যুক্তরাষ্ট্র ও হুথিদের দ্বন্দ্ব; দুটি পক্ষের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের লড়াই ছাড়া আর কিছুই নয়: আল-কায়েদা

0
742

আল-কায়েদা ইন দ্য অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা (AQAP) সম্প্রতি এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে যে, ইয়েমেনে আমেরিকা ও হুথিদের মধ্যকার চলমান দ্বন্দ্ব দুটি পক্ষের মধ্যে স্বার্থ ও ক্ষমতার ভারসাম্যের লড়াই ছাড়া আর কিছুই নয়। আর দুটি পক্ষের এই স্বার্থের লড়াইয়ে প্রান হারাচ্ছেন ইয়েমেনের নিরীহ জনগণ।

আল-কায়েদা ইন দ্য অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলার (আনসারুশ শরিয়াহ্) অন্যতম মিডিয়া শাখা আল-মালাহিম থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে ইয়েমেনে নিরীহ মুসলমানদের উপর দাম্ভিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত নৃশংস আগ্রাসন ও বর্বরোচিত বোমাবর্ষণের তীব্র সমালোচনা করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলায় নিহতদের প্রতি গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করে দলটি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আমেরিকা হুথিদের লক্ষ্যবস্তু করার আড়ালে ১৮ জন নিরীহ নারী ও শিশুকে হত্যা করেছে। আমরা ইসলামের শত্রুদের এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা দোয়া করি আল্লাহ তাআ’লা যেন বর্বরোচিত এই হামলায় নিহতদের শহীদ হিসেবে কবুল করেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা দান করেন।

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি, আমরা এটিও স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, ইরানের রাফিজি শাসনব্যবস্থা এবং এর সাথে যুক্ত মিলিশিয়া দলগুলোর সাথে আমেরিকানদের যুদ্ধ আমাদের কোনোভাবেই প্রভাবিত করে না; এই দ্বন্দ্বকে, যত চকচকে উপাধি এবং ইসলামী বা আরবি নাম দিয়েই উপস্থাপন করা হোক না কেন, আমরা বিশ্বাস করি যে এটি একটি স্বার্থের যুদ্ধ এবং দুটি পক্ষের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের লড়াই ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনকি ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ রক্ষার ছদ্মবেশ ধারণ করলেও এই বাস্তবতা পরিবর্তন হবে না। কেননা আমেরিকানরা, ইহুদি এবং রাফেজি হুথিরা এই মুসলিম দেশগুলোতে সুন্নিদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে যুদ্ধ চালাচ্ছে। আর তাদের সকলের হাতই ইয়েমেনি মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত।”

“আমরা জানি যে এই আমেরিকান বোমা হামলার উদ্দেশ্য হুথি গোষ্ঠীকে নির্মূল করা বা তাদের সম্প্রসারণ সীমিত করা নয়, বরং মুসলিম দেশগুলিতে রাফেজিদের শক্তিশালী ও পুনরুজ্জীবিত করা। বিশ্বের কাছে তাদেরকে এমন একটি চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা যে, তারাই আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধকারী আর তারাই ইয়েমেন শাসন করার সবচাইতে যোগ্য পক্ষ। অথচ এটি ক্রুসেডারদের পরিকল্পনার একটি অংশ, ঠিক যেমন ইরাকে আহলে সুন্নাহকে নির্মূল করা হয়েছিল এবং তাদেরকে নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। অতঃপর সেখানে শিয়াদেরকে সুন্নিদের স্থলাভিষিক্ত করার মাধ্যমে রাফেজিদের হাতে ক্ষমতা স্থানান্তর করা হয়েছিল।”

এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে, যার মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যও রয়েছে। যেখানে সে বলেছে “তারা ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে আগ্রহী নয়, বরং তাদের লক্ষ্য লোহিত সাগরে হুতিদের আক্রমণ বন্ধ করা। হুতিরা যদি সমুদ্রে তাদের অভিযান বন্ধ করে দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বোমা হামলাও বন্ধ হয়ে যাবে।

অতীতে হুথিদের শক্তিশালীকরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবদানকে স্মরণ করিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এটি সকলেরই জানা যে, রাফিজি মিলিশিয়াদের সমর্থনকারী পক্ষ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গাজার ঘটনাবলিতে হুথিরা হস্তক্ষেপ করার আগে, তারা ইয়েমেনে হুথি গোষ্ঠীকে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সুন্নিদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার পথে ছিল। প্রকৃতপক্ষে, অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুথিদের সর্বাত্মকভাবে রক্ষা করেছে।”

বিশেষ করে হুদায়দাহ এবং নিহম ফ্রন্টে হুথিদের সহায়তা প্রদান করে আমেরিকা ত্রাণকর্তার ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। আর আজ, যখন আমেরিকান যুদ্ধবিমান ইয়েমেনের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করছে এবং বাড়িঘরে বোমা হামলা চালাচ্ছে, তখন রাফিজি হুথিরা মারিব এবং তাইজে সুন্নি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং ভারী কামান হামলা চালাচ্ছে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইয়েমেনে হুথিদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের কথা ইয়েমেনের মুসলিম জনগণ ভুলে যাননি, তাদের কাছে এখনো এসব অপরাধের দৃশ্যমান প্রমাণ রয়েছে। জনগণ দেখেছে হুথিরা কিভাবে কুরআন শিক্ষার কেন্দ্র, মাদ্রাসা, স্কুল এবং মসজিদগুলিতে বোমা হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করেছে। কিভাবে হুথিরা তাইজ, রাদা, বায়দা, মারিব এবং অন্যান্য অঞ্চলে নিরীহ মানুষের বাড়িতে বোমা হামলা করেছে, যাতে নারী, শিশু এবং বৃদ্ধরা নিহত হয়েছেন। এই সবই ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূর্ণ ছত্রছায়ায়, আর তারাই নাকি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি করে।

বিবৃতিটির শেষাংশে ইয়েমেনের মুসলিম জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, “এই সংকট ও যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র সমাধান বা উপায় হচ্ছে, জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা এবং ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুদের বিরুদ্ধে তাওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আমাদেরকে এটি ভালোভাবে বুঝতে হবে যে, আমেরিকান, ইহুদি এবং শিয়া হুথিরা ইয়েমেনে সুন্নিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। তাদের সকলের হাতে ইয়েমেনের মুসলিম জনগণের রক্ত ​​লেগে আছে।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপহৃত শিশুকে উদ্ধার করলো ইমারতে ইসলামিয়ার সেনাবাহিনী
পরবর্তী নিবন্ধমোগাদিশুর উপকন্ঠে কেনিয়ার সামরিক কার্গো বিমান বিধ্বস্ত