পূর্ব তুর্কীস্তানে অবৈধ দখলদারিত্ব এবং উইঘুর মুসলিমদের ওপর চলমান গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের জবাবে চীন বরাবরই বিশ্ববাসীর চোখে ধুলো ছিটানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। উইঘুর মুসলিমদের ব্যাপারে এ পর্যন্ত যত মিথ্যা তথ্য তারা প্রচার করেছে তার মধ্যে ‘উইঘুরদের ধর্মীয়-স্বাধীনতা’ ছিলো একটি। কিন্তু তাদের এই মিথ্যাও এখন বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ হয়ে গেছে।
সম্প্রতি জানা গেছে যে, দখলদার প্রশাসনের নির্যাতনের ভয়ে পূর্ব তুর্কীস্তানের কোর্লা জেলার ১৫০ থেকে ২০০ জনের একটি মসজিদে মাত্র ৪ জন মুসল্লি সালাত আদায় করছে।
২০১৭ সাল থেকে ইসলাম বিদ্বেষী চীন কথিত ‘সন্ত্রাসবাদ’ নিরসনের অজুহাতে উইঘুর মুসলিমদের উপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। পূর্ব তুর্কীস্তানে উইঘুর মুসলিমদের দাঁড়ি রাখতে বাঁধা দেওয়া, টাখনুর উপর জামা পড়তে বাঁধা দেওয়া, প্রকাশ্যে মুসলিম নারীদের শালীন পোশাক কেটে ফেলা, রমাদানে সিয়াম পালন করা থেকে মুসলিমদের বিরত রাখা, জোরপূর্বক মুসলিমদের মদ্যপান করানো ও নাচ-গান করানো সহ আরও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে দখলদার চীন।
এমনকি ২০১৭ সাল থেকে উইঘুর মুসলিমদের সালাত আদায় বন্ধে বিভিন্ন মসজিদও ধ্বংস করেছে তারা। এছাড়া অনেক মসজিদকে তো তারা ইতোমধ্যেই পরিণত করেছে মদের বারে।
২০২০ সালে লোক দেখাতে কিছু মসজিদ খুলে দেয় দখলদাররা। যদিও মসজিদগুলোর সামনে নিয়মিতই টহলরত থাকে তাদের পুলিশ বাহিনী।
কোর্লা জেলার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছে, দখলদার প্রশাসন এখানের উইঘুর মুসলিমদের প্রতি একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেখানে তারা উইঘুর মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। এছাড়াও উইঘুরদেরকে মসজিদ খালি না রাখার জন্যেও নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু উইঘুর মুসলিমরা তাদের সেই বিজ্ঞপ্তিতে কোন সাড়া দেয়নি। যার ফলে পুলিশ পরিচালিত ১৫০ থেকে ২০০ জনের একটি মসজিদে মাত্র ৪/৫ জন মুসল্লি সালাত আদায় করছে।
তুর্কীস্তানের হোতান বিভাগে সাম্প্রতিক এক প্রচারাভিযানের মাধ্যমে দখলদাররা দাবি করছে যে, তারা হোতানের মসজিদগুলির সুযোগ-সুবিধা উন্নত করেছে। মুসল্লিদের মসজিদে আসতে উৎসাহিত করতে তারা সুন্দর পরিবেশের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু হোতানের কারাকাশ জেলা থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ২০১৭ সালের শুরুর দিকে হোতানের ইয়াভা নামের এক গ্রামের ৬০ ভাগ ধর্মীয় নেতার শিরশ্ছেদ করেছে দখলদাররা।
অন্যদিকে তুর্কীস্তানের ইলি কাজাখ বিভাগের ঘুলজা জেলার পরিস্থিতি আরও গুরুতর। দখলদারদের দ্বারা আরোপিত সাম্প্রতিক লকডাউনের সময় যখন অনাহারে উইঘুর মুসলিমদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়, তখন তাদের জানাজার সালাত আদায়কারীর জন্য কোন ইমামকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ বেশিরভাগ ইমামই তখন দখলদারদের বন্দী শিবিরে ছিলেন। এছাড়া আরও অনেক ইমাম দখলদারদের হাতে তাদের প্রাণ হারিয়েছেন। আর ঘুলজা শহরের ‘চায়না মার্কেটে’ অবস্থিত ৩টি মসজিদের সবকটিই বন্ধ করে রেখেছে দখলদার সরকার।
এতকিছুর পরও কিছু কথিত উইঘুর বুদ্ধিজীবী মনে করেন যে, কথিত ‘মানবাধিকারের রক্ষক’ জাতিসংঘের কাছে অভিযোগ পেশ করলে জাতিসংঘ হয়তো তাদেরকে চীনের কাছ থেকে স্বাধীনতা এনে দিবে। কিন্তু তারা এখনও একটি বিষয় উপলব্ধি করতে পারছে না যে, স্বাধীনতাকে অর্জন করতে হয়। কেউ যখন স্বাধীনতা এনে দেয়, তখন তাকে স্বাধীনতা বলে না; বরং তখন তাকে বলা হয় স্বাধীনতার মুখোশে এক নতুন বন্দীত্ব।
লিখেছেন : ওবায়দুল ইসলাম
তথ্যসূত্রঃ
1. The religious situation of the Uyghur people: 4 prayer rooms in a mosque of 150 people, and a Tungan imam in the Uyghur mosque
– https://tinyurl.com/yc63cd8r
– https://tinyurl.com/266umzce