হিন্দুত্ববাদী ভারতে হিন্দুরা মুসলিমদের ধর্মীয় স্থানগুলোতে কর্তৃত প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছে। মুসলিমরা যেখানে ইবাদত করে সেখানেই হিন্দুদের পূজা করতে হবে, হনুমান চালিশা পড়তে হবে- এটাকে যেন নিওম বানিয়ে ফেলেছে তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের স্থানগুলোতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। অন্যথায়, তাদের কল্পিত দেবতার পূজা করার জন্য হিন্দুদের তো জায়গার অভাব নেই।
দখরদারিত্বের অংশ হিসেবে হিন্দুত্ববাদী কর্ণাটক সরকার বেঙ্গালুরু এবং হুবলির ইদগাহ ময়দানে হিন্দুদের গণেশ চতুর্থী উদযাপনের জন্য মূর্তি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে।
কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এই দুই শহরের ইদগাহ মাঠে প্যান্ডেল করতে চেয়েছিল। অথচ, সেখানে গত ২ শত বছরের অধিক সময় ধরে মুসলিমরা ইদের নামায আদায় করে আসছে। কখনো হিন্দুদের পূজা করা হয়নি। তাহলে এখন কেন এই উন্মাদনা? হিন্দু আয়োজকরা কি তাদের পুজো করার জন্য অন্য কোনও জায়গা পেতে পারেনি?
স্থানীয় মুসলিমরা জানিয়েছেন, আমরা জানি এটা মোটেও পুজোর কথা নয়। বা এটি স্থানের অভাব হওয়ার কারণে নয়। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নিজেই বিষয়টি স্পষ্ট করেছে; সে আদালতকে বলেছিল যে, জায়গার একেবারেই অভাব ছিল না। কিন্তু তারা চেয়েছিল এই ইদগাহ মাঠে গণেশ প্যান্ডেল বসাতে। যাতে মুসলিমদের স্থানগুলো তাদের দখলে নিতে পারে।
হিন্দুত্ববাদীরা চক্রান্ত চালাচ্ছে, ঈদগাহ ময়দান এবং এর মতো অন্যান্য স্থানের উপর মুসলমানদের দাবিকে দুর্বল করে দিতে। এবং শেষ পর্যন্ত তাদের এই জাতীয় স্থানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে।
হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র ও উগ্র হিন্দু দলগুলোর গণেশ পূজার আড়ালে একটি নতুন চক্রান্ত শুরু করতে চায়। তারপরে এটির এই ভিত্তি করে অন্যান্য প্রোগ্রাম এবং ইভেন্টগুলো করার চেষ্টা করবে। ফলে ধীরে ধীরে সেগুলো মুসলিমদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। কারণ তাদের কাজই হল প্রথমে একটি স্থানের ব্যাপারে বিতর্ক তৈরী করা পরে হিন্দুত্ববাদী আইন আদালতের মাধ্যমে পুরাপুরি দখল করা। যেমনটা হয়েছিল বাবরী মসজিদের ক্ষেত্রে।
গণেশ চতুর্থীর আয়োজনের জন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে ছিল- রাম সেন এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ – যারা হুবলি ইদগাহ মাঠে প্যান্ডেল তৈরি করেছিল। ঠিক একই পন্থায় আরএসএসের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক বাবরি মসজিদের জমি চেয়েছিল। এই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো চায়, মুসলমানরা তাদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেক।
অযোধ্যা, বারাণসী, মথুরা, হুবলি এবং বেঙ্গালুরুসহ সব জায়গাতেই মুসলমানদের ধর্মীয় স্থানগুলো দখল করার চক্রান্ত চলছে। অনেকগুলো স্থান নিয়ে ইতিমধ্যেই আদালতে মামলা চলছে। আর বাবরী মসজিদের স্থান সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ভাবে হিন্দুদের হাতে তুলে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী আদালত। এভাবে একে একে সবকিছু দখল করে মুসলিমদের ভারতছাড়া করার চূড়ান্ত নীলনকশা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী ভারত। তাই বিষয়গুলোকে হালকাভাবে না নিয়ে মুসলিমদের উচিত অনাগত ভবিষ্যতের অনিবার্য সংঘাতের প্রস্তুতি নেওয়া – এমনটাই মত ইসলামি চিন্তাবীদদের।
তথ্যসূত্র:
——–
1. Ganesh Chaturthi at Idgah Grounds Is An Effort to Turn Muslim Spaces ‘Public’
– https://tinyurl.com/kx8neh7v