পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ায় যুদ্ধের আগুন দিন দিন আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। দেশটিতে অপ্রতিরোধ্য প্রতিরোধ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন। যাদের অগ্রযাত্রা রুখতে সোমালি ও পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন সামরিক কৌশল অবলম্বন করে আসছে। কিন্তু তাদের এসব কৌশলে কোনোটিই কাজে আসছে না।
ফলে দেশটির সরকার আশ-শাবাবকে রুখতে নতুন করে ব্যার্থ কৌশল অবলম্বন করতে শুরু করেছে। এই লক্ষ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান স্থানীয় মিলিশিয়াদের আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে একত্রিত করছে। হাসান তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে যে, তারা যেনো বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে গিয়ে স্থানীয় মিলিশিয়াদের একত্রিত করে, এবং তাদেরকে আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মোতায়েন করে। প্রেসিডেন্টের এই নির্দেশের পর বিভিন্ন অঞ্চলের সশস্ত্র সন্ত্রাসী এবং উপজাতীয় দস্যুদের একত্রিত করে মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তুলতে শুরু করেছে দেশটির গাদ্দার সেনাবাহিনী। যাদেরকে একত্রিত করার পর অস্থায়ী সামরিক কেন্দ্রে প্রশিক্ষণও দিতে শুরু করেছে সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সূত্র মতে, সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, মিলিশিয়া গ্রুপগুলোকে আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানের সামনের সারিতে ব্যবহার করবে। অর্থাৎ মিলিশিয়াদেরকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করবে। যারা আশ-শাবাবের হামলায় নিহত হলে বলা হবে যে, আশ-শাবাব বেসামরিক লোকদের হত্যা করছে।
যাইহোক, সরকার তার এই কৌশল বাস্তবায়নে দেশটির হিরান, জালাজদুদ, জিযু এবং বকুলের অঞ্চলের মিলিশিয়াদের জড়ো করতে শুরু করেছে। যেখানে যুদ্ধ এখন সবচাইতে তীব্রভাবে চলছে, যেখানে সরকার আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে দাড়াতে ব্যার্থ হচ্ছে।
সরকার যখন এমন হাস্যকর কৌশল অবলম্বন করছে, তখন আশ-শাবাবও বসে নেই। তাঁরা গত বৃহস্পতিবার থেকেই এসব মিলিশিয়াদের অবস্থানগুলি খুঁজে খুঁজে ধ্বংস করতে শুরু করেছেন। যেসব মিলিশিয়াদের একত্রিতই করা হয়েছে আশ-শাবাবকে প্রতিহত করতে, তারা এখন আশ-শাবাবের আসার খবর পেয়েই এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে।
আল-আন্দালুস রেডিওর তথ্য মতে, আজ ৩ সেপ্টেম্বর সকালে হিরান অঞ্চলের মাহাস জেলায় সরকার কর্তৃক মিলিশিয়াদের সরবরাহ বহনকারী একটি কনভয়ে তীব্র হামলা চালিয়েছে আশ-শাবাব। যাতে সরবরাহ বোঝাই ৮টি গাড়ি ধ্বংস করেছেন মুজাহিদগণ। এসময় কমপক্ষে ৫০ মিলিশিয়াকেও হত্যা করেছেন আশ-শাবাব মুজাহিদিন। একইভাবে শুক্রবার রাতেও মাউইসলি মিলিশিয়াদের জন্য খাদ্য সহায়তা বহনকারী একটি কনভয় লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে তাদের সবকিছু জব্দ করেন মুজাহিদগণ। সেই সাথে ১৭ এর বেশি মিলিশিয়াকে হত্যা করেন।
এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার, বালাডওয়েন জেলায় ম্যাকাউইসলি স্থানীয় মিলিশিয়াদের উপর হামলা চালান মুজাহিদগণ। যাদেরকে একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল দেশটির গাদ্দার সেনাবাহিনী। আর মধ্যরাতে মুজাহিদগণ এই ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে বসেন। ফলে ২৪ এরও বেশি মিলিশিয়া সদস্য নিহত হয়। বাকিরা অস্থায়ী ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। অভিযান শেষে মুজাহিদগণ ঘটনাস্থল থেকে ৪টি গাড়ি জব্দ করেন।
সর্বশেষ আজ ৩ আগস্ট বিকালে, শাবেলি সুফলা রাজ্যের বেলেডোগল এয়ারবেসের কাছে আরও একটি সামরিক কনভয়ে হামলা চালান হারাকাতুশ শাবাব মুজাহিদিন। যেখানে পশ্চিমা গোলাম সামরিক বাহিনীর ৩টি জ্বালানী ট্রাককে ধ্বংস করেছেন মুজাহিদগণ।
এদিকে আশ-শাবাবের একের পর এক এসব দুর্দান্ত হামলার ফলাফল দেখে একপ্রকার কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে সরকার সংশ্লিষ্ট দালাল মিডিয়াগুলো। তারা সরকারের ব্যার্থতা ঢাকতে প্রচার করছে যে, আশ-শাবাব মানুষের পণ্যবাহী ট্রাক, বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, বেসামরিক লোকদের হত্যা ও বন্দী করছে। অথচ হামলার শিকার এরা কেউই কিন্তু বেসামরিক লোক নয়; বরং তারা সরকারের নতুন যুদ্ধ কৌশলের একটি অংশ ও মিলিশিয়া সদস্য। যারা বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী বাড়িঘর (ক্যাম্প) তৈরি করেছে।
উল্লেখ্য যে, গত আগস্টে পশ্চিমা সমর্থিত গাদ্দার সোমালি প্রশাসন আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু এই ঘোষণার পরপরই রাজধানীর সবচাইতে সুরক্ষিত এলাকায় অবস্থিত হায়াত হোটেলে ৩দিন ধরে হামলা চালায় আশ-শাবাব। যাতে প্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ত প্রায় ২০০ কর্মকর্তা ও সেনা সদস্য হতাহত হয়। আশ-শাবাব মুখপাত্র তখন প্রেসিডেন্ট হাসানকে ‘বোকা’ বলে সম্বোধন করেন। প্রসিডেন্টের নতুন যুদ্ধ কৌশল যেন আবারো আশ-শাবাব মুখপাত্রের সেই উক্তিকেই স্বরণ করিয়ে দিচ্ছে।
প্রতিবেদক : ত্বহা আলী আদনান
তারা যতই শক্তিশালী হোক, আল্লাহর মুজাহিদের সামনে তারা নত স্বীকার করতে বাধ্য।