যে কারণে মার্কিন নৌ-ঘাঁটিতে হামলা করেছিলেন সৌদি বৈমানিক

0
1894
যে কারণে মার্কিন নৌ-ঘাঁটিতে হামলা করেছিলেন সৌদি বৈমানিক

‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নামে সারাবিশ্বে মুসলিমদের উপর বর্বরতম আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বসন্ত্রাসী আমেরিকা। সন্ত্রাসবাদের মোড়ল আমেরিকার আসল চেহারা আজ বিশ্ববাসীর কাছে সুস্পষ্ট। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের উম্মাহদরদী মুসলিমরা আমেরিকাকে ইসলাম ও মুসলিমদের প্রধান শত্রু হিসাবে চিনে নিতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বসন্ত্রাসী আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে উন্মুখ হয়ে আছে মুমিনদের অন্তরগুলো। বিশ্বকুফর শক্তির কেন্দ্র, সাপের মাথা আমেরিকার উপর যেখানে সুযোগ পাওয়া যায়, সেখানেই হামলা চালাতে বদ্ধ পরিকর মুসলিম উম্মাহ। ৯/১১ এর বরকতময়ী হামলার পর বার বার প্রতিবাদী মুসলিমরা আঘাত হেনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে, আলহামদুলিল্লাহ। মুহাম্মাদ সায়িদ আশ-শামরানি রহিমাহুল্লাহ তেমনি এক অকুতোভয় বীর। গত ৬ই ডিসেম্বর আমেরিকার এক নৌ-ঘাঁটিতে হামলা চালান প্রিয় নবীর জন্মভূমি থেকে উঠে আসা ইসলামের এই সেনা।

কে ছিলেন মুহাম্মাদ সায়িদ আশ-শামরানি?

২১ বছর বয়সী মুহাম্মাদ সায়িদ আশ-শামরানি রহিমাহুল্লাহ ছিলেন সৌদি বিমান বাহিনীর একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট। বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিতে সৌদি বাহিনীর সদস্য হিসাবে তিনি ২০১৭ সালে আমেরিকায় যান। ২০১৮ সালে সৌদি আরবে ছুটি কাটানোর পর, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে আবার আমেরিকায় ফিরে যান তিনি। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসাবে দীর্ঘদিন ধরেই নির্যাতিত ও আক্রান্ত উম্মাহর ব্যাথায় অত্যন্ত বিচলিত ছিলেন সায়িদ আশ-শামরানি। তিনি সিদ্ধান্ত নেন উম্মাহর উপর আগ্রাসন চালানো, লক্ষ লক্ষ মুসলিমের হত্যাকারী আমেরিকার উপর পাল্টা হামলা চালানোর। তিনি সিদ্ধান্ত নেন আমেরিকার দালাল আলে-সাউদের সেনাবাহিনীর বদলে আল্লাহর সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার। মাজলুমদের পক্ষ হয়ে ৬ই ডিসেম্বর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার পেনসাকোলাতে অবস্থিত নৌ বাহিনীর এক স্টেশনে সন্ত্রাসী মার্কিনীদের উপর ‘লোন’ হামলা চালিয়ে ৩ মার্কিনীকে খতম করেন এবং আরো প্রায় ৮ মার্কিন সন্ত্রাসীকে আহত করেন ইসলামের এই বীর সৈনিক।

কেন মার্কিনীদের উপর হামলা?


কেবল গত এক শতকে বিশ্বসন্ত্রাসী আমেরিকা যে পরিমাণ অপকর্ম করেছে, যে পরিমাণ নিরীহের খুন ঝরিয়েছে, ইতিহাসের পাতায় তা অত্যন্ত বিরল। এসকল অপকর্মের কারণে সন্ত্রাসী আমেরিকাকে বিশ্ববাসী চিরদিন ঘৃণাভরে স্মরণ করবে। মুসলিমদের উপর তো বটেই এমনকি অপরাপর অন্যান্য জাতির উপরও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে ভয়ংকর গণহত্যা চালিয়েছে এবং চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বসন্ত্রাসী আমেরিকা। মাজলুমদের বিপক্ষে জালিমের হাতকে পোক্ত করছে এই আমেরিকা। তারা ইরাক, আফগানিস্তান, সোমালিয়াসহ পৃথিবীর বহু মুসলিম অধ্যুষিত দেশকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে এবং করে যাচ্ছে, ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিকে নাপাক ইহুদী ইসরাঈলীদের হাতে হস্তান্তর করেছে। সম্পূর্ণ পৃথিবীকেই এক ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে কুফরী বিশ্বের নেতা আমেরিকা।

টুইট বার্তায় যা বলেছিলেন আশ-শামরানি

মার্কিনী সন্ত্রাসীদের উপর হামলা করার পূর্বে প্রিয় ভাই মুহাম্মাদ সায়িদ আশ-শামরানি রহিমাহুল্লাহ টুইট বার্তা দেন। এ বার্তায় সুস্পষ্টভাবে তিনি তুলে ধরেন তাঁর এ বরকতময় হামলার পিছনের কারণগুলো। টুইট বার্তায় আশ-শামরানি বলেন,
‘আমি অন্যায়ের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে, আর আমেরিকা সামগ্রিকভাবে অন্যায় ও অশুভ শক্তির জাতিতে পরিণত হয়েছে।’
তোমরা ‘অন্যদের বিরুদ্ধে সীমালঙ্ঘন করে যাবে অথচ সামান্যও প্রতিফল ভোগ করবে না, এটাই কি তোমাদের প্রত্যাশা?’’
না, কেবল আমেরিকান হওয়ার কারণে আমি তোমাদের বিরুদ্ধে নই। তোমাদের ব্যক্তি কিংবা সামাজিক স্বাধীনতার কারণেও আমি তোমাদেরকে ঘৃণা করি না। বরং প্রতিনিয়ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে এবং মানবতার বিরুদ্ধে তোমরা যে অপরাধ করে চলছো, এবং অন্যান্য অপরাধীদের সাহায্য ও অর্থায়ন করে চলেছো সে কারণেই আমি তোমাদের ঘৃণা করি। আমি দেখেছি ইস্রায়েলের প্রতি তোমাদের সমর্থন, আমি দেখেছি বহু দেশে তোমার সেনাদের হামলা, আমি গোয়ান্তানামো বে দেখেছি। আমি দেখেছি ক্রুজ মিসাইল, ক্লাস্টার বোমা এবং ড্রোন। আমি দেখেছি এ সবের প্রতি তোমাদের সমর্থন আর সক্রিয় অংশগ্রহণ। আর তাই আমি তোমাদের ঘৃণা করি।’’

সায়িদ আশ-শামরানি এসময় উল্লেখ করেন ইমাম ওয়াল মুজাদ্দিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ এর সেই বিখ্যাত উক্তি। শাইখ রাহিমাহুল্লাহর কথা নকল করে আশ-শামরানি বলেন, “যতোক্ষণ পর্যন্ত না আমরা ফিলিস্তিনে সত্যিকার অর্থে নিরাপত্তা পাবো, যতোক্ষণ না আমাদের ভূমিগুলো থেকে আমেরিকান সেনা বের হবে, ততোক্ষণ তোমরা নিরাপদে থাকতে পারবে না।”

এর আগেও মার্কিন সন্ত্রাসীদের উপর আমেরিকার অভ্যন্তরেই একাকী হামলা চালিয়েছেন উম্মাহদরদী মুসলিম বীরেরা। ২০০৯ সালের ৫ই নভেম্বর আমেরিকার টেক্সাসের ফোর্ট হোডে মার্কিন সামরিক ক্যাম্পে হামলা চালান মেজর নিদাল হাসান। ঐ বরকতময় হামলায় নিহত হয় ১৩ মার্কিনী, আহত হয় আরো প্রায় ৩০ সন্ত্রাসী। মেজর নিদাল হাসান ছিলেন শহীদুদ দাওয়াহ শাইখ আনওয়ার আল-আওলাকি রহিমাহুল্লাহ এর নির্দেশনাপ্রাপ্ত।

এভাবেই, পশ্চিমা সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলায় নির্যাতিত উম্মাহর মাঝে আশার আলো হয়ে আছেন উম্মাহর ঐসকল সাহসী বীরেরা; যাঁরা দুশমনের দেশে নিরাপত্তাবেষ্টিত সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ঢুকে দুশমনের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তোলেন, তাদের হৃদয়রাজ্যে আঘাত হানেন। বিশ্বসন্ত্রাসী আমেরিকার দম্ভকে চূর্ণ করে দেন, এবং সেই শপথ বাস্তবায়িত করেন – “সেই আল্লাহর শপথ! যিনি আসমানসমূহকে সমুন্নত করেছেন কোন স্তম্ভ ছাড়াই। যতোক্ষণ পর্যন্ত না আমরা ফিলিস্তিনে সত্যিকার অর্থে নিরাপত্তা পাবো, যতোক্ষণ না আমাদের ভূমিগুলো থেকে আমেরিকান সেনা বের হবে, ততোক্ষণ আমেরিকা ও আমেরিকার অধিবাসীরা নিরাপদ থাকতে পারবে না।”

২১ বছরের টগবগে যুবক, প্রিয় ভাই মুহাম্মাদ সায়িদ আশ-শামরানি কালেমার পতাকাতলে একতাবদ্ধ বীর সেনানীর তালিকায় যুক্ত হওয়া নতুন এক নাম। ওয়াহন ও পরাজিত মানসিকতায় আক্রান্ত উম্মাহ আজ তাঁর কদর যদি নাও করে, তবুও আগামীর বিজয়ী প্রজন্ম আল্লাহর দ্বীনের এ সেনাকে স্মরণ করবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ভরে।
আল্লাহ্ সায়িদ আশ-শামরানিকে জান্নাত দান করুন, এবং এই উম্মাহর মা-দের গর্ভে তাঁর মতো আরো সন্তান দান করুন। আমীন।

 

 

 

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিক্ষোভের মাঝেই ভারতীয় রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে আইনে পরিণত হল মুসলিম বিরোধী নাগরিকত্ব বিল
পরবর্তী নিবন্ধএবারে দিল্লির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালালো মুশরিক বাহিনী