শত্রুকে ক্লান্তকারী ও প্রতিরোধ যুদ্ধের কিংবদন্তি কমান্ডার ইন চিফ মোহাম্মদ দেইফের শাহাদাত: আবু উবাইদাহ

1
92

ফিলিস্তিন ভিত্তিক সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী ইজ্জউদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড নিশ্চিত করেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, জায়োনিস্ট ইসরায়েল ও মুজাহিদদের মধ্যে শুরু হওয়া সাম্প্রতিক যুদ্ধে আল-কাসসাম ব্রিগেডের কমান্ডার-ইন-চিফ মোহাম্মদ দেইফ সহ সাতজন জ্যেষ্ঠ নেতা শহিদ হয়েছেন।

গত ৩০ জানুয়ারী, বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত প্রায় ১১ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তায় আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদাহ হাফিজাহুল্লাহ্ বলেন, “আমরা আমাদের মহান জনগণ, আমাদের জাতি এবং বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা ও প্রতিরোধের সকল সমর্থকদের কাছে আল কাসাম ব্রিগেডের জেনারেল মিলিটারি কাউন্সিলের একদল জ্যেষ্ঠ মুজাহিদিন এবং বীর নেতাদের শাহাদাতের কথা ঘোষণা করছি।”

শহিদ মুজাহিদ ও নেতাদের এই তালিকায় রয়েছেন:

– আল-কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান/কমান্ডার-ইন-চিফ মোহাম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল মাসরি, যিনি মোহাম্মদ দেইফ (আবু খালেদ) নামে পরিচিত।
– আল-কাসসাম ব্রিগেডের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ কমান্ডার মারওয়ান ইসা (আবু আল-বারা),
– আল-কাসসাম ব্রিগেডের অস্ত্র ও যুদ্ধ পরিষেবা বিভাগের প্রধান কমান্ডার গাজী আবু তামা (আবু মুসা)।
– জনশক্তি বিভাগের প্রধান বীর মুজাহিদ শহীদ, কমান্ডার রায়েদ সাবেত (আবু মোহাম্মদ)।
– খান ইউনিস ব্রিগেডের সিনিয়র কমান্ডার, বীর মুজাহিদ শহিদ রাফি সালামা (আবু মোহাম্মদ)।
– উত্তর ব্রিগেডের কমান্ডার আহমেদ আল-ঘান্দুর (আবু আনাস)।
– কেন্দ্রীয় ব্রিগেডের কমান্ডার আয়মান নোফাল (আবু আহমেদ)।

জায়োনিস্ট ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে বীরত্বের সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালনার পর এই মহান নেতাদের খেদমত এবং শহীদ হওয়ায় আবু উবাইদাহ হাফিজাহুল্লাহ্ প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “এই শহীদ মুজাহিদ নেতারা এক মহান সংগ্রামী জীবনের পর পবিত্র পথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, যেখানে তাঁরা বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ করেছেন, আমাদের শত্রুদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছেন এবং ধ্বংস ও পরাজয়ের পথে তাদের পা টেনে এনেছেন।

আমাদের কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ (আবু খালেদ) যিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শত্রুকে ক্লান্ত করে তুলেছেন। আল্লাহর কসম! তাঁর জন্য এটিই উপযুক্ত যে তিনি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হবেন (ইনশাআল্লাহ্‌)। আর আল্লাহর পথে, শহীদ উপাধি এবং শহীদ হওয়ার সম্মান ছাড়া কীভাবে মোহাম্মদ দেইফকে ইতিহাসে উল্লেখ করা যেতে পারে।”

কমান্ডার দেইফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)র ডেপুটি মারওয়ান ইসার প্রতিও আবু উবাইদাহ একই রকম অনুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন “আর আল-কাসসাম ব্রিগেডের হৃদয় এবং এর অটল স্তম্ভ মারওয়ান ইসা কীভাবে তার বিছানায় মারা যেতে পারেন? কিভাবে মুজাহিদিনদের জ্ঞানী ব্যক্তি এবং অনন্য নেতা আবু মুসা, এবং সুউচ্চ পর্বতের অধিকারী রায়েদ সাবেত, আল-আকসার স্বার্থে তাদের জীবন সস্তায় বিলিয়ে দিতে পারেন?

ধন্য আমাদের শহীদ নেতারা, তাদের পরিবার, সন্তান, এবং যারা আপনাদেরকে জন্ম দিয়েছে, আপনাদেরকে আলিঙ্গন করেছে এবং আপনাদের চারপাশে সমাবেত হওয়া ব্যক্তিরা। যারা আপনাদের প্রস্থানের পরে আপনাদের দোয়ায় এই পথে চলতে থাকবে যতক্ষণ না তারা আপনারা যা অর্জন করেছেন তা অর্জন করে।”

আবু উবাইদাহ হাফিজাহুল্লাহ্ বিবৃতিতে অন্যান্য শহিদ নেতাদেরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই মুজাহিদ নেতারা তাদের খাঁটি রক্ত দিয়ে আল্লাহর রাহে সন্তুষ্টির জন্য, তাদের অধিভুক্তি এবং আত্মত্যাগের সত্যতা স্বাক্ষর করতে শহীদ হয়েছেন। শাহাদাতের মাধ্যমে তারা ঘোষণা করেছিলেন তাদের রক্ত তাদের কাছে এই ভূখণ্ডের কোনও ফিলিস্তিনি শিশুর রক্তের চেয়ে বেশি মূল্যবান নয়।

আবু উবাইদাহ হাফিজাহুল্লাহ্ বলেন, “অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড” যুদ্ধের সময় আমাদের মহান নেতাদের শাহাদাত, আমাদের বিরাট ক্ষতি সত্ত্বেও আল-কাসসাম ব্রিগেড এক মুহূর্তের জন্যও নেতৃত্বের শূন্যতা অনুভব করেনি। কেননা নেতার স্থলাভিষিক্ত হন অনেক নেতা এবং শহীদের স্থলাভিষিক্ত হন হাজার হাজার শহীদ।

আমাদের নেতাদের শাহাদাত মুজাহিদদের সংকল্পকে কেবল শক্তিশালীই করে, তাদের লড়াইয়ের প্রেরণা অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি করে। ফলে যুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে, মুজাহিদরা আরও বীরত্বের সাথে লড়াই করেন, তারা শত্রুর আরও বেশি ক্ষতি করেন, যা সমগ্র বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে। আর মুজাহিদিনরা এখনও তাদের অঙ্গীকার এবং শপথের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কেননা আমরা একটি আদর্শ ও বিশ্বাসের জন্য লড়াই করি।”

সর্বশেষ আবু উবাইদাহ হাফিজাহুল্লাহ্ বলেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে আমাদের মুজাহিদদের পবিত্র, নিরীহ জনগণের রক্ত ​​এবং পবিত্র ত্যাগ দখলদারদের উপর বোঝা হয়ে থাকবে, যতক্ষণ না আমাদের ভূমি এবং আমাদের পবিত্র স্থান থেকে শত্রু বাহিনীকে অপসারণ করা হয়।”

উল্লেখ্য যে, আল-কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান/কমান্ডার-ইন-চিফ মোহাম্মদ দেইফ মূলত ছায়ায় ছিলেন, খুব কমই তার ছবি বা ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছিল। তিনি জায়োনিস্ট বাহিনীর অসংখ্য লক্ষ্যবস্তু ও হত্যার প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন, এবং একজন সামরিক নেতা হয়ে ওঠেন। তিনি তাঁর প্রভাবশালী বিরল বক্তব্য আর দক্ষ নেতৃত্বের জন্য পরিচিত ছিলেন।

১৯৯৩ সালে তিনি ফিলিস্তিনে প্রথম সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের পদক্ষেপ নেন। এসময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেন, কার্লো এবং স্থানীয় পিস্তল দিয়ে শুরু করে, হ্যান্ড গ্রেনেড এবং এনারগা শেল পেরিয়ে আল-ইয়াসিন ১০৫ শেল পর্যন্ত পৌঁছান। তৈরি করেন রকেট, মর্টার শেল এবং ড্রোন, যা জায়োনিস্টদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।

এরপর ২০২১ সালে মোহাম্মদ দেইফের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, যখন তিনি ইসরায়েলকে শেখ জাররাহ থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার এবং আল আকসা মসজিদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য একটি আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। তখন জায়োনিস্ট ইসরায়েল মোহাম্মদ দেইফের দাবি মেনে নেয়নি। ফলে মুজাহিদিনরা অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের শহরগুলিতে রকেট বৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান।

১টি মন্তব্য

  1. وللحرّيّة الحمراء باب بكلّ يد مضرّجة يُدقُّ
    (আর রক্তাক্ত হাতে কড়া না নাড়া হলে স্বাধীনতার লাল কপাট খুলবে না)
    – আবু ইব্রাহিম ইয়াহইয়া আস-সিনওয়ার (তাকাব্বালাল্লাহ)।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানের হেরাতে টেক্সটাইল কারখানায় তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সুতা
পরবর্তী নিবন্ধওয়াশিংটনে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষে বেঁচে নেই কেউ