প্যারালাইসড হওয়ার পরেও মুসলিম যুবককে জামিন দেয়নি হিন্দুত্ববাদী আদালত

মাহমুদ উল্লাহ্‌

1
509

হিন্দুত্ববাদী ভারতে হিন্দুরা বড় বড় অপরাধ করেও জামিনে বের হয়ে মুক্ত আকাশের নিচে অবাধে অপরাধ করেই চলেছে। অন্যদিকে, মুসলিমদেরকে কোন অপরাধ ছাড়াই বছরের পর বছর কঠিন শাস্তি দিচ্ছে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন। বহু মুসলিমকে মিথ্যে মামলা দিয়ে আটকে রেখেছে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন।

এমনই একজন নিরপরাধ ব্যক্তি হলেন মুসলিম মিডিয়া কর্মী এবং ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার নেতা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। হিন্দুত্ববাদীদের নির্মম চর্টারে তিনি “আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত” হয়ে পড়েছেন। এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চিকিৎসায় অবহেলার কারণে অবস্থা এমন হয়েছে যে, তিনি এখন কাউকে চিনতে পারছেন না।

২৮ বছর বয়সী আতিকুর রহমান ২০০২ সাল থেকে অ্যাওর্টিক রেগারজিটেশন নামক হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী, বর্তমানে লাক্ষনৌয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি (কেজিএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

২০২০ সালের অক্টোবরে সাংবাদিক সিদ্দিক কাপান, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্র মাসুদ আহমেদ এবং মথুরায় একজন ক্যাব চালক মোহাম্মদ আলমের সাথে তাকেও গ্রেপ্তার করেছিল হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন। যখন তারা দলিত এক নারী ধর্ষণের ব্যাপারে রিপোর্ট করতে যাচ্ছিলেন। যে নারীর লাশ পুলিশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে পুড়িয়ে ফেলেছিল। কারণ এ ঘটনার সাথে পুলিশও জড়িত ছিল। আর এব্যাপারে রিপোর্ট করাই কাল হয়েছে সাংবাদিক সিদ্দিক কাপানসহ বাকীদের।

তাদের চারজনকেই কঠোর বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের (ইউএপিএ) অধীনে আটক করা হয়েছিল। ২ বছর অতিক্রম হয়ে গেলেও কাউকেই ছাড়েনি হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন। ৪ জনের মাঝে সিদ্দিক কাপান ও আতিকুর রহমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

২০২২ সালের মার্চ মাসে, মথুরা জেল কর্তৃপক্ষ রহমানের পরিবারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল যে তাকে জরুরিভাবে দিল্লির এইমস-এ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কারণ তিনি বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করেন।

“তাকে ২৮ দিন হাসপাতালে রাখা হয়েছিল এবং তারপর তাকে আবার হাসপাতালে পাঠানো প্রয়োজন ছিল। প্রায় এক মাস পরে, তার স্বাস্থ্যের অবস্থা আরো খারাপ হয়। এর ভিতরে কোন চিকিৎসা হয়নি। কেজিএমইউ-এর ডাক্তাররা তাকে এইমস-এ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল, কিন্তু পুলিশ তা করেনি।”

ফলে এবার তার অবস্থা এমন খারাপ হয়েছে যে, হাসপাতালে পৌঁছে পরিবারের লোকজন দেখেন রহমানের  “আর বোধশক্তি নেই”।

উনার স্ত্রী সানজিদা জানান, আতিকুর রহমানের বাম পাশ পুরোপুরি অবশ হয়ে গেছে এবং তিনি আর কাউকে চিনতে পারছেন না। “তিনি ভিডিও কলে তার ছেলেদেরও চিনতে পারেন না। আমার ছেলেরা আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, বাবা তাদেরকে আবার চিনতে পারবে কিনা?”

জনাব আতিকুর রহমান একজন উচ্চ শিক্ষিত পিএইচডিধারী ব্যক্তি ছিলেন। মিরাটের চৌধুরী চরণ সিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ছাত্র আন্দোলন ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার জাতীয় পদাধিকারী। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী বিক্ষোভের সময়ও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।

শুধু মুসলিম হওয়ায় হিন্দুত্ববাদীদের রোষানলের শিকার হচ্ছেন এমন হাজারো যুবক। তাই এমন গুরুতর অসুস্থ হয়েও জামিন পাচ্ছেন না। অথচ, তাদের কথিত আইন আদালত অনুযায়ী তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য। মুসলিম যুবকদের এভাবে আটকে রেখে ধীরে ধীরে শেষ করে দেওয়া কখনোই বিচার হতে পারে না। এগুলোকে স্রেফ মুসলিম বিদ্বেষ আর প্রকাশ্য জুলুম হিসেবেই আখ্যা দিয়েছেন বিশ্লেষকগণ, হিন্দুত্ববাদের মূল উৎপাটন ছাড়া যে জুলুম শেষ হবে না।



তথ্যসূত্র:
——–
1. “This isn’t justice”: After suffering paralysis, Muslim activist yet not been granted bail
https://tinyurl.com/3tjusyvm

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংশোধনের শর্তে বিদ্রোহী এলাকা থেকে আল-কায়েদার অবরোধ প্রত্যাহার
পরবর্তী নিবন্ধআশ-শাবাবের উন্নত প্রযুক্তি, আধুনিক যুদ্ধ কৌশল আর ড্রোন হামলায় নাস্তানাবুদ কুফ্ফার বাহিনী