
মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের ত্বরিত প্রচেষ্টায় লোকসভা, রাজ্যসভা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন অতিক্রম করে চূড়ান্ত আইনে রূপ নিল বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫। গত ৫ এপ্রিল রাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিলটি আইনে পরিণত হয়। ইতোমধ্যেই ভারত সরকারের গেজেটে সংশোধিত আইন সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।
বিলটির পক্ষে সরকার যেমন সক্রিয় ছিল, তেমনি বিরোধীপক্ষ থেকে ওঠে প্রবল আপত্তি। গত ২ এপ্রিল বিলটি লোকসভায় উপস্থাপন করা হলে রাতভর চলে বিতর্ক। এরপর ৩ এপ্রিল গভীর রাতে ২৮৮ ভোটে বিলটি পাস হয়, যেখানে বিপক্ষে পড়ে ২৩২টি ভোট। এরপর রাজ্যসভায় ১২৮ জন সদস্য বিলের পক্ষে ভোট দেয়, আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ৯৫টি। এরপর তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় এবং ৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির সইয়ের মধ্য দিয়ে তা আইনে রূপ নেয়।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডে এখন থেকে অমুসলিম প্রতিনিধিরাও থাকতে পারবে। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কোনো জমি ওয়াকফ কি না, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারেরও থাকবে নিয়ন্ত্রণ। অর্থাৎ মুসলিম সমাজের নিজস্ব ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের পথ খুলে গেল এই আইনের মাধ্যমে।
ভারতে বর্তমানে ওয়াকফের অধীনে রয়েছে প্রায় ৮.৭ লাখ সম্পত্তি এবং প্রায় ৯.৪ লাখ একর জমি। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১.২ লাখ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে উত্তরপ্রদেশে—২৩ লাখেরও বেশি, যা দেশের মোট ওয়াকফ সম্পত্তির ২৭ শতাংশ। এরপরেই আছে পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে প্রায় ৮০ হাজার ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে ১৫৮টি স্কুল, ৪টি ইংলিশ মিডিয়াম মাদরাসা, ১৯টি হোস্টেল ও ৯টি হাসপাতাল।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই আইনের ফলে মুসলিমদের শতাব্দীপ্রাচীন ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর সরাসরি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ইতোমধ্যে এই সংশোধনী বিলকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র:
1. President Droupadi Murmu Approves Controversial Waqf Amendment Bill
– https://tinyurl.com/2p96pad3