এক দশকেরও বেশি সময় আগে আটক হওয়া একদল উইঘুর পুরুষকে চীনে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে থাইল্যান্ড সরকার। তবে তারা নিজ দেশে যেতে রাজি নন। পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, ফেরত পাঠানো হলে তাদের উপর নির্যাতনের ঝুঁকি রয়েছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) পাওয়া একটি চিঠিতে, ব্যাংককে আটক ৪৩ জন উইঘুর পুরুষ ‘চীনে পাঠানোর হুঁশিয়ারি’ বন্ধ করার জন্য প্রকাশ্য আবেদন করেছেন।
চিঠিতে তারা লিখেছেন, আমরা কারাবন্দি হতে পারি, এমনকি আমাদের জীবনও হারাতে পারি। আমরা জরুরি ভিত্তিতে মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তারা যেন খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই এই মর্মান্তিক পরিণতি (চীনে পাঠানো) থেকে আমাদের রক্ষা করতে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে।
উইঘুররা চীনের সুদূর পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং অঞ্চলের একটি তুর্কি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতিগোষ্ঠী। চীনা কর্তৃপক্ষের বৈষম্য এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় নিশ্চিহ্ন করার ধারাবাহিকতা নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে তাদের।
চীন সরকার উইঘুরদের বিরুদ্ধে একটি নৃশংস অভিযান শুরু করে, কিছু পশ্চিমা সরকার পর্যন্ত এটিকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে। কয়েক হাজার উইঘুর লোকদের বন্দি শিবির এবং কারাগারে পাঠানো হয়। বন্দীদের অধিকাংশই নির্যাতন এবং রোগশোকে মারা গিয়েছে।
২০১৪ সালে চীন থেকে পালিয়ে আসা ৩০০ জনেরও বেশি উইঘুরকে মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে থাই কর্তৃপক্ষ আটক করেছিল। ২০১৫ সালে থাইল্যান্ড ১০৯ জন বন্দিকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চীনে ফেরত পাঠায়। বিষয়টি তখন আন্তর্জাতিক মহলে হৈ চৈ ফেলে দেয়। ১৭৩ জন উইঘুরকে (বেশিরভাগই নারী ও শিশু) তুরস্কে পাঠানো হয়। আর ৫৩ জন উইঘুরকে থাইল্যান্ড বন্দি করে রাখে। সেখানে দুই শিশুসহ পাঁচজন আটক অবস্থায় মারা গেছেন।
আইনজীবী ও আটককৃতদের আত্মীয়রা বন্দি অবস্থায় থাকাদের কঠোর অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। তারা বলছেন, এসব পুরুষকে খুব কম খাবার দেওয়া হয়, কংক্রিটের জনাকীর্ণ সেলে রাখা হয়, টুথব্রাশের মতো স্যানিটারি সামগ্রী থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হয়। আত্মীয়স্বজন, আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা থাই সরকারকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। সেখানে আটককৃতদের প্রতি থাই সরকারের আচরণ ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ হতে পারে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
এপির হাতে আসা রেকর্ডিং ও চ্যাট রেকর্ডে দেখা যায়, থাই অভিবাসন কর্মকর্তারা ৮ জানুয়ারি উইঘুর বন্দিদের স্বেচ্ছায় দেশ থেকে বের করে দেওয়ার কাগজপত্রে সই করতে বলে। এই পদক্ষেপটি বন্দিদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।
থাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন এক এমপিসহ তিনজন ব্যক্তি এপিকে বলেছেন, উইঘুরদের চীনে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সরকারের মধ্যে সম্প্রতি আলোচনা হয়েছে। যদিও জনগণ এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা শোনেনি।
তবে থাইল্যান্ড ও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এপির মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। যদিও বেইজিং আগে থেকেই বলে আসছে, উইঘুররা ‘জিহাদি’। তবে এর কোনো প্রমাণই চীন দিতে পারেনি।
উইঘুর হিউম্যান রাইটস প্রজেক্টের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির সহযোগী পরিচালক পিটার আরউইন বলেন, থাইল্যান্ডে থাকা ৪৩ জন উইঘুর কোনো অপরাধ করেছে বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উইঘুর অ্যাক্টিভিস্ট এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলেছে, এই ব্যক্তিরা নির্দোষ। তারা চীনে ফিরে নিপীড়ন, কারাবাস এবং মৃত্যুর মুখোমুখিও হচ্ছেন।
তথ্যসূত্র:
1. Uyghurs detained in Thailand say they face deportation and persecution in China
– https://tinyurl.com/3uuunb2w