সম্প্রতি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরপ্রদেশের উগ্র হিন্দুত্ববাদী যোগী সরকার। রাজ্যে সরকারি অনুদান ছাড়া যে সব মাদরাসা আছে, তাদের জরিপ হবে। সেখানে জানতে চাওয়া হবে, মাদরাসা চালানোর টাকা কোথা থেকে আসে, কী পড়ানো হয় সেখানে, কতজন শিক্ষক আছেন, কারা এই মাদরাসার সঙ্গে যুক্ত ইত্যাদি। আগামী ৫ অক্টোবরের মধ্যে জরিপ শেষ করে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।
উত্তরপ্রদেশে মোট ১৬ হাজার ৪৬১টি মাদরাসা আছে। যার মধ্যে ৫৬০টি মাদরাসা সরকারি অনুদান পায়। যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নতুন করে কোনো মাদরাসাকে সরকারি অনুদান দেয়া হয়নি। বরং মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে।
আসামে ইতোমধ্যেই একাধিক মাদরাসা বুলডোজার পাঠিয়ে ভেঙে দিয়েছে আরেক উগ্রবাদী হিন্দু হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরকার। এসব মাদরাসায় বাংলাদেশ থেকে কথিত সন্দেহজনক মানুষের আনাগোনা ও জিহাদিদের ট্রেনিং হবার প্রোপাগান্ডা চালিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। একই কাজ উত্তরপ্রদেশে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেননা উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথ চরম ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী। সে বহু আগে থেকেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাধারণ হিন্দুদের উসকে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে। এখন আসামের মতো উত্তরপ্রদেশেও সে মাদ্রাসায় বুলডোজার চালানোর অযুহাত তালাশ করছে বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা।
ভারতে মাদরাসায় নজরদারি করা ও জরিপ চালানোর বিষয়টিকে সাধারণ বিষয় হিসেবে দেখছেন না ইসলামি চিন্তাবিদরা। কেননা, এর আগে আসামে অবৈধ বাঙ্গালি তাড়ানোর জন্য তারা এনআরসি, সিএএ- এর মতো বহু প্রতারণামূলক জরিপ কৌশল অবলম্বন করে মুসলিমদের তাড়ানোর চক্রান্ত করেছে। এবার তারা জরিপের নামে আবারও নতুন কোনো ফন্দি এঁটে ইসলাম ও মুসলিমদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হিন্দুত্ববাদীদের জরিপের উপর কোনোভাবেই বিশ্বাস রাখতে পারছেন না মুসলিমরা। কারণ এরাই তুচ্ছ অজুহাতে মুসলিমদের হত্যা করছে, অবৈধ স্থাপনার অজুহাতে মুসলিমদের বাড়িঘর-দোকানপাট বুলডোজার চালিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অথচ একই স্থানে একসাথে হিন্দুদের বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা থাকলেও হিন্দুদের বাড়িঘর বহাল তবিয়তে রেখেই মুসলিমদেরটি ভেঙে দেয়া হয়েছে।
এভাবে হিন্দুত্ববাদীরা নানা কৌশলে ধীরে ধীরে ভারত থেকে মুসলিমদের বিতাড়নের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে বলে মনে করেন ইসলামি চিন্তাবিদগণ। এর আগে গবেষণাতেও উঠে এসেছে, ভারতীয় মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে হিন্দুরা। ধর্মীয় স্থাপনাকে কেন্দ্র করে এর আগেও মুসলিমদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। ১৯৯২ সালে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার সময় মুসলিমদের উপর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। একইভাবে বর্তমানে মাদরাসাকে কেন্দ্র করেও যেকোনো সময় হিন্দুরা মুসলিমদের ওপর গণহত্যার চক্রান্ত বাস্তবায়নে নামতে পারে বলে মনে করছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা। তাই আসন্ন বিপদের সময় নিজেদের পরিবার-পরিজনকে হিন্দুদের দয়ার ওপর ছেড়ে না দিয়ে প্রতিরোধের প্রস্তুতি গ্রহন করা।
তথ্যসূত্র :
——–
১। এবার উত্তর প্রদেশের মাদ্রাসার ওপর নজরদারির ঘোষণা
– https://tinyurl.com/2p89myfj