগণের মতে এর সূচনা হয়েছিল অনেকটা এভাবে –

ইসলাম আগমনের বহুকাল পূর্বে, বনু বকরের সাথে মৈত্রীচুক্তিবদ্ধ বনু হাদরামী গোত্রের মালেক ইবনে আব্বাদ নামক জনৈক ব্যক্তি, ব্যবসার উদ্দেশ্যে খুযা’আহ গোত্রের এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় খুযা’আহ গোত্রের কিছু লোক তাকে হত্যা করে। এবং তার সঙ্গে থাকা সমুদয় সম্পত্তি দখল করে নেয়। যেহেতু বনু হাদরামী বনু বকরের মৈত্রীচুক্তিবদ্ধ ছিল, সেহেতু বনু বকর খুযা’আহ গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করে এর প্রতিশোধ গ্রহণ করে। এর জবাবে খুযা’আহ গোত্র পুনরায় বনু বকরের একাংশ বনু দায়েলের সর্দার আসওয়াদের তিন সন্তান-সালমা, কুলসুম ও যুআইবকে হারামের সীমানার কাছে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে হত্যা করে। মূলত এভাবেই উক্ত গোত্র দু’টির মাঝে পারষ্পরিক হত্যা-লুণ্ঠনের ধারা শুরু হয় এবং তা বংশ পরম্পরায় চলে আসতে থাকে।

কিন্তু আরবের ভূমিতে ইসলামের আগমন ঘটলে আরবের গোত্রগুলো নতুন ধর্ম ইসলামকে প্রতিহত করতেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে নিজেদের মধ্যকার এ-সব যুদ্ধ-বিগ্রহ অনেকাংশেই স্তিমিত হয়ে যায়। এর বিপরীতে ইসলামের বিরোধিতাই সর্বমহলে প্রাধান্য লাভ করে। আর এ কারণেই বনু বকর ও বনু খুযা’আহর মধ্যকার যুগ যুগ ধরে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ ম্রিয়মাণ হয়ে যায়৷

বনু খুযা’আহ গোত্র তখনও পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ না করলেও, গোত্রটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাকাঙ্ক্ষী ছিল। কুরাইশদের বিভিন্ন  অপতৎপরতার গোপন সংবাদ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করত। তাই হুদাইবিয়ার সন্ধিতে যখন এটা উল্লেখ ছিল যে, আরবের অন্য গোত্রগুলো যাদের সাথে ইচ্ছা চুক্তিভুক্ত হতে পারবে-তখন বনু খুযা’আহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুক্তিভুক্ত হয়ে যায়।

অপরদিকে বনু বকরের সম্পর্ক শুরু থেকেই কুরাইশদের সাথে বেশি ছিল। ইসলামের বিরুদ্ধে কুরাইশদের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে গোত্রটি কুরাইশদের সহযোগী ছিল। ফলে বনু বকর প্রবেশ করে কুরাইশদের চুক্তিতে।


কুরাইশদের দ্বারা লঙ্ঘিত হলো হুদাইবিয়ার শান্তি-চুক্তি :

হুদাইবিয়ার সন্ধির ভিত্তিতে মুসলিমদের সাথে মক্কার মুশরিকদের দশ বছরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নির্বিঘ্নে ইসলামের দাওয়াত প্রচার করতে থাকেন এবং সে উদ্দেশ্যে রোম-পারস্যসহ বহির্বিশ্বে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি প্রেরণ করতে থাকেন। অপরদিকে মক্কার মুশরিকরাও নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে থাকে। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর এভাবে কেটে যায় ১৯/২০ মাস। বিপত্তির শুরুটা হয় এরপর থেকে৷ নিয়তি কুরাইশদের আর সঙ্গ দেয়নি।

অষ্টম হিজরীর শাবান মাস। বনু বকরের লোকদের মাঝে খুযা’আহ গোত্রের প্রতি সেই পূর্ব শত্রুতা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সেই সাথে যুগ হয় নতুন করে বনু খুযা’আহর মুহাম্মাদের সাথে চুক্তিভুক্ত হওয়ার আক্রোশ। এই দুইয়ের সমন্বয়ে বনু বকর খুব বেশি হিংস্রাত্মক হয়ে ওঠে। রাতের আঁধারে খুযা’আহ গোত্রের উপর অতর্কিত আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে বনু বকরের লোকেরা৷

সে রাতে বনু খুযা’আহর লোকেরা ওয়াতির নামক জলাশয়ের কাছে ঘুমন্ত ছিল৷ কুরাইশদের মদদপুষ্ট বনু বকর, নওফল ইবনে মুয়াবিয়াহর [৭] নেতৃত্বে অতর্কিত হামলে পড়ে বনু খুযা’আহর উপর। ঘটনার আকস্মিকতায় বনু খুযা’আহর লোকেরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে আরম্ভ করে। গত্যন্তর না দেখে তারা আশ্রয় গ্রহণ করে হারাম শরীফে।  কিন্তু নওফল ইবনে মুয়াবিয়াহ এতটাই হিংস্র হয়ে উঠেছিল যে, হারাম শরীফের ভেতরেও তাদেরকে হত্যা করতে থাকে৷ মর্মান্তিক এই ঘটনায় খুযা’আহ গোত্রের ২০/৩০ জন লোক নিহত হয়৷

এই কাজে তাদের অস্ত্রবল ও জনবল দিয়ে সহযোগিতা করে মক্কার কুরাইশরা। অথচ সন্ধিচুক্তির শর্তানুযায়ী কুরাইশদের উচিৎ ছিল বনু বকরকে নিবৃত্ত করা। কিন্তু তারা তা করার বিপরীতে বনু বকরকে শুধু সমর্থনই করেনি বরং রীতিমত সহযোগিতাও করেছে। সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া, ইকরিমাহ ইবনে আবু জাহল,মিকরায ইবনে হাফস ও সুহাইল ইবনে আমরসহ কুরাইশদের অনেকেই এই আক্রমণে স্ব-শরীরে শরীক ছিল।

এই ঘটনা ছিল হুদাইবিয়ার শান্তি-চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। কুরাইশদের চুক্তিভুক্ত হওয়ার কারণে বনু বকরের জন্যও উচিৎ হয়নি মুসলিমদের চুক্তিভুক্ত বনু খুযা’আহর উপর আক্রমণ করা; তেমনিভাবে কুরাইশদের জন্যও উচিৎ হয়নি বনু বকরকে নিবৃত্ত করার পরিবর্তে অস্ত্রবল ও জনবল দিয়ে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করা। পরবর্তীতে অবশ্য কুরাইশরা নিজেদের এই ভুল বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি কোনো। বরং তাদেরকে এই ভুলের মাশুল গুণতে হয়েছিল কড়ায়-গণ্ডায়।

খুযা’আহ গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসূলের দরবারে :

কুরাইশদের প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট বনু বকরের এমন ধৃষ্টতার পর বনু খুযা’আহর সর্দার আমর ইবনে সালিম আল খুযায়ী নিজ গোত্রের ৪০ জন অধিবাসীকে সাথে নিয়ে মদীনায় রাসূলের দরবারে হাজির হয়। ঘটনার পর তিনদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে।  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সাহাবায়ে কেরামকে সাথে নিয়ে মসজিদে নববীতে বসা। এমন সময় আমর ইবনে সালিম মসজিদে নববীতে উপস্থিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ করে কয়েকটি কবিতা আবৃত্তি করার মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে সে।

বনু বকর এবং কুরাইশদের এমন ধৃষ্টতায় সাহাবায়ে কেরাম খুবই মর্মাহত হন। কুরাইশদের এত বড় সাহস দেখে তারা দাঁতে দাঁত পিষেন, মনে মনে ক্ষুব্ধ হন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনে সালিমকে কী বলেন সেটার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তারা। তিনি উত্তেজিত হন নি; শান্তভাবে কথা বলেন।  তাকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়ে বিদায় করেন।

এর কিছুদিন পর বুদাইল ইবনে ওয়ারকাও খুযা’আহ গোত্রের কয়েকজনকে নিয়ে রাসূলের দরবারে উপস্থিত হয় এবং সবিস্তারে সবকিছু খুলে বলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকেও সান্ত্বনা দিয়ে বিদায় করেন। তাঁর থেকে সাহায্যের আশ্বাস পেয়ে তারা মদীনা ত্যাগ করেন।

বুদাইলকে বিদায় করার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যুদ্ধবিরতির মেয়াদকাল বাড়াতে এবং সন্ধিকে আরো শক্তিশালী করতে আবু সুফিয়ান মদীনায় আসছে৷ ইতিমধ্যেই সে মক্কা থেকে বেরিয়ে পড়েছে। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়েই ফিরে যাবে।”

ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো, কুরাইশদের সন্ধিচুক্তি নবায়ন করার প্রচেষ্টা :

এদিকে মক্কার মুশরিকরা খুব দ্রুতই উপলব্ধি করতে পারল যে, বনু খুযা’আহর উপর আক্রমণ করতে বনু বকরকে সাহায্য করা আমাদের উচিৎ হয়নি. বনু বকর যেহেতু আমাদের চুক্তিভুক্ত ছিল তাই আমাদের বরং তাদেরকে এমন গর্হিত কাজ থেকে বারণ করাই উচিৎ ছিল। তারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় যে, এ খবর নিশ্চয়ই মুহাম্মাদের নিকট পৌঁছবে আর মুহাম্মাদ এর দৃষ্টান্তমূলক বদলা নেবে।

নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে কুরাইশরা দ্রুত পরামর্শ সভার আয়োজন করল। খুব ভেবে-চিন্তে সিন্ধান্ত নিল যে, তাদের এই চুক্তিভঙ্গের খবর মদীনায় পৌঁছার পূর্বেই মুহাম্মাদের সাথে হুদাইবিয়ার সন্ধিকে আরো দৃঢ় করার বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। তাই নিজেদের গোত্রপতি আবু সুফইয়ানকে তারা মদীনায় যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করল। অগত্যা সেও মদীনার পথে রওয়ানা হয়ে গেল৷

তার উদ্দেশ্য ছিল দুটি-
১।  হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তি নবায়ন ও দৃঢ় করা।
২।  যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদকাল বৃদ্ধি করা।

মক্কা থেকে আশি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উসফান নামক স্থানে বুদাইলের সাথে আবু সুফইয়ানের সাক্ষাৎ হয়। আবু সুফইয়ান বুঝতে পারে বুদাইল মদীনায় গিয়েছিল মুহাম্মাদকে অবস্থার বিবরণ দিতে। তাই সে জিজ্ঞেস করল, কোথায় গিয়েছিলে বুদাইল? বুদাইল সত্য চেপে আবু সুফইয়ানকে অসত্য বলল। সে বলল, এই তো খুযা’আহর এই উপত্যকায় ঘুরতে গেছিলাম! আবু সুফইয়ান আবারো জিজ্ঞেস করল, তুমি কি মুহাম্মাদের কাছে যাওনি? বুদাইল বলল, না।

কিন্তু ধূর্ত আবু সুফইয়ান বদর যুদ্ধের সেই কৌশলটির পুনরাবৃত্তি করল। সে বুদাইলের উট যেখানে বসেছিল সেখানে গিয়ে উটের গোবর ভেঙে খেজুরের বিচি পেল। এতে সে বুঝে নিল, বুদাইল নিশ্চয়ই মুহাম্মাদের কাছ থেকে এসেছে।

বিরামহীন সফর করে আবু সুফইয়ান মদীনায় পৌঁছল। প্রথমেই সে স্বীয় কন্যা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী উম্মে হাবীবাহর [৮] কাছে গেল। রাসূলের বিছানায় বসতে যাবে, এমন সময় উম্মে হাবীবাহ (রা:) বিছানা গুটিয়ে ফেললেন।

আবু সুফইয়ান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল  ‘কী হে বেটি! বিছানা গুটিয়ে ফেললে কেনো? এই বিছানা কি আমার উপযুক্ত না; না আমি এই বিছানার যোগ্য না?’
উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ) জওয়াব দিলেন, “এটা রাসূলের বিছানা। আপনি তো নাপাক, মুশরিক! আমি সেই বিছানায় আপনাকে কীভাবে বসতে দিতে পারি যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসেন?”
আবু সুফইয়ান হতাশ হয়ে বলল, ‘মদীনায় আসার পর তোমাকে অকল্যাণ গ্রাস করে নিয়েছে।’

আবু সুফইয়ান ভেবেছিল, নিজের উদ্দেশ্য পূরণে স্বীয় কন্যা থেকে কিছু সাহায্য মিলবে। কিন্তু উম্মে হাবীবাহ (রাঃ) তাকে যখন বসতে পর্যন্ত দিলেন না, তখন সে বুঝে গেল এখান থেকে সাহায্যের আশা করা বৃথা। তাই সে সরাসরি রাসূলের দরবারে হাজির হয়ে নিজের দাবী পেশ করল। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথার কোনো উত্তর দিলেন না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ব্যর্থ হয়ে সে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর দ্বারস্থ হল। তিনি পরিষ্কার বলে দিলেন,  এ বিষয়ে আমি তোমাকে কোনোরূপ সাহায্য করতে পারব না। এখানেও ব্যর্থতা। এরপর গেল হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে৷ তিনি বললেন, “আমি তোমার জন্য সুপারিশ করব রাসূলের কাছে? আল্লাহর ক্বসম! আমি যদি একটা লাঠি ছাড়া আর কিছুই না পাই তাহলে তা দিয়েও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব!!”

সর্বশেষ সে গেল, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে।  কিন্তু এখানেও তার কোনো লাভ হল না। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো তার সন্ধিচুক্তি নবায়ন করার প্রচেষ্টা। উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হয়ে, একরাশ হতাশা নিয়ে মক্কার ফিরতি পথ ধরল আবু সুফইয়ান।

চলবে… ইনশা আল্লাহ।


 

নোট :

[১] খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তখনো তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন অষ্টম হিজরীর সফর মাসে। ২১ হিজরী মোতাবেক ৬৪২ খ্রিস্টাব্দের পহেলা জানুয়ারিতে তিনি ইন্তিকাল করেন।
তাঁর বিস্তারিত জীবনী জানতে আগ্রহী পাঠক ইসলামের তারকাগণ এর  পর্ব:১২| হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহহু, কিস্তি-০১ https://alfirdaws.org/2020/11/07/44004/ এবং  (শেষ কিস্তি) https://alfirdaws.org/2020/11/19/44365/]… পর্ব দুটি পড়তে পারেন ইনশাআল্লাহ্‌!

[২] কুরাউল গামীম। মক্কা থেকে মদীনার পথে আনুমানিক ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি জায়গার নাম।

[৩] মক্কা থেকে পশ্চিমে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি জায়গার নাম।

[৪] পবিত্র কুরআনের সূরা ফাতহের ১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:
لَقَدۡ رَضِیَ اللّٰہُ عَنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ یُبَایِعُوۡنَکَ تَحۡتَ الشَّجَرَۃِ فَعَلِمَ مَا فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ فَاَنۡزَلَ السَّکِیۡنَۃَ عَلَیۡہِمۡ وَاَثَابَہُمۡ فَتۡحًا قَرِیۡبًا ۙ
মুমিনরা যখন বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে (মৃত্যুর) শপথ করল তখন  আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন। তিনি অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন।
মূলত এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রতি “রিযা” তথা সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন বিধায় ইতিহাসে এই বাইয়াতকে “বাইয়াতুর রিযওয়ান” (রিযওয়ান মানে সন্তুষ্ট) বলা হয়।

[৫] বুদাইল ইবনে ওয়ারকা আল খুযায়ী (রাঃ)। তিনি ও তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে বুদাইল মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এরপর গাযওয়ায়ে তায়েফ, হুনাইন ও তাবুকসহ ইসলামের বড় বড় যুদ্ধগুলোতে শরীক ছিলেন। রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা!

[৬] এই চুক্তির পর থেকে ফাতহে মক্কা পর্যন্ত মদীনা থেকে কারো মক্কা চলে আসার ঘটনা না ঘটলেও মক্কা থেকে ইসলাম গ্রহণ করে মদীনায় চলে আসার ঘটনা অনেক ঘটেছে। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাষ্ট্রীয় চুক্তির কারণে তাদেরকে মদীনায় আসতে দিতেন না বলে তারা হযরত আবু বাসীর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে সমুদ্র উপকূলীয় ঈস নামক অঞ্চলে নিজেদের আস্তানা গেড়ে বসেছিলেন এবং সিরিয়া অভিমুখী কুরাইশদের বাণিজ্যবহরগুলোতে আক্রমণ করে তাদের নিরাপদ চলাচলকে বিঘ্নিত করতেন। ফলে কুরাইশরা বাধ্য হয়ে সন্ধির এই চুক্তিটি বাতিল করে দেয় এবং তাদের মদীনায় ফিরিয়ে নিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আবেদন করে। তিনি তাদের আবেদন মনজুর করেন।

[৭] নওফল ইবনে মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু।  বদর, উহুদ ও খন্দকে কুরাইশদের পক্ষ হয়ে রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর, গাযওয়ায়ে তায়েফ ও হুনাইনে রাসূলের সাথে শরীক ছিলেন। ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়ার শাসনামলে তিনি মদীনায় ইন্তিকাল করেন। ইসলামের পূর্বে ৬০ বছর ও ইসলামের পরে ৬০ বছর মিলিয়ে তাঁর মোট বয়স হয়েছিল ১২০ বছর। রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু!

[৮] তিনি হলেন রামলাহ বিনতে আবু সুফইয়ান। কিন্তু উম্মে হাবীবাহ নামেই তিনি বেশি প্রসিদ্ধ ছিলেন। রাসূলের নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৭ বছর পূর্বে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশের বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। তারা উভয়েই ইসলামের প্রাথমিক যুগেই ইসলাম গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় হিজরীতে হাবশায় হিজরত করলে সেখানে হাবীবাহ নামে তাদের এক কন্যাসন্তান জন্মলাভ করে। কিন্তু উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশ মুরতাদ হয়ে যায়। সেখানে থাকতেই হাবশাহর বাদশাহ নাজাশীকে উকিল বানিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেন। নাজাশী রাসূলের পক্ষ থেকে নিজেই ৪০০ স্বর্ণমুদ্রা মহর আদায় করে দেন। ৪৪ হিজরীতে ৬৮ বছর বয়স পেয়ে তিনি মদীনাতে ইন্তিকাল করেন। রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা!


 

লেখক :   মুফতি আব্দুল্লাহ মুনতাসির

 


 

আগের পর্বগুলো পড়ুন :

১। বিজয়ের মাস: মাহে রমাদানের গৌরবদীপ্ত বিজয়-সিরিজ
|| পর্ব-১ ||
সারিয়্যায়ে হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব: ইসলামের প্রথম যুদ্ধাভিজান
https://alfirdaws.org/2022/04/01/56426/

২। বিজয়ের মাস: মাহে রমাদানের গৌরবদীপ্ত বিজয়-সিরিজ
|| পর্ব-২ ||
ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ: ইসলামের প্রথম বিজয়াভিজান [প্রথম কিস্তি]
https://alfirdaws.org/2022/04/05/56473/

৩। বিজয়ের মাস: মাহে রমাদানের গৌরবদীপ্ত বিজয়-সিরিজ
|| পর্ব-৩ ||
ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ: ইসলামের প্রথম বিজয়াভিযান [দ্বিতীয় কিস্তি]
https://alfirdaws.org/2022/04/09/56561/

৪। বিজয়ের মাস: মাহে রমাদানের গৌরবদীপ্ত বিজয়-সিরিজ
|| পর্ব-৪ ||
ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ: ইসলামের প্রথম বিজয়াভিযান [তৃতীয় কিস্তি]
https://alfirdaws.org/2022/04/14/56664/


 

তথ্যসূত্র :

(১) সহীহ বুখারী।
(২) সীরাতে ইবনে হিশাম।
(৩) মাগাযিল ওয়াক্বিদী।
(৪) যাদুল মা’আদ।
(৫) উসদুল গাবাহ।
(৬) আর রাহীকুল মাখতুম।
(৭) সীরাতে মুস্তফা।
(৮) তারীখে ইসলাম।
এছাড়াও সীরাত ও ইতিহাসের উপর রচিত গ্রহণযোগ্য অন্যান্য কিতাব।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআশ-শাবাবের অসাধারণ সব হামলায় এক ডজনেরও বেশি গাদ্দার সৈন্য হতাহত
পরবর্তী নিবন্ধউগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য ভারত : যেখানে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়েও পার পাওয়া যায় সহজেই