ইমারতে ইসলামিয়া শাসনে নারী অধিকার ও পশ্চিমা দখলদারিত্বে নারী স্বাধীনতার বাস্তবতা

0
0

আফগানিস্তানে ইমারতে ইসলামিয়া সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই দেশটির নারীরা রাজনৈতিক বিতর্ক এবং দর কষাকষির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব, আফগান নারীদের জীবন-আচার কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

অপরদিকে আফগানিস্তানের বাস্তবতা পশ্চিমা মিডিয়ায় প্রচারিত প্রোপাগান্ডার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র প্রতিফলিত করে। অথচ মার্কিন দখলদারিত্ব দুই দশক ধরে আফগান নারীদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখানে ইমারতে ইসলামিয়া সরকার আজ নারীদের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করছে, ইসলামী মূল্যবোধ এবং আফগান ঐতিহ্য অনুসারে তাদের অধিকার সংরক্ষণের চেষ্টা করছে।

মাদকাসক্তি: দখলদারিত্বের উত্তরাধিকার এবং বর্তমান সরকারের উদ্ধার অভিযান

মার্কিন দখলদারিত্বের সময়, আফগানিস্তানে মাদকদ্রব্যের বিস্তার অভূতপূর্ব হারে ঘটে এবং নারীরা এই অভিশাপের শিকার হয়ে ওঠেন। কারণ দেশটিতে মার্কিন দখলদারিত্বের কারণে তৈরি হওয়া কঠোর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে আসক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মার্কিনীদের এই দখলদারিত্ব আফগানিস্তানকে বিশ্বের বৃহত্তম আফিম উৎপাদনকারী দেশে রূপান্তরিত করার জন্য দায়ী ছিল – যেখানে ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে প্রয়াত আমিরুল মু’মিনিন মোল্লা মুহাম্মদ ওমরের (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নির্দেশে ইমারতে ইসলামিয়ার প্রথম শাসনামলে দেশটি সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত হওয়ার পর – মার্কিন আগ্রাসনের ফলে অনেক নারী আসক্তির চক্রে পড়েন।

অপরদিকে মুজাহিদিনরা দখলদারিত্ব থেকে দেশটির ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পরপরই, ইমারতে ইসলামিয়া সরকার খুব দ্রুততার সাথে এই মানবিক সংকট মোকাবেলা করতে শুরু করেন। এই লক্ষ্যে ইমারতে ইসলামিয়া মাদক আসক্তি বিরোধী কর্মসূচি চালু করে, পুরুষ ও মহিলা আসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বিশেষায়িত কেন্দ্র তৈরি করে, কর্মস্থল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। দখলদারিত্বের ফলে সৃষ্ট এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে নারীদের রক্ষা করার জন্য ইমারতে ইসলামিয়া সরকারের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

আমূল রূপান্তর; ভিক্ষাবৃত্তি থেকে শুরু করে একটি ভালো জীবনযাপন

মার্কিন দখলদারিত্বের ফলে আফগানিস্তানের যে ক্ষতি হয়েছিল, তা কেবল মাদকের বিস্তারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এর ফলে অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটে, এমনকি সমাজে ছড়িয়ে পড়া দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের ফলে অনেক নারী ভিক্ষাবৃত্তি করতে বাধ্য হন, যদিও সাহায্যের আড়ালে কোটি কোটি ডলার আফগানিস্তানে এসেছিল। কিন্তু তার বেশিরভাগই পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান এবং দখলদারিত্বের প্রতি অনুগত সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের কাছে গিয়েছিল। নারীদের জীবিকার সন্ধানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল, অন্যদিকে দখলদাররা দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করেছিল এবং দেশটির জনগণকে নিঃস্ব অবস্থায় ফেলে রেখেছিল।

এদিকে মুজাহিদিন কর্তৃক দেশটির ক্ষমতা পুনরুদ্ধার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও পশ্চিমা দখলদারিত্বের নোংরামি থেকে দেশকে মুক্ত করার পর, ইমারতে ইসলামিয়া সরকার ভিক্ষাবৃত্তির ঘটনা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়। নতুন সরকার রাস্তা থেকে ভিক্ষুকদের উঠিয়ে তাদের সরকারী তালিকায় প্রকৃত ভিক্ষুকদের তালিকাভুক্ত করতে শুরু করে, যারা এর যোগ্য তাদেরকে সরকার মাসিক ভাতা প্রদান করতে শুরু করে। ইমারতে ইসলামিয়া সরকারের এই পদক্ষেপ অনেক নারীকে তাদের মর্যাদা ফিরে পেতে এবং অন্যদের কাছে না গিয়ে মর্যাদার সাথে জীবনযাপন করতে সাহায্য করে।

নারীদের বৈবাহিক ও উত্তরাধিকার রক্ষা; ন্যায়বিচারের ধারা সংশোধন

পশ্চিমা দখলদারিত্বের সময়, আফগান নারীদেরকে তাদের বেশিরভাগ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল ইসলামী আইন অনুসারে বিবাহের অধিকার, কারণ তাদের বিবাহ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। ইসলামী শরিয়া চেতনার পরিপন্থী আইনের বিস্তারের কারণে নারীদেরকে তাদের মোহর এবং উত্তরাধিকারের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল। আফগান নারীদের ঐতিহ্য, পরিচয় এবং ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন একটি পশ্চিমা সংস্কৃতিও তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

অপরদিকে ইমারতে ইসলামিয়া সরকার দখলদারিত্ব থেকে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পর, দেশটিতে জোরপূর্বক বিবাহ নিষিদ্ধ করে এবং বিবাহের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার রক্ষার উপর জোর দেয়, যার মধ্যে তাদের প্রাপ্য মোহর পাওয়ার অধিকারও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইমারতে ইসলামিয়া সরকার ন্যায়সঙ্গত এবং কঠোর রাষ্ট্রীয় ডিক্রি জারি করার মাধ্যমে ইসলামী আইন অনুসারে সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার নিশ্চিত করেছিল, যা দখলদারিত্বের কারণে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার সময় বাস্তবায়িত হয়নি।

নারীর মর্যাদা রক্ষায় নিরাপদ শিক্ষা ও কর্মপরিবেশ

আফগান সমাজের উপর পশ্চিমা দখলদারিত্বের চাপিয়ে দেওয়া সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয়গুলির মধ্যে একটি হল কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মিশ্রণ। এর ফলে অসংখ্য নৈতিক ও সামাজিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, যা ছিলো রক্ষণশীল আফগান সমাজের মূল্যবোধের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

ইমারতে ইসলামিয়া সরকার দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর, উক্ত অসঙ্গতি দূর করতে শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মিশ্রণ পৃথকীকরণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সরকারের এই আইন দেশে নারীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ প্রদান করেছিল, যাতে তারা ইসলামী নীতি অনুসারে শিক্ষা এবং কাজ করতে পারেন, একই সাথে এই আইন তাদের গোপনীয়তাকে সম্মান করে এবং তাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করে। ইমারতে ইসলামিয়া সরকার দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও নারীদের উচ্চশিক্ষার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে কাজ করে চলেছে।

হত্যা থেকে সুরক্ষা; পশ্চিমা দখলদারিত্ব এবং ইমারতে ইসলামিয়া শাসনের মধ্যে পার্থক্য

পশ্চিমা দখলদারিত্বের বিশ বছরের সময়কালে, মার্কিন সেনাবাহিনী, ন্যাটো এবং বিশ্বাসঘাতক এজেন্টদের দ্বারা পরিচালিত নৃশংস সামরিক অভিযানের ফলে হাজার হাজার আফগান নারী নিহত হয়েছেন। আফগান গ্রাম, শহর এবং গ্রামাঞ্চলে নির্বিচারে এবং নৃশংস বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল, যা শিশু, হাঁটু গেড়ে বসা বৃদ্ধ বা মহিলাদের কাউকেই রেহাই দেয়নি, শত শত নিরীহ নারী, শিশু এবং বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে দখলদাররা।

অন্য দিকে, ইমারতে ইসলামিয়া সরকার যুদ্ধ ও ধ্বংসের বর্বরতা থেকে নারীদের রক্ষা করতে চায়, দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করে, যাতে দখলদারিত্বের কারণে বছরের পর বছর সন্ত্রাস ও হত্যার পর নারীরা নিরাপদে বসবাস করতে পারেন।

পশ্চিমা বিশ্ব যে সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা করছে

পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ইমারতে ইসলামিয়াকে নারী অধিকারের শত্রু হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে এবং আফগান নারীদের বিরুদ্ধে মার্কিন দখলদারিত্বের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের প্রতি অন্ধ রয়েছে। স্পষ্ট সত্য হল যে, নতুন সরকার ইসলামী আইন অনুসারে নারীর অধিকার পুনরুদ্ধার করতে, তাদের মর্যাদা রক্ষা এবং তাদের সতীত্ব রক্ষার জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করছে। আর এটি হবে পশ্চিমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্ত, পশ্চিমাদের যেই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু ধ্বংস এবং দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনেনি।

বিভ্রান্তিকর পশ্চিমা আখ্যানগুলি পুনর্বিবেচনা করার সময় এসেছে। আফগান নারীদের যা প্রয়োজন তা হল পশ্চিমা চাপিয়ে দেওয়া এজেন্ডা নয়, বরং এমন একটি পরিবেশ যা তাদের ধর্মকে সম্মান করে, তাদের অধিকার রক্ষা করে এবং তাদের প্রাপ্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রদান করে।


তথ্যসূত্র:
١. المرأة الأفغانية بين حكم الإمارة الإسلامية وشيطنة الغرب
– https://tinyurl.com/mw8wwv2h

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংকটে মোগাদিশু সরকার: শাবাবকে রুখতে কারারক্ষীদের ফ্রন্টলাইনে মোতায়েন