সিলেবাস থেকে কবি ইকবালকে নিয়ে লেখা অধ্যায় বাদ দিল ভারত

0
495

ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সিলেবাস থেকে কবি মোহাম্মদ ইকবালকে নিয়ে লেখা অধ্যায় বাদ দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। গত ২৬ মে শুক্রবার প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয় বলে কাউন্সিলের এক সদস্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি।

অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ওই সদস্য বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সিলেবাসে পরিবর্তনের একটি প্রস্তাব এসেছে। ওই প্রস্তাবে সিলেবাস থেকে ইকবালের ওপর থাকা একটি অধ্যায় বাদ দিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে অবিভক্ত ভারতের শিয়ালকোটে জন্ম নেওয়া ইকবাল বিখ্যাত ‘সারে জাহা সে আচ্ছা’ গানের রচয়িতা। আল্লামা ইকবাল নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত পাকিস্তানের এই জাতীয় কবি ‘পাকিস্তান ধারণার’ জন্মদাতা হিসেবেও পরিচিত। ভারতে ব্যাচেলর অব আর্টসের (বিএ) ষষ্ঠ সেমিস্টারের একটি পত্রের ‘মডার্ন ইন্ডিয়ান পলিটিকাল থট’ অধ্যায়ে এই কবির জীবনের নানান অংশ ও ভাবনা স্থান পেয়েছে। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সেটিকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এখন তাদের এ সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিষদে উত্থাপিত হবে, তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

সিলেবাসে ইকবালকে নিয়ে থাকা ‘ইকবাল: কমিউনিটি’ শিরোনামের অংশটি পর্যালোচনা করে দেখেছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।
ওই কোর্সে এ ধরনের যে ১১টি অংশ রয়েছে, তার লক্ষ্য হচ্ছে- আলাদা আলাদা চিন্তাবিদদের ধারণার ভেতর দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ও প্রেক্ষাপট অধ্যয়ন করা। কোর্সটিতে রামমোহন রায়, পণ্ডিতা রমাবাঈ, স্বামী বিবেকানন্দ, মহাত্মা গান্ধী ও ভিমরাও আম্বেদকের আলোচনাও আছে। বাকীদের সবকিছু স্বস্থানে বহাল থাকলেও মুসলিম হওয়ায় কবি মোহাম্মদ ইকবালের অংশটুকু বাদ দেওয়া হচ্ছে।

সিলেবাসে বলা হয়েছে, ভারতের রাজনৈতিক চিন্তার মধ্যে যে ঐশ্বর্য ও বৈচিত্র্য আছে, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আভাস দিতেই এই কোর্সটি বানানো হয়েছে। কোর্সটির উদ্দেশ্য হচ্ছে- এর মাধ্যমে আধুনিক ভারতীয় চিন্তা সম্পর্কে অর্থপূর্ণ বোঝাপড়ায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করা।

এদিকে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। তারা বলেছে, ভারত ভাগের জন্য ‘ধর্মান্ধ আধ্যাত্মিক তাত্ত্বিক’ ইকবালের দায় আছে।

অথচ, কিংবদন্তিতুল্য এই কবি ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশেই সমাদৃত। পাকিস্তান তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছে। অন্যদিকে পণ্ডিত রবিশঙ্কর ভারতীয় সৈন্যদের জন্য তৈরি করেছিল আল্লামা ইকবাল রচিত ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা’ কবিতাটির কুচকাওয়াজ সংস্করণের সুর। প্রখ্যাত এই কবি ১৯৩৮ সালে মারা যান। প্রথম জীবনে তিনি উর্দু ভাষায় কবিতা লিখতেন, পরে ফার্সি ভাষায়ও লেখালেখি করেছেন।

উল্লেখ্য, ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বছর দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে মোগল যুগ বাদ দিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন ইতিহাসবিদেরা। ইতিহাস থেকেও মুসলিমদের অস্তিত্ব মুছে দেওয়ার ধারাবাহিক হিন্দুত্ববাদী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এই কাজগুলো করা হচ্ছে বলেই মনে করে করেন বিশেষজ্ঞমহল।

তথ্যসূত্র:
——
1.Delhi University removes poet Mohd Iqbal, who wrote ‘Sare Jahan Se Acha’, from BA syllabus (Hindustan Times)
https://tinyurl.com/2ejt7yw4

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে হজযাত্রীদের ওপর হামলা
পরবর্তী নিবন্ধহেলমান্দ নদীর পানি নিয়ে ইরান-আফগান সীমান্তে তীব্র গোলাগুলি