‘আমাদের সংগ্রাম ছিল ইসলামী শরিয়ার জন্য’

ত্বহা আলী আদনান

0
1422

ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান প্রশাসনের সর্বোচ্চ নেতা আমিরুল মুমিনিন শায়খুল হাদীস মৌলভি হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (হাফি.) ১৪৪৪ হি. সনের পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে একটি বার্তা প্রকাশ করেছেন। যেখানে তিনি মুসলিম বিশ্বের মুসলমানদের বিশেষ করে ইমারাতে ইসলামিয়ায় বসবাসরত জনগণকে ঈদের শুভেচ্ছা এবং মোবারকবাদ জানিয়ে মহান রবের দরবারে কল্যাণের প্রার্থনা করেছেন।

ঈদ উপলক্ষে দেয়া এই বার্তায় আমিরুল মুমিনিন বলেন, এই ঈদ এমন এক সময়ে আসছে যখন দেশে পূর্ণ শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রয়েছে, ইসলামী শরিয়াহ্ ব্যবস্থা বলবৎ রয়েছে এবং সে অনুযায়ী আইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এসময় তিনি সারা বিশ্ব বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে আফগানিস্তানের সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চান বলে অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ইমারাতে ইসলামিয়া প্রশাসন চায় বিশ্বের সাথে, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সাথে ভালো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। তবে আমরা যেমন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না, তেমনি অন্যকেও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার জন্য বলি এবং কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা না করতে বলি।”

আফগানিস্তানে বছরের পর বছর ধরে চলমান যুদ্ধের শেষে দেশে একটি ইসলামি প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা যার জন্য জিহাদ করেছি এবং অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি তা হল ইসলামি শরিয়ার বাস্তবায়ন এবং একটি ইসলামী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা। আলহামুদুলিল্লাহ্, এই লক্ষ্যটি এখন বাস্তবায়িত হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইমারাতে ইসলামিয়া প্রশাসনের দ্বারা আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আরও শক্তিশালী হয়েছে। দেশের শুল্ক ও রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে খনিজ সম্পদ, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জমি, বন এবং অন্যান্য জাতীয় সম্পদ যুদ্ধবাজদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এখন এসব কিছু রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে সুরক্ষিত আছে।”

বার্তায় তিনি সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমি সমগ্র ইসলামী উম্মাহকে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান ও এর জনগণের কল্যাণের জন্য দোয়া করতে বলি, যাতে আল্লাহ আমাদের সবাইকে দুনিয়া ও আখিরাতে সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি দান করেন।”

মহিলাদের অধিকার সম্পর্কে তিনি বলেন, “ইমারাতে ইসলামিয়া প্রশাসন মহিলাদের জোরপূর্বক বিবাহের মতো ঐতিহ্যগত নিপীড়নের অবসান ঘটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ইসলামী আইন দ্বারা মহিলাদের জন্য নির্ধারিত অধিকারগুলি সুরক্ষিত করা হয়েছে। এমনিভাবে ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী নারীদের আরও সমৃদ্ধ জীবনযাপন ও উন্নতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

ইমারাতে ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠার পর দেশে কিসাস ও রজমের মতো কিছু শরিয়াহ্ আইন পুরোপুরি ভাবে কার্যকর করতে কিছুটা সময় নিয়েছিল তালিবান প্রশাসন। বিষয়টি নিজ বক্তৃতায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শরিয়ার বিধান, যা কিছু সময়ের জন্য আমাদের দেশে প্রয়োগ করা সম্ভব ছিল না, এখন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।”

তালিবান ক্ষমতায় আসার পর, অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক ও সাংবাদিকরা মিডিয়া পাড়ায় এই বলে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল যে, খুব শীগ্রই আফগানিস্তান একটি বড় অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হবে। কিন্তু বাস্তবে এমনটি ঘটেনি।
এবিষয়ে আমিরুল মুমিনিন বলেন, আল্লাহর রহমতে আফগানিস্তান নিয়ে বিশ্বের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণিত হয়েছে, তাদের সমস্ত প্রোপাগান্ডা ব্যর্থ হয়েছে। আফগানিস্তান এখন একটি অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও শক্তিশালী দেশ। আমরা দেশে এখন বিভিন্ন নির্মাণ ও অর্থনৈতিক প্রকল্পের সফলতা প্রত্যক্ষ করছি।

আমিরুল মুমিনিন আরও বলেন, কয়েক দশক ধরে চলা যুদ্ধ শত সহস্র মানুষকে অনাথ, বিধবা এবং দরিদ্রতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইমারাতে ইসলামিয়া প্রশাসন এসমস্ত লোকদের পাশে দাড়াতে এবং অধিকার সুরক্ষিত করতে বদ্ধপরিকর হয়ে কাজ করছে।

আমিরুল মুমিনিন আরও যোগ করেছেন যে, “আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়াই ইমারাতে ইসলামিয়া প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আর তাদের অব্যাহত এই প্রচেষ্টার ফলে দেশে পোস্ত চাষ বিলুপ্ত হয়েছে, কৃষকরা বিকল্প চাষে মনোনিবেশ করছেন এবং বৈধ চাষাবাদের দিকে ঝুঁকেছেন।”

আমিরুল মুমিনিন আফগানিস্তানে বিদ্যমান ইসলামী শরিয়াহ্ ব্যবস্থাকে সকলের সম্মিলিত ব্যবস্থা বলে অভিহিত করেন।এরপর তিনি বলেন, “তাই এই ব্যবস্থাকে রক্ষা করা আমাদের সকল নাগরিকের দায়িত্ব। তাই আসুন একে অপরের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করি। আসুন ষড়যন্ত্র নির্মূল করি। আসুন নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির পরিবেশকে আরও প্রসারিত করতে একসঙ্গে কাজ করি।”

আমিরুল মুমিনিন তাঁর বার্তার শেষাংশে মুসলিম বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি ফিলিস্তিন বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “আমরা ফিলিস্তিনি নারী, শিশু এবং নিরাশ্রয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নৃশংস কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে আমরা এই আশা করি যে, অন্য দেশগুলোও এবিষয়ে বাস্তবসম্মত প্রতিক্রিয়া জানাবে।”

তিনি সুদানের জনগণ এবং প্রশাসনকে তাদের মতভেদ দূরে সরিয়ে ভ্রাতৃত্বের জন্য একসাথে কাজ করতে বলেন। তিনি বলেন, ইসলামী উম্মাহর সমস্যার সমাধান ঐক্য ও সংহতির উপর নির্ভর করে।

সর্বশেষ তিনি মহান রবের কাছে মুসলিম উম্মাহর জন্য এই দো’আ করেন যে, “আল্লাহ তাআ’লা যেন আমাদের সবাইকে ইসলামী শরিয়াহ্ ব্যবস্থার সুশীতল ছায়াতলে ঈদ কাটানোর তৌফিক দান করেন। আমিন”

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআল-ফিরদাউস নিউজ বুলেটিন || জুন ৪র্থ সপ্তাহ, ২০২৩ঈসায়ী ||
পরবর্তী নিবন্ধকারাবন্দীদের জন্য ইমারতে ইসলামিয়্যার প্রশংসনীয় উদ্যোগ