দখলদার চীন সরকার কর্তৃক আরোপিত কোভিড লকডাউনের কারণে পূর্ব তুর্কীস্তানে এখন চলছে হাহাকার। দিনের পর দিন না খেতে পেরে মানুষের জীবন এখন দুর্বিষহ। পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে প্রায় প্রতিদিনই এখন মারা যাচ্ছে সেখানকার মুসলিমরা। এমন পরিস্থিতে পূর্ব তুর্কীস্তানের ইলি কাজাখ জেলার গুলজার শহরের কারাডং গ্রামের উইঘুর মুসলিমরা কোভিড লকডাউন উপেক্ষা করে নেমে আসেন রাস্তায়। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল করে পর্যাপ্ত খাবার যোগান দেওয়ার দাবি জানায় তারা। কিন্তু এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেওয়ায় শত শত উইঘুর মুসলিমকে আটক করে দখলদার কর্তৃপক্ষ।
সেখানের স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, গত সোমবার দখলদার সরকার কর্তৃক আরোপিত কোভিড-১৯ লকডাউন উপেক্ষা করায় গুলজার একটি গ্রামের প্রায় ৬০০ জনেরও বেশি তরুণ উইঘুর মুসলিমকে আটক করেছে কর্তৃপক্ষ।
আটককৃত মুসলিমদের সংখ্যা ৬০০ জনের বেশি হলেও, সরকারি হিসাবে আটকের প্রকৃত সংখ্যার হেরফের করেছে চীন। তাদের হিসাবে গুলজা শহরে লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করায় মাত্র দুইজনকে পাঁচ দিনের কারাদন্ডে দন্ডিত করেছে তারা।
আগস্টের শুরু থেকে চলতে থাকা এই কঠোর লকডাউনের কারণে পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসলিমরা এখন ঠিকমত খেতে পারছেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে নিন্দার ঝড় বইয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন উইঘুর বুদ্ধিজীবীরা। তাদের দাবি যে, দখলদার চীন সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে উইঘুর মুসলিমদের ঘরে আটক রেখে তাদের না খাইয়ে মারতে চাচ্ছে। যা মূলত তাদের উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোরই একটি কৌশল মাত্র।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উইঘুরদের পোস্ট করা বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, এই কঠোর লকডাউনের কারণে তারা মৌলিক সকল চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা থেকে তাদের বঞ্চিত করছে কর্তৃপক্ষ। এবং মূলত এই দুইটির অভাবেই মারা যাচ্ছে সেখানকার মুসলিমরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক ভিডিও পোস্টে একজন উইঘুর বিক্ষোভকারী বলেন- “আজ আমরা মৃত্যুর কারণে রাস্তায় বের হয়েছি। অন্যথায় আমরা সবাই চুপচাপই থাকতাম। এই লোকদের দিকে তাকান যারা আজ রাস্তায় নেমেছে। আমরা গুলজা শহরের কারাডং গ্রামের বাসিন্দা। আমাদের জন্য তারা (কর্তৃপক্ষ) এখানে কোন সাহায্য পাঠায়নি। তাই আমরা আর সহ্য করতে না পেরে এখন রাস্তায় নেমেছি।”
এরই মধ্যে দখলদার সরকার পূর্ব তুর্কিস্তানের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোয় উইঘুর মুসলিমদের হুমকি স্বরূপ জানায় যে, সেখানের কোন এলাকায় এই লকডাউন নিয়ে কোন গুজব ছড়ানো হলে তাদের কথিত “বিচ্ছিন্নতাবাদী”র তকমা দিয়ে শাস্তি দেবে তারা।
লকডাউনের ভয়াবহতা লুকাতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে দখলদাররা। গুলজা ইয়েঙ্গিহায়েত থানার এক কর্মকর্তার কাছে আটককৃত মুসলিমদের সংখ্যা জানতে চাইলে সে বলেছে, বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা সে জানে না। “যারা মামলাটি পরিচালনা করছে তারাই এটা জানে। আমরা জানি না কারণ তারা এখনো আমাদের কিছু জানায়নি,” বলেছে সেই কর্মকর্তা।
এছাড়া গুলজা সিটি পুলিশ কমান্ড সেন্টারের একজন কর্মকর্তা ফোনে বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে তথ্য দিতে অস্বীকার করেছে। সে বলেছে- “দয়া করে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলিতে খোঁজ করুন। আমরা এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারছি না। অনলাইনে এ বিষয়ে পুলিশ বিভাগ থেকে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে দেখুন।”
এছাড়াও উইঘুর ভাষায় একটি সতর্কবার্তায় মুসলিমদের কোভিড লকডাউন সম্পর্কে কোনও তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট না করার নির্দেশ দিয়েছে দখলদাররা। সেই সতর্ক বার্তায় জানানো হয়- “আজ থেকে শুরু করে ১৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনও খবর, কোনও ছবি ও সেটার উপর কোন লেখা, সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মরিয়া অভিব্যক্তির’ কোন ভিডিও বা ছবি এবং বিশেষ করে পৃথক চ্যাট রুমে এসব পোস্ট শেয়ার না করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে”। (সংক্ষেপিত)
এদিকে উইঘুররা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের আবাসিক ব্যবস্থাপনা অফিসগুলি এলাকার বাইরে থেকে দান করা খাবারের জন্য অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে। অন্যদিকে গুলজার বাইরে থেকে উইঘুররা বলছেন, শহরের আশেপাশের লোকদের সাহায্য করার জন্য তারা যে খাবার দান করতে চেয়েছিলেন, তা হাউজিং ম্যানেজার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
দখলদার চীনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক করোনাভাইরাস লকডাউন জারি করার পর থেকে গুলজা শহরের প্রায় ১২ জনেরও বেশি মুসলিম অনাহার বা ওষুধের অভাবে মারা গেছে। উলামাগণ বলছেন, চীনকে তাদের এই গুরুতর অপরাধের সাজা অবশ্যই একদিন ভোগ করতে হবে।
প্রতিবেদক : আবু-উবায়দা
তথ্যসূত্র :
1. Authorities in Xinjiang detain hundreds of villagers protesting COVID lockdowns
– https://tinyurl.com/3muhvrzn