ঈদ বার্তায় মুসলিমদের প্রতি শাইখ হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদার আহ্বান

0
388

ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ আমীর শায়খুল হাদীস মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদা হাফি. পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দীর্ঘ একটি বার্তা প্রকাশ করেছেন। বার্তার শুরুতেই তিনি হামদ-সানা শেষে আফগানিস্তান সহ সারা বিশ্বের মুমিন মুসলমান ও মুজাহিদদের প্রতি সালাম জানিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের অগীম শুভেচ্ছা জানান। সেই সাথে তাদের রোযা, তারাবীহ, সাদাকাতুল ফিতর, নামায এবং অন্যান্য শারীরিক ও আর্থিক ইবাদাতগুলো যেনো আল্লাহ তাআ’লা কবুল করেন, তার জন্য দোয়া করেন। সেই সাথে কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে সাদাকাতুল ফিতরের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।

একই সাথে তিনি শরিয়াহ্ ব্যবস্থার ছায়াতলে বসবাস করতে পারায় মহান রবের শুকরিয়া আদায় কারেন। সেই সাথে জনগণকে আল্লাহ তাআ’লার নেয়ামতগুলোর শুকরিয়া আদায় করার আহ্বান জানান। এসময় তিনি আলেম ও মসজিদের ইমামদের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের উপর সবচে গুরত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে জনসাধারণকে আল্লাহর ইবাদতে নিবদ্ধ রাখা, সন্তানদেরকে আকীদা, ইসলাহ, আমল ও নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া। বিশেষ করে নব্য সব ফিতনার বিষয়ে সচেতন করা এবং বাঁচিয়ে রাখা।

এরপর তিনি আফগানিস্তানে ইসলামি শরিয়াহ্ আইন বাস্তবায়ন ও তাওহীদের পতাকাকে সমুন্নত রাখা এবং দেশ থেকে সকল প্রকার নিষ্ঠুরতা দূর করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এই লক্ষ্যে আপোষহীন শরিয়াহ্ আদালত প্রতিষ্ঠা এবং উলামদের নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে কাউন্সিল গঠনের কথা বলেন।

এমনিভাবে তিনি নতুন প্রজন্মের দ্বীনী শিক্ষার পাশাপাশি যুগোপযোগী জাগতিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান এই লক্ষ্য দেশের সমস্ত প্রদেশ এবং জেলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জোরদার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর অভিভাবকদের উপর কর্তব্য হচ্ছে, সন্তানদের জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া।

এমনিভাবে তিনি দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, কয়েক যুগ পর আল্লাহ তাআ’লার রহমতে এখানে বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন জনগণের উচিত এই শান্তিকে রক্ষা করা এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে এতে সহায়তা করা।

এরপর তিনি দেশের অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ইমারাতে ইসলামিয়া সরকার অভাব ও দরিদ্র্যতা থেকে জনগণকে বের করে আনতে এবং তাদেরকে হাতে জীবাকা নির্বাহের মাধ্যম ধরিয়ে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে কলকারখানা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসময় তিনি জনগণকে অলসতায় গা না ভাসিয়ে ব্যক্তিগত এবং সম্মিলিতভাবে কর্মসংস্থান তৈরির প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন। বিভিন্ন কোম্পানি তৈরির পাশাপাশি খামার, কৃষি ও শিল্পের প্রতি জনগণকে মনযোগী হতে বলেন। সেই সাথে অবৈধ কাজ পরিহার করে হালাল উপার্জনের পরামর্শ দেন এবং অন্যের উপর নির্ভর না হওয়ার কথা বলেন।

প্রতিবেশি দেশগুলোর সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা এই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে ইসলামের আলোকে ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক কামনা করি। অন্য দেশগুলোরও উচিত এই নীতিতে আস্থার পরিবেশ ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নমূলক কাজেে এগিয়ে আসা।

তিনি তাঁর বার্তায় ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে বলেন, ফিলিস্তিন সমস্যা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সমস্যা। মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান হচ্ছে, গাজায় চলমান অত্যাচার ও আগ্রাসন বন্ধে বাস্তবিক পদক্ষেপ নেওয়া। মুসলিমদের দায়িত্ব হচ্ছে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দেওয়া এবং সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বাত্মক সহায়তা করা।

সবশেষ তিনি ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রসাশনিক কর্মকর্তা এবং মুজাহিদদের প্রতি ১৭টি উপদেশ ও নির্দেশনা দেন।

তিনি সমস্ত দায়িত্বশীলদেরকে নিজের কাজের প্রতি যত্নবান ও আগ্রহী হতে বলেন। মতানৈক্য এবং অহংকারবোধ এড়িয়ে নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও আন্তরিকতা বজায় রাখতে বলেন।

জনগণের প্রতি কঠোর না হয়ে শরিয়াহ্ ও ইনসাফভিত্তিক সামাজ বিনির্মানে কাজ করার পরামর্শ দেন। সেই সাথে নিজেদের কাজের আত্মসমালোচনা ও সংশোধনের পরামর্শ দেন।

কর্মকর্তাদেরকে তাকওয়া, বিশ্বস্ততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়ার পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে যেনো জাতি, গোত্র, ভাষা এবং কোনো ধরনের সম্পর্কের চিন্তা না আসে। কোনো প্রকার বিভেদ ও বৈষম্য না রেখে যাকে যেই অঞ্চলের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হবে, তিনি সে স্থানে দায়িত্ব পালন করবেন। কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দিবেন না, কাউকে বন্দী করতে হলে আগে তদন্ত করে অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। কেউ প্রয়োজনের মুখাপেক্ষী হলে তার সেবা ও সাহায্যে বিলম্ব করবেন না।

দৈনন্দিন আমল, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করুন, কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়ুন, দিনে অন্তত একবার কুরআন তিলাওয়াত করুন।

কোনো বড় পদে খুশি হবেন না এবং পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলে মনঃক্ষুণ্ন হবেন না। অর্থাৎ পদের প্রতি আসক্ত হবেন না। অতীতের কুখ্যাত লোকদের থেকে শিক্ষা নিন। মন্দ এবং সন্দেহ সৃষ্টিকারী কাজ এড়িয়ে চলুন, নিজের মাঝে সালাফদের নৈতিকতা গড়ে তুলুন।

বার্তার শেষ পর্যায়ে তিনি ধনীদের প্রতি আহ্বান করেন, তারা যেনো এই শুভ দিনগুলোতে দরিদ্র আফগানিদের স্মরণে রাখেন। প্রত্যেকে যেনো নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে সহযোগিতা করেন।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ৯ এপ্রিল, ২০২৪
পরবর্তী নিবন্ধদারসে রমাদান।। দারস-২৮ (শেষ দারস)।। ….. يا حيُّ يا قيُّوم দোয়া এবং একটুখানি তাদাব্বুর।।