অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচারে মুসলিম গণহত্যা চালিয়েই যাচ্ছে। গত ২৪ দিন ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮ হাজার ৬৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছে অন্তত ২০ হাজার ২৪২ জন। নিহতদের মধ্যে ৩,৫৯৫ জনই শিশু, ১,৮০০ নারী এবং ৩৯৭ জন বৃদ্ধা রয়েছেন।
গত সোমবার (৩০ অক্টোবর) ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ্য করা হয়েছে। সূত্রমতে, ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ-সংঘাতে যত শিশু নিহত হয়েছে গাজায় মাত্র তিন সপ্তাহে এর চেয়ে বেশি ফিলিস্তিনি শিশুকে খুন করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত ২৯ অক্টোবর রাতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় হতাহত শিশুদের একাংশ।
https://twitter.com/Timesofgaza/status/1718907654741872940
প্রতি মূহুর্তে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে ফিলিস্তিন। ইসরায়েলি বাহিনী এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৭ টি মসজিদ ও ৭টি গির্জা ধ্বসিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি ২০৩টি স্কুল ও ৮০টি সরকারি অফিসও সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে। এছাড়াও, নির্বিচারে বোমা হামলার কারণে ২ লাখ ২০ হাজার আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ হাজার ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্রতায় গাজায় বন্ধ হয়ে গেছে ইন্টারনেট এবং মোবাইল যোগাযোগ পরিষেবা। এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরে গাজায় স্থল অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ট্যাংক, সাজোয়া যান নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার রাস্তা-ঘাটে চালাচ্ছে হামলা। সামনে যা পাচ্ছে তাই গুড়িয়ে দিচ্ছে তারা। একদিনে ছয় শতাধিক হামলা চালানোর কথা নিজেরাই শিকার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
তবে কাসসাম ব্রিগেডের মুজাহিদরাও ইসরায়েলি বাহিনীর মোকাবেলায় তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। এতে বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এর মধ্যেই আজ (৩০ অক্টোবর) গাজার অন্যতম প্রধান হাসপাতাল আল কুদস থেকে সবাইকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। হাসপাতালটিতে যেকোনো মুহূর্তে বোমা হামলা চালাবে ইসরায়েলি বাহিনী। ইতোমধ্যেই হাসপাতালটির আশপাশে ব্যাপক হারে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন আছেন শত শত ফিলিস্তিনি। তাদেরকে এই মুহূর্তে এখান থেকে সরিয়ে নেয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।
অন্যদিকে পশ্চিম তীরেও থেমে নেই ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসন। অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রতিদিনই চলছে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইয়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযান ও জায়নবাদী ইহুদিদের সম্মিলিত হামলা। ফলে পশ্চিম তীরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১২ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১,৯০০ জন।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনের ফলে মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে খাবার, পানি ও বিদ্যুৎ নেই বেশ কয়েক দিন ধরেই। ভেঙে পড়েছে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ সংকট মোকাবেলায় পশ্চিমা বিশ্বের তাঁবেদার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েল কোনো তোয়াক্কা না করে তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
উল্টো গাজায় আরও তীব্র ও সর্বাত্মক হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলকে এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পূর্ণ সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু মুসলিম বিশ্বকে এখনো ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মৌখিক বিবৃতি ও ত্রাণ সহযোগিতা ছাড়া কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
তথ্যসূত্র:
——
1. LIVE UPDATES
– https://tinyurl.com/68z8c28r
2. The Take: With communications cut off, Gaza goes dark amid Israeli attacks
– https://tinyurl.com/4f4j69wm
3. UPDATE
– https://tinyurl.com/2sjjaa64
4. The Take: Israel’s ground war on Gaza begins
– https://tinyurl.com/26sd8rjt
5. জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ইসরাইলের
–https://tinyurl.com/5h6m3f55