ভারতে উত্তরাখণ্ডে একটি মুসলিম পরিবার তাদের প্রতিবেশী হিন্দুদের সঙ্গে সামান্য বিষয় নিয়ে বিরোধ হয়। এ নিয়ে ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় হিন্দুত্ববাদী উগ্র জনতা পারভেজ আহমদের পরিবারের উপর হামলা চালায়, যার ফলে তার পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্যরা আহত হয়। তারা জনাব আহমদের ছোট ভাইয়ের একটি জিমও ভাঙচুর করে।
আহমেদের পরিবার জানিয়েছে যে, তাদের প্রতিবেশী হিন্দুরা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সাথে সম্পর্কযুক্ত। তারা সংগঠনের আরো বেশ কয়েকজন গুণ্ডা নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে ২৯ আগস্ট এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সেখানে তারা ছয়জনকে মূল আসামী এবং অপরিচিত ১০-১২ জনের নামে মামলা করেছে। মুসলিম পরিবারটির উপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে ৬ হিন্দু। তারা হল – পুরুষোত্তম সাইনি, অরুণ ধীমান, বিনোদ ধীমান, রাজপাল, আনশুল সাইনি এবং পারস। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা করেনি হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন।
জানা গেছে, আহমদের পরিবার এবং তার প্রতিবেশীদের মধ্যে চলমান বিরোধ সম্পত্তির বিরোধ দিয়ে শুরু হয়েছিল, যার মামলা আদালতে শুনানি চলছে। হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম পরিবারের সম্পত্তি দখল করে হয়রানি করছে।
জনাব পারভেজ আহমেদ ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, “২৯ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আমাদের ওপর হামলা হয়। তারা আমাদের বিরুদ্ধে তাদের লোকদের উস্কানি দিতেই এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল। আমার ছোট ভাইয়ের একটি জিম আছে, যাকে জাফরান কাপড় পরা একদল হিন্দু লোক আক্রমণ করে। যদিও কারো কারো মুখ ঢাকা ছিল, আমরা তাদের পোশাক থেকে কিছু সদস্যকে চিনতে পারি।”
“জিম ভাংচুর করা হয়েছিল এবং গুলি চালানো হয়েছিল। জিমে হামলার পর তারা রাস্তা পার হয়ে আমাদের বাড়ির পাশে চলে আসে। তাদের সাথে লাঠিসোটা ছিল এবং আমার ভাইকে ভিডিও করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছিল। আমার বাবা হিন্দুত্ববাদী জনতাকে থামানোর চেষ্টা করলে লাঠিসোটা নিয়ে প্রথমে উনার উপর হামলা করে। ঘরের নারীদেরকেও কটূক্তি করা হয়। আলিশার মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন এবং বর্তমানে রুরকির সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
জনাব আহমেদ আরও বলেছেন, “আমরা যে কয়টি মুসলিম পরিবার আছি, আর এই এলাকায় বসবাস করা নিরাপদ বোধ করি না। যেহেতু কোন অপরাধী গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং তাদের পূর্ববর্তী অভিযোগগুলির ব্যাপারেও কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি।”
আহমেদ তার অভিযোগে জানিয়েছেন, ১৮ আগস্ট রাতে তিনি রাতে নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। পরিবারের মহিলারা বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় চার-পাঁচজন লোক জড়ো হয়ে তাদের হুমকি ও গালিগালাজ করে। তাদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া দেয়।
“এর আগে তারা আমাদের মামলা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে। তারা বলেছিল, ‘তোমরা মুসলমান, তোমাদের এখানে থাকার কোনো অধিকার নেই’। একভাবে তারা আমাদের ওপর অত্যাচার করেছে। আমরা মামলায় একটি এফআইআরও দায়ের করেছি, পুলিশকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। যদিও তাদের কিছুই হয়নি।”
“আমরা অনিরাপদ বোধ করছি, যারা হামলায় অংশগ্রহণ করেছিল তাদের কাউকেই এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমার বাবা হিন্দুত্ববাদীদের আঘাতে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন এবং মাথায় আঘাতের কারণে কষ্ট পাচ্ছেন।”
হিন্দুত্ববাদী ভারতে মুসলিমদের জান মালের কোন নিরাপত্তা এখন আর নেই। কারণে অকারণে হিন্দুরা মুসলিমদের উপর হামলা করছে। হিন্দুত্ববাদী পুলিশ অপরাধীদেরকেও আটক করছে না। মুসলিমলিমদের জান মালের নিরাপত্তারও কোন ব্যবন্থা নিচ্ছে না। তাই মুসলিমদের জান, মাল, ইজ্জত হেফাজতের দায়িত্ব মুসলিমদেরকেই নেওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন চিন্তাবিদগণ উলামায়ে কেরাম।
তথ্যসূত্র:
——–
1. The Wire: Muslim Family Allegedly Attacked in Uttarakhand Town by Neighbours Over Property Case
– https://tinyurl.com/36v327z6