ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ একদিকে তীব্র হচ্ছে, একইসাথে বাড়ছে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের ‘লাঠির’ ব্যবহার। সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সময় থেকেই বিরোধীদের দমনে লাঠির ব্যবহার চলে আসছে, যেটা মাঝে মাঝে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।
গত দুই সপ্তাহের বিক্ষোভে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই মারা গেছে গুলিতে। তবে আরও শত শত বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে এবং দাঙ্গা পুলিশ তাদের দমনে বাঁশের লাঠি ব্যবহার করেছে।
মিডিয়াতে প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে সন্ত্রাসীরা বিক্ষোভকারীদেরকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাছবিচারহীনভাবে পথিক এমনকি কম বয়সী শিশুদের উপরও পেটানো হচ্ছে। এ ধরণের ছবি জনমানুষের ক্ষোভ আরও উসকে দিয়েছে।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে নয়াদিল্লীতে এক পুরুষ শিক্ষার্থীকে পুলিশের লাঠির আঘাত থেকে বাঁচাচ্ছে তার সহপাঠি মুসলিম মেয়েরা। এই ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।
যারা পুলিশের ১.৮ মিটার দীর্ঘ বাঁশ বা প্লাস্টিকের লাঠির আঘাত খেয়েছেন, তারা বলেছেন যে এটা তাৎক্ষণিকভাবে আঘাতের জায়গাকে অবশ করে দেয় এবং এর ব্যাথা কয়েক দিন ধরে থাকে।
একাধিক আঘাতে অনেক সময় হাড় ভেঙ্গে যায়, পঙ্গু হয়ে যায় এবং এমনকি মানুষ মারাও যেতে পারে।
অলাভজনক অধিকার গ্রুপ পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) সেক্রেটারি জেনারেল ভি সুরেশ বলেছেন, “জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার অস্ত্র হিসেবে লাঠির ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এটা এখন একটা মারণাস্ত্র হয়ে উঠেছে”।
সুরেশ বলেন, “এটা অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে, এবং এতটা ব্যবহার করা হচ্ছে যে, দেশ হিসেবে আমাদের অভ্যাসে চলে এসেছে এটা। লাঠিকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয় কিন্তু এটা একটা ভয়াবহ অস্ত্র”।
“কোন কিছু দিয়েই এর বর্বর ব্যবহারের বৈধতা দেয়া যায় না”।
অনেকের বিশ্বাস লাঠির উৎস হলো দক্ষিণ এশিয়া যেখানে মার্শাল আর্টের অস্ত্র হিসেবে এটি ব্যবহৃত হতো। সামন্ততান্ত্রিক জমিদারদার তাদের প্রজাদের উপরও লাঠির ব্যবহার করতো এবং এভাবেই এটা ক্ষমতা আর কর্তৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ভারতে এই অস্ত্রটি আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠে যখন ব্রিটিশরা উনবিংশ ও বিংশ শতকে অহিংস স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদেরকে দমানে এই লাঠির ব্যবহার শুরু করে।
ব্রিটিশরা এমনকি লাঠি ব্যবহারের জন্য গাইডলাইনও তৈরি করে। এর মধ্যে রয়েছে, ‘জ্যাবিং’ – যার অর্থ হলো পেটের দিকে আঘাত করা, এবং ‘কাটিং’ – যার অর্থ হলো ঘাড়ে বা মাথায় আঘাত করা।
আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপক সাইয়েদ আলি কাজিম বললেন, “লাঠি হলো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের উত্তরাধিকার”।
তিনি বলেন, “স্পষ্ট ঐতিহাসিক দলিল রয়েছে যে, (মুক্তি যোদ্ধা) লালা লাজপাত রায় নিহত হয়েছিলেন যখন ব্রিটিশরা এক বিক্ষোভের সময় তারা মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল”।
ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালে দেশ ছেড়ে গেছে কিন্তু লাঠির ব্যবহার এখনও রয়ে গেছে।