সম্প্রতি উগান্ডার দি ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকায় বিশিষ্ট উগান্ডান লেখক ও কলামিস্ট অ্যান্ড্রু মুয়েন্ডার একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধটিতে লেখক সোমালিয়ায় আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীগুলোর ব্যর্থতা ও সেখানে প্রকৃত অর্থে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আশ-শাবাব ও সোমালিয়া নিয়ে এ যাবৎ লিখিত বাস্তবমুখী নিবন্ধনগুলির মধ্যে এটি অন্যতম।
সোমালিয়ায় দখলদার বাহিনীগুলো, বিশেষ করে তার নিজ দেশ উগান্ডান বাহিনীর দখলদারিত্ব ও ভুলে ভরা ধ্বংসাত্মক নীতির বাস্তবমুখী সমালোচনার বিপরীতে অত্র অঞ্চলে আশ-শাবাবের উপস্থিতি, শক্তি-সক্ষমতা ও আদর্শকে বাস্তবতার বিচারে মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তালিবানের উদাহরণ টেনে তিনি সোমালিয়া থেকে বিদেশি সকল বাহিনী প্রতাহার করে নেওয়াকেই বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী সমাধান হিসেবে তুলে ধরেছেন।
যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী এই প্রবন্ধটির বাংলা অনুবাদ আল-ফিরদাউসের পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো:-
হারাকাতুশ শাবাব যোদ্ধারা গত ২৬ মে সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় বুলো-মারির শহরে উগান্ডার সেনাঘাঁটিতে এক যোগে একটি বিধ্বংসী সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এই যুদ্ধে ১৩৮ (সঠিক সংখ্যা ২১৭ জন) সেনা সদস্যকে হত্যা এবং আরও অনেককে বন্দী করার দাবি করেছে দলটি।
উগান্ডার সেনাবাহিনী এখনো এই যুদ্ধে মৃত বা আহত এবং বন্দী সেনাদের সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে স্পষ্ট কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে ক্ষয়ক্ষতি তারা যত কম করেই দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন – এই অভিযান যে উগান্ডাকে সোমালিয়া ছাড়ার তাগাদা দিচ্ছে – এটাই সত্য। আমরা বিগত ১৬ বছর যাবত সোমালিয়ায় অবস্থান করছি। কিন্তু সেখানে আমরা একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছি। উল্টো আমাদের এই উপস্থিতি সামরিকভাবে শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক (আশ-শাবাব) গোষ্ঠীর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে হচ্ছে। যেই দলটি অগণিত উপজাতীয় মিলিশিয়াদের থেকে সমগ্র দেশকে মুক্ত করে এটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
বর্তমানে আশ-শাবাব সামরিকভাবে সামর্থ্যবান একটি ভূরাজনৈতিক পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই ধরনের একটি দলই একমাত্র দক্ষতার সাথে সোমালিয়ায় কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে এবং এই রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করতে সক্ষম।
সোমালিয়ার সমস্যা একটি ঘরোয়া রাজনৈতিক সমস্যা:
সোমালিয়ার যুদ্ধাবস্থা মূলত আন্তঃদেশীয় রাজনৈতিক সংকট। সোমালি অভিজাতদের ন্যূনতম একটি রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে, কিভাবে আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক শৃঙ্খলা তৈরি করা যায়। বাইরের কোনো দেশ এখানে কেবল এতটুকুই করতে পারবে যে, তারা উভয়পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনার জন্য সাহায্য করবে- এর বেশি কিছু না।
আরো একটি সমাধান হতে পারে- বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই সোমালিদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করতে ছেড়ে দেয়া, যতক্ষণ না একটি পক্ষ বিজয়ী হচ্ছে অথবা উভয় পক্ষ যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে সোমালিয়ায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজন হবে একটি শক্তিশালী সংগঠন এবং একজন প্রভাবশালী, শক্তিধর ও দক্ষ নেতার।
প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি এবং তার পরিকল্পনা প্রণয়নকারীরা ভাবছে, তারা আরো অর্থ বিনিয়োগ করে, প্রশিক্ষণ দিয়ে, সীমিত আকারে দূর্নীতি দূর করে এবং আরও সতর্কতার মাধ্যমে উগান্ডান সামরিক বাহিনী সম্প্রতি যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে তা এড়াতে পারে। এরূপ চিন্তাধারা হচ্ছে একটি মায়া, অবাস্তব।
যেই সেনাবাহিনী কোনো দেশে দখলদার শক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছে, তারা প্রতিরোধ বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণ এড়াতে পারে না। তাছাড়া এধরণের সেনাবাহিনী কখনোই এমন স্থানীয় প্রতিরোধ শক্তির সাথে দীর্ঘ সময় যুদ্ধ করে টিকে থাকতেও পারবে না, যারা বছরের পর বছর ধরে মাঠে লড়াই করছে। সম্ভবত মুসেভেনি এবং তার পরিকল্পনাকারীদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ ভিয়েতনাম এবং আফগানিস্তান থেকে ইরাক পর্যন্ত আমেরিকার এধরণের বহু যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে। কেননা এসব যুদ্ধের ফ্রন্টে আমেরিকার মতো বিশ্বের সর্বাধুনিক সরঞ্জামে সুসজ্জিত সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরও অতর্কিত হামলা থেকে তারা বাঁচতে পারেনি।
দখলদারিত্ব সমাধান নয় বরং সমস্যা:
একটি সেনাবাহিনী কতটা উন্নত প্রশিক্ষিত বা উচ্চ মনোবলের অধিকারী, কিংবা এর পিছনে কত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয় – এগুলো আসলে কোনো অর্থ বহন করে না, যদি সেই সেনাবাহিনী দখলদার শক্তির ভূমিকা অবতীর্ণ হয়। যেকোনো দখলদার শক্তি নিজেদের জন্য গুরুতর বিপদ ডেকে আনে। ভিনদেশি সেনা কখনোই অপর একটি দেশের সমাজের মানুষের গভীরে প্রবেশ করতে পারে না, ফলে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য অজানাই থেকে যায়। উপরন্তু তারা দখলকৃত সমাজের সাথে রীতিনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে প্রথমত ভুল বুঝাবুঝি এবং এরপর অবিচারে লিপ্ত হয়। অতএব দখলদার সেনাবাহিনী সর্বদা দখলকৃত সমাজের মানুষদের থেকে অতর্কিত হামলার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ঘোরে। জোর-জবরদস্তি করে হয়তোবা কিছুকাল তারা মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে, কিন্তু বিদ্রোহী মানুষদের একত্রিত হয়ে পাল্টা ধ্বংসাত্মক হামলা পরিচালনা করা – এটি খুবই স্বল্প সময়ের ব্যাপার।
সোমালিয়ায় উগান্ডা সহ দখলদারিত্বে জড়িত প্রত্যেকটি দেশকেই আফগানিস্তানে মার্কিন-ন্যাটো জোটের ২০ বছরের দখলদারত্ব থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
আমেরিকানদের আছে বা তাদের দাবি হল, বিশ্বের সেরা প্রশিক্ষিত, সুসংগঠিত, সজ্জিত, সেরা অনুপ্রাণিত, এবং সেরা নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত বিশাল সেনাবাহিনীর অধিকারি তারা। এরাই আফগানিস্তানকে “পুনঃনির্মাণ” করতে $২.১ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ৩ লাখের শক্তিশালী আফগান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সজ্জিত করতে ৮০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। আর তাদের বিশাল এই বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিল – কম প্রশিক্ষিত, অপ্রস্তুত, আর্থিকভাবে দুর্বল এবং অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ও স্বল্প সরঞ্জামে সজ্জিত তালিবান যোদ্ধারা।
কিন্তু ২০ বছর পর কি ঘটলো?
যে আমেরিকা তালিবানদের ক্ষমতা থেকে সরাতে বিশাল সামরিক প্রস্তুতি নিল ও বিপুল অর্থ খরচ করল এবং আফগানিস্তান দখল করে নিলো, দিন শেষে তালিবানরা সেই আমেরিকাকেই ‘কিক আউট’ করে দিল। তাঁরা পূনরায় আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিলো এবং সেখানে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা করলো।এই যুদ্ধে বিশ্বকে দেখানো আমেরিকার “আঘাত ফিরে আসার” ভয়ের কোনটাই বাস্তবে ঘটেনি। তারা বিশ্ব নেতাদের বুঝাতো “ইসলামি জঙ্গিরা” বিশ্ব দখল করতে চায়, খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমেরিকা বিশ্বব্যাপী অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপরোক্ত উদ্বেগজনক দাবিগুলোর পাশাপাশি কাল্পনিক অনেক মিথ্যা রটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো। যাইহোক, তাদের এসব কিছুই অবশেষে বিফলে গেছে।
আশ-শাবাবের প্রতি আমাদের ধারণা ত্রুটিপূর্ণ, যা পরিবর্তন করতে হবে:
সোমালিয়ায় উগান্ডার সেনাবাহিনী আরো সৈন্য, আরো সরঞ্জাম পাঠিয়ে আরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করতে পারে। উগান্ডা পারে আরো নজরদারির প্রযুক্তি এনে আশ-শাবাবকে মনিটরিং করতে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে। কিন্তু আগামী শত বছরেও আশ-শাবাবকে তারা পরাস্ত করতে পারবে না। আমাদের উচিত আশ-শাবাবকে পশ্চিমা বিশ্বের দেয়া “টেররিস্ট”, “ইসলামি চরমপন্থি” কিংবা “ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী” বলে আখ্যা দেয়ার বিষয়টি পরিহার করা। এগুলো আমাদেরকে বাস্তবতা বুঝা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এসব বিশেষণ প্রয়োগের ফলে আমরা ভুলে যাই যে, আশ-শাবাব ইসলামিক দল, যারা ধর্মকে আঁকড়ে ধরেই একটি আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ আমেরিকার রাজনীতিতে গোঁড়া খ্রিষ্টবাদের উপস্থিতি থাকা স্বত্ত্বেও কেউ সেটাকে কটাক্ষ করে না, এর কারণে তাদেরকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার কথাও কেউ বলে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে একই কারণে আশ-শাবাবকে কটাক্ষ করা হচ্ছে; তাদেরকে সন্ত্রাসী তকমা দেওয়া হচ্ছে, যারা কিনা ইসলামের জন্য যুদ্ধ করছেন। আশ-শাবাবকে টেররিস্ট আখ্যা দিয়ে আমরা মূলত তাদের সাথে সোমালিয়া পুনর্গঠনের কাজে অংশীদার হবার সুযোগকে হাতছাড়া করছি।
এখন কেউ কেউ এই দাবি করতে পারেন যে, আমেরিকায় খ্রিস্টানরা তাদের অধিকার শান্তিপূর্ণভাবে আদায় করে, যখন আশ-শাবাব তা করে সহিংসতা ব্যবহার করে। প্রথমত এই ধারণাটাই ঐতিহাসিকভাবে ভুল বা ইতিহাস জানার কমতি। (আশ-শাবাব একসময় এই রাষ্ট্রটি পরিচালনা করেছে, কিন্তু পশ্চিমারা দেশটি দখল করে তাদের পুতুল সরকার দ্বারা এখনও দেশটিতে দখলদারিত্ব কায়েম করে রেখেছে)
কয়েক দশক ধরে, আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের পক্ষে কট্টর ডানপন্থী আন্দোলনগুলি কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জা এবং সিনাগগে হামলা ও বোমা বিস্ফোরণ করেছে। এর মাধ্যমে তারা যা চায় তা পেতে সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। এমন কর্মকাণ্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই তাদের সন্ত্রাসী ঘোষণা করেনি, নিপীড়ন করেনি বা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বাতিল করে দেয়নি। কিন্তু সেই একই আমেরিকার দৃষ্টিতে “সশস্ত্র রাজনৈতিক ইসলাম” এতটাই সহিংস যে, এটি রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ বাতিল। আর এই তত্ত্ব বা বিশ্বাসটি পশ্চিমাদের প্রচারনার একটি অন্যতম হাতিয়ার।
(মুসলিমরা যখন ৯০-এর দশক থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সোমালিয়ায় ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে শুরু করল, তখন এই আমেরিকার সামরিক ও আর্থিক সহায়তায় সোমালি রাষ্ট্রব্যাবস্থাকে ধ্বংস করতে যুদ্ধ শুরু করে ইথিওপিয়ায়। তখন তো আশ-শাবাব খৃষ্টানদের মতো সন্ত্রাসীর আশ্রয় নেয় নি, তাহলে কেন স্বাধীন একটি ইসলামি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে যুদ্ধ শুরু করল আমেরিকা? বরং আমেরিকা যখন এই যুদ্ধ শুরু করলো তখন আশ-শাবাব প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করল।)
যাইহোক, দখলদারিত্ব কোন সমাধান নয়, বরং এর অবসানই হচ্ছে সমাধান।
তালিবানদেরও একইভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল। কিন্তু আমেরিকা যখন দেখল তাদের এসব কৌশলে আর কাজ হচ্ছে না, তখন আমেরিকা বাধ্য হয়েছে তালিবানদের সাথে আলোচনার টেবিলে বসতে এবং আফগানিস্তান থেকে দখলদারত্বের অবসান ঘটাতে।আমাদেরকে (উগান্ডা) সোমালিয়া থেকে প্রত্যাহার করতে হবে:
বছরের পর বছর ধরে উগান্ডার সামরিক বাহিনী ইউরোপীয় এবং আমেরিকানদের সাথে যৌথভাবে সোমালি যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে প্রস্তুত করেছে। কিন্তু এক দশকের মাথায় প্রমাণিত হয়, এই পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ পুরোপুরি বৃথা গেছে। সোমালি যুবকদের অনেকেই উগান্ডা থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে সরাসরি আশ-শাবাবে যোগদান করেছেন। অনেকেই সেনাবাহিনী ছেড়ে নিজের গোত্রে চলে গেছে। মূলত, আমরা যে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য এতো কিছু করছি, দিন শেষে দেখা যাচ্ছে আমরাই তাদেরকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।
আর যারা আশ-শাবাবে যোগ দেয় নি বা সামরিক বাহিনী ত্যাগ করে নি, তারাও আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অক্ষম প্রমাণিত হয়েছে। আমরা দেখেছি, একটি সুপ্রশিক্ষিত, সুসজ্জিত এবং তুলনামূলক উচ্চ বেতনভোগী ৭৩৬ জনের শক্তিশালী একটি জাতীয় সেনা ইউনিটকে কিভাবে হালকা অস্ত্রে সজ্জিত আশ-শাবাবের মাত্র ৩০ জন যোদ্ধা ছত্রভঙ্গ এবং ধ্বংস করে দিয়েছে।
যুদ্ধ করার জন্য প্রতিটি সেনাবাহিনীর একটি আদর্শিক লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকা প্রয়োজন। যেখানে সোমালি ন্যাশনাল আর্মির নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই; অপরদিকে আশ-শাবাব যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে পুরো সোমালিয়াকে ইসলামি শাসনের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে। এটিই শাবাবকে সোমালি আর্মি থেকে আলাদা করেছে।
এই মূহুর্তে সোমালিয়ায় দরকার শৃঙ্খলা। আমার কাছে মনে হচ্ছে, কেবলমাত্র আশ-শাবাবেরই এটি পূর্ণরূপে নিশ্চিত করার সক্ষমতা আছে।
আর সেজন্যই আমাদের (উগান্ডা) উচিত সোমালিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া এবং সোমালিয়াকে আশ-শাবাবের হাতে ছেড়ে দেওয়া। যেমনটি করেছিল আমেরিকা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে, ফলে দেখা গেছে স্বল্প রক্তপাতে তালিবানরা পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
বাস্তবতা এখন সোমালিয়া ও পূর্ব-আফ্রিকা অঞ্চলের জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আশ-শাবাবের শরয়ী শাসন, আদল, ইনসাফ ও ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা তাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমাদের তাঁবেদার প্রশাসনের ব্যর্থতা।
এছাড়া, আশ-শাবাব ইতোমধ্যে আদর্শিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই সফলতার প্রমাণ রেখেছেন। এমনকি শাবাবের শরয়ী আদালতে বিচার পেতে মুগাদিশু সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকেও বিচারপ্রার্থীরা আশ-শাবাবের দ্বারস্থ হচ্ছেন। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে শাবাব কর্তৃপক্ষ অভাবি ও দরিদ্র জনগণের মাঝে সাহায্যসামগ্রী বিতরণ করছে, যার জন্য তারা আলাদা বাজেট বরাদ্দ রাখছেন। তাছাড়া নিজেদের শরিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে আশ-শাবাব কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ-কালভার্টও নির্মাণ করছে। খরাপীড়িত অঞ্চলে তারা কৃত্রিম জলাশয় নির্মাণ ও খাল খনন করছেন আলাদা বাজেট বরাদ্দ দিয়ে।
নিজস্ব অঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও তারা ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন। জনগণের সার্বিক কল্যাণ ও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তারা এমনকি নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা রাজধানী মোগাদিশু শহরেও মাদক কারবারি ও মাফিয়া সন্ত্রাসীদের দমনে ঘোষণা দিয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন।
সোমালিয়ার বাইরে, উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তের দুই দেশ ইথিওপিয়া ও কেনিয়ার জনগণকেও তারা শরয়ী শাসনের সুশীতল ছায়ায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। এমনিতেই ঐ দুই দেশ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই মুসলিম ভূমি সোমালিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল জোরপূর্বক দখল করে রেখেছিল।
আর ইডেন সাগরের অপর পারে ইয়েমেনের যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষপীড়িত মুসলিমদের প্রতিও আশ-শাবাব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
একদিকে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব আশ-শাবাবকে জঙ্গি-সন্ত্রাসীসহ মানবতাবিরোধী বর্বর হিসেবে উপস্থাপনের জোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। তারা তাদের মিডিয়া-মেশিন ব্যবহার করে আশ-শাবাবকে এক ভয়ংকর শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করে জনবিচ্ছিন্ন করে দিতে ব্যাপক প্রোপ্যাগান্ডা চালিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, জনগণ শাবাবের উপর ভরসা করে ও তাদেরকে ভালবাসে। সোমালিয়ার বড় বড় উপজাতী গোষ্ঠীগুলো আশ-শাবাবের হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়াটা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। ফলে, তথাকথিত সেক্যুলার সাংবাদিকরাও এখন বিশ্বের সামনে পশ্চিমাদের ব্যর্থতা ও আশ-শাবাবের সক্ষমতা তুলে ধরতে কলম ধরা শুরু করেছে।
তথ্যসূত্র:
1. Time to get out of Somalia
– https://tinyurl.com/35b92dvk
Assalamualaikum Vai,
AFN Radio ki bondho Hoye gace naki?
We pray for you.
বর্তমান বিশ্ব যতগুলো সঠিক জিহাদী সংগঠন রয়েছে সবগুলোর পরিচয় পর্ব ও ইতিহাস তুলে ধরার আবদার রইলো।