এবার আর কোনো রাখঢাক না রেখেই ভারতের হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এর আদলে বাংলাদেশে সনাতন পার্টি (বিএসপি) নামে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে।
গত ২৬ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সভার মধ্য দিয়ে দলটি আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে। হিন্দুত্ববাদী এ সংগঠনটির নেতারা দাবি করছে যে, বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য হিন্দু জাতির অস্তিত্ব রক্ষা এবং রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই এ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালে সরাসরি ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী বিজেপির নামানুসারেই বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি) নাম দিয়ে এ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। সে সময় তারা বলেছিল, ভবিষ্যতে বিজেপি বাংলাদেশের ক্ষমতায় গেলে যে কাজগুলো করবে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অর্পিত সম্পত্তি আইন পরিবর্তন ও দ্রুত সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন। অর্থাৎ যে সব হিন্দুরা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিল তাদের ফেরত এনে সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া হবে। সংবিধান সংশোধন করা হবে। হিন্দুদের মধ্যে একজন উপ-রাষ্ট্রপতি ও উপ-প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হবে। সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রতিরোধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে ইত্যাদি।
সে সময় তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হলে দলটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল উগ্রবাদী ঐ হিন্দুরা।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের দমন-পীড়ন নীতির কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরাই সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি ভারতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের খুঁটিরজোর আর ভারত সরকারের প্রতি দালাল সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। এসবই এদেশের হিন্দুদের নতুন করে আত্মপ্রকাশে ভুমিকা পালন করেছে বলে মনে করছেন ইসলামি চিন্তাবিদগণ।
২০১৭ সালে বিজেপি নাম দিয়ে আত্মপ্রকাশের পর তারা যেসব লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উল্লেখ করেছিল, এবার তারা সে অবস্থানে না গিয়ে কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। বরাবরই হিন্দুরা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করে। যেমনটা প্রিয়া সাহা ট্রাম্পের কাছে ৩৫ মিলিয়ন (৩.৫ কোটি) হিন্দু গুম হওয়ার হাস্যকর অভিযোগ দিয়ে ও নিজের ঘর নিজেই পুড়িয়ে দিয়ে অর্জন করতে চেয়েছিল; যদিও বাংলাদেশের মোট হিন্দু জনসংখ্যাই তার উল্লেখিত ‘গুম’এর সঙ্খারর থেকে কয়েক গুণ কম।
আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারও এই উগ্রবাদী হিন্দুরা তাদের অস্তিত্ব রক্ষা ও নির্যাতন থেকে মুক্তির কাল্পনিক দাবির মাধ্যমে মুসলিম গণহত্যা বাস্তবায়ন ও ভারতের আগ্রাসন বৈধকরণের ‘যৌক্তিক’ অজুহাত তৈরির উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি তারা সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতনের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালানোর মাধ্যমে এদেশে ভারতের সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করার একটি গ্রহণযোগ্য প্রেক্ষাপট তৈরির চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতোমধ্যে দলটি আত্মপ্রকাশের সাথে সাথে ২০০১ সাল থেকে দেশে কথিত হিন্দু নির্যাতনের বিচারের দাবি জানিয়েছে। এবং এটি যেহেতু হিন্দুত্ববাদী বিজেপির আদর্শের সংগঠন, আর বিজেপির মূল লক্ষ্য হচ্ছে মুসলিমদের দেশ ছাড়া করে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু রাষ্ট্র কায়েম করা, তাই এই বিএসপি’র উদ্দেশ্যও একই৷ তাদের রাজনৈতিক দল ঘোষনার উদ্দেশ্য ক্ষমতায় যাওয়া বা না যাওয়া নয়। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে সম্প্রীতি নষ্ট করে বাংলাদেশকে একটি অস্থিতিশীল সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা। যাতে করে এ দেশকে নিয়ে ভারত সরকার নিজেদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পারে।
তাই বাংলাদেশের মুসলিমদের এখনই এই বিএসপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিৎ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুসলিম জাতিকে অবগত করতে হবে। নতুবা হিন্দুত্ববাদীদের আগ্রাসন ও ভয়ংকর ষড়যন্ত্র থেকে এ দেশের কেউই রক্ষা পাবে না বলে মনে করছেন তাঁরা।
প্রতিবেদক : মুহাম্মাদ ইব্রাহীম
তথ্যসূত্র :
১। নতুন রাজনৈতিক দল ‘বিএসপি’র আত্মপ্রকাশ
– https://tinyurl.com/426ky2w2
২। এবার বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) আত্মপ্রকাশ
– https://tinyurl.com/37s2aj34
এখনো আমাদের ঘুম ভাংগে না।
কারন আমরা বাংগালী জাতি বুঝতে হবে।