
সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুকে কার্যত অবরুদ্ধ করে ফেলেছে হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন। রাজধানীর সাথে সংযোগকারী সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়ে নিয়মিত টহল দিতেও দেখা৷ যাচ্ছে আশ-শাবাব যোদ্ধাদের।
হারাকাতুশ শাবাব মুজাহিদিনরা গত ২০ ফেব্রুয়ারী থেকে সোমালিয়ায় বড়ধরণের সমন্বিত অপারেশন শুরু করেছে। মুজাহিদদের এসকল অপারেশনে প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছে মধ্য শাবেলি, হিরান ও রাজধানী মোগাদিশুর উপকন্ঠ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো। এই অভিযান শুরুর পর থেকে গত ৮ মার্চ পর্যন্ত দলটির মুজাহিদিনরা গুরুত্বপূর্ণ ১৮টি শহর এবং আরও কয়েক ডজন উপশহর ও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এসময় মোগাদিশু সরকারি বাহিনী ও মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর বৈঠক চলাকালে সামরিক কম্পাউন্ডে ২০ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করেছে আশ-শাবাব।
এই বিজয়গুলোর পর, আশ-শাবাব মুজাহিদিনরা গত সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ কোনো শহরের নিয়ন্ত্রণ না নিলেও, রাজধানী মোগাদিশুকে ঘিরে ফেলার কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই সময়টাতে মুজাহিদিনরা রাজধানী মোগাদিশুর সাথে সংযোগকারী সড়কগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে নিজেদের অবস্থান মজবুত করেছেন এবং সামরিক পোস্ট বসিয়ে নিয়মিত টহল দিতেও দেখা গেছে আশ-শাবাব যোদ্ধাদের।
এমন পরিস্থিতিতে, আশ-শাবাবের অগ্রগতি রুখতে শহরের উপকণ্ঠের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্রিজ বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে মোগাদিশুর বাহিনী। সেই সাথে আন্তর্জাতিক জোট বাহিনীর সহায়তায় আশ-শাবাব যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে ১০০ এরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে মোগাদিশু বাহিনী। মোগাদিশু বাহিনী তার আন্তর্জাতিক মিত্রদের সহায়তায় তীব্র এই আক্রমণ চালানো সত্বেও একটি শহরও আশ-শাবাব থেকে পুনরুদ্ধার করতে পারি নি। বিপরীতে আশ-শাবাব এসকল এলাকায় তাদের অবস্থান ও নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করেছেন। সেই সাথে রাজধানী মোগাদিশুর দিকে আশ-শাবাব তাদের অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে।
সেই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (১৫ মার্চ) সকালে, রাজধানী মোগাদিশু থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত লাফোল এবং হাও আবদি এলাকায় প্রবেশ করেছেন হারাকাতুশ শাবাব মুজাহিদিনরা। একই দিন সকালে, মুজাহিদিনরা মধ্য ও নিন্ম শাবেলি রাজ্যের মধ্যে সংযোগকারী আওধেগল শহর ও সুমাদালে শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। বর্তমানে বিজিত এই দু’টি শহর থেকে মুজাহিদিনরা রাজধানীর নিকটতম শহর আদালের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
এমনিভাবে, শনিবার সকাল থেকে মোগাদিশুর দক্ষিণ এবং উত্তর দিক থেকেও মুজাহিদদের দলগুলো শহরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছেন। এই মুজাহিদিনরা রাজধানী থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণের কৌশলগত নদী-পারবর্তী শহর আউদাগলীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এই মুজাহিদিনরা মোগাদিশু বাহিনীকে সমুদ্রের দিক থেকে অবরোধের লক্ষ্যে বিভিন্ন ফ্রন্টে আক্রমণ তীব্রতর করেছেন।
এদিকে ১৪ তারিখ রাত থেকে, রাজধানী কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মোগাদিশু বাহিনীর নিরাপত্তা চৌকিগুলো লক্ষ্য করে আইইডি বিস্ফোরণ ও গেরিলা হামলা চালাতে শুরু করেছে আশ-শাবাব। শাবাবের এসকল হামলায় সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোগাদিশুর দারু সালাম পাড়া ও সিলশা বিয়াহা এলাকায় অবস্থিত শত্রু চেকপোস্টগুলো।
সবশেষে তথ্য অনুযায়ী, আশ-শাবাব প্রশাসন কেন্দ্রীয় শহরগুলোতে বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে ইতিমধ্যেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এই লক্ষ্যে মুজাহিদিনরা মোগাদিশু সরকারের সাথে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ অনেক কর্মকর্তা, সৈন্য এবং উপজাতি নেতাদের সাথে আলোচনা শুরু করেছেন, যাতে বড় ধরনের সংঘর্ষ ছাড়াই শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যায় এবং এই কর্মকর্তারা আশ-শাবাবের শাসন মেনে নিয়ে তাদেরকে সহায়তা করেন।
উল্লেখ্য যে, গত এক মাস আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে মোগাদিশু সরকার এই গল্প প্রচার করছিল যে, আশ-শাবাব চিরতরে পরাজিত হবে। কিন্তু এখন মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে নাটকীয় পরিবর্তনের পর, মোগাদিশু সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীরা বলছে, “আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করব, আমরা আত্মসমর্পণ করব না, কেননা হেরে গেলে আমাদের কোথাও যাওয়ার নেই।”
তথ্যসূত্র:
١. مقاتلو حركة الشباب المجاهدين يسيطرون بالكامل على مديرية أوديقلي عقب هجوم كاسح
– https://tinyurl.com/4ny7wspc
٢. سيطرة مقاتلي حركة الشباب المجاهدين على منطقة سوماذالي
– https://tinyurl.com/338v6kzm