ভারতের রাজস্থানের জয়পুরে গণপিটুনিতে এক কাশ্মীরি কিশোর নিহত হয়েছে। নিহত কিশোরের নাম বসিত খান; বয়স ১৭।
জানা গেছে, ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নির্মমভাবে তাঁকে পেটানো হয়। পরদিন, ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় ।
পুলিশ জানিয়েছে, আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের পাশে দাঁড়াতে জয়পুরে পার্টটাইম একটা কাজ নিয়েছিল বসিত। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মারা গেছে বসিত। প্রাইভেট অ্যাম্বুল্যান্সে শুক্রবারই মৃতদেহ কাশ্মীরে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, কাশ্মীরের কুপওয়ারায় বাড়ি বসিতদের। তার পরিবার অত্যন্ত দুঃস্থ। বাবা মারা গিয়েছেন ২০১২ সালে। তখন বসিত খুবই ছোট ছিল। তিন ভাইবোনের মধ্যে বসিতই বড়। তাই সংসার জোয়াল কিছুদিন হলো, নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল সে। বসিত একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে পার্টটাইম কাজ করে, যে সামান্য টাকা পেত, তাই বাড়িতে মায়ের হাতে তুলে দিত সে।
সেই কাজের সূত্রেই জয়পুরে আসা। বসিতের সঙ্গে রফিক নামের আরেকজন দু-পয়সা রোজগারে কাশ্মীর থেকে জয়পুরে আসেন। ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কয়েকজন ছেলের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন ওই কাশ্মীরি কিশোর।
বসিতের বন্ধু, ঘটনার একমাত্র সাক্ষী রফিক বলেন, বচসার সময় একজন বসিতের কলার ধরে। এর পরেই সঙ্গী যুবকেরা মারতে থাকে বসিতকে। সে সময় আদিত্য নামে এক যুবক বসিতের মাথায় সজোরে আঘাত করে। তার জেরেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রফিকের জানান, হামলাকারীদের ওই দলে হিন্দু ধর্মের লোকই ছিল। তারা বলছিল, জয়পুরে যত কাশ্মীরি আছে, ছুড়ে ফেলে দেব। মুখে আনার মতো নয়, এমন অকথ্য ভাষাতে কাশ্মীরিদের উদ্দেশে গালিগালাজও করা হয়।
রফিক যে বাধা দেবে, সে উপায়ও ছিল না। তাঁকেও মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। ঘটনার পর এক ড্রাইভার জয়পুরে বাড়ির থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তাঁদের ছেড়ে দিয়ে যায়। ওই অবস্থায় দু-জনে বেশ খানিকটা পথে হেঁটে বাড়ির দিকে আসে। কিন্তু, বাড়ি পৌঁছানোর আগেই রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন বসিত। বাড়িতে ফিরে অনবরত বমিও করতে থাকে। ক্যাব বুক করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই অচৈতন্য হয়ে পড়ে।
ডাক্তাররা তখনই জানিয়ে দেন, বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। তবুও মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় মারা যান ওই কাশ্মীরি কিশোর।
সূত্র: কালের কণ্ঠ