মাটিতে শুয়ে গেছে শেয়ারবাজার

0
1206
মাটিতে শুয়ে গেছে শেয়ারবাজার

দেশের শেয়ারবাজার এখন মাটিতে শুয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই শেয়ারের দর নামছে। কেউ কোনো দিশা দিতে পারছেন না। পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে কর্তৃপক্ষ উদাসীন।

ফলে ভয়াবহ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে শেয়ারবাজার। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ৮৭ কমে ৪ হাজার ৩৬ পয়েন্টে নেমেছে। ২০১৩ সালে চালু করা সূচকটির ভিত্তি পয়েন্টের নিচে অবস্থান করছে।

চলতি সপ্তাহের তিন দিনের লেনদেনে সূচক কমেছে ১৮৬ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ২৭৪ পয়েন্ট। বাজারের এই  চরম দৈন্যদশায় আতঙ্কিত ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা মতিঝিলে ডিএসইর সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেছে।

২ জানুয়ারি ডিএসইর পরিচালন পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকের পরও কোনো উন্নতি দেখা যায়নি শেয়ারবাজারে।

বাজারে দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা ও ক্রেতা সংকটে ধারাবাহিক দরপতন চলছে। চলতি বছরের আট দিনে ডিএসই প্রধান সূচক কমেছে ৪০০ পয়েন্টের বেশি

আগের সপ্তাহের পাঁচ দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমে ২৬১ পয়েন্ট। এর মধ্যে মঙ্গলবার কমেছে ৮৭ পয়েন্ট। সপ্তাহের তৃতীয় দিনের লেনদেন শুরু পতন দিয়ে। একপর্যায়ে সূচক ১০৩ পয়েন্ট পর্যন্ত কমে যায়, লেনদেন শেষে ৮৭ পয়েন্ট কমে স্থির হয় ৪ হাজার ৩৬ পয়েন্টে। এই বড় পতনের প্রতিবাদে লেনদেন শেষ হওয়ার আগেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানান। তারা দরপতনের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করেন।

শেয়ারের ক্রেতা সংকটে বাজারে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। গত বছরের ৫ ডিসেম্বরের পর ডিএসইর লেনদেন আর ৪০০ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে আটকে রয়েছে। সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৬২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বাজার লেনদেন শেষে দেখা গেছে, হাতবদল হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। লেনদেনকৃত ৩৫৫টি কো¤পানির মধ্যে ২৯৩টির শেয়ার দর কমে যায়। দাম বেড়েছে মাত্র ৩২টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩০টি কোম্পানির শেয়ার। সিএসই সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৭৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ২৯৫ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৪৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২১টির, কমেছে ২০৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির।

ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক হিসেবে ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৫৫ ভিত্তি পয়েন্ট হিসেবে চালু করা হয় ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। শুরুর অবস্থান থেকে সূচকটি এখন ১৯ পয়েন্ট কম রয়েছে। প্রধান মূল্য সূচকের থেকেও করুণ দশা বিরাজ করছে ডিএসইর অপর সূচকগুলোর। ব্লু চিপস হিসেবে বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ এক হাজার ৪৬০ পয়েন্ট নিয়ে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়া সূচকটি এখন এক হাজার ৩৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার এ সূচকটি কমেছে ২৬ পয়েন্ট। ডিএসইর আরেক সূচক ডিএসই ইসলামী শরিয়াহ্ভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি এ সূচকটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ সূচকটি ছিল ৯৪১ পয়েন্টে। সর্বশেষ লেনদেন শেষে সূচকটি ২২ পয়েন্ট কমে ৯০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে অফিসিয়ালি ডিএসইর ওয়েবসাইটে সূচকটি উন্মুক্ত করা হয়। ৪০টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হওয়া সূচকটির ভিত্তি ভ্যালু ধরা হয় ১০০০ পয়েন্ট। তবে এখন সূচকটি ৮১১ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সবকটি মূল্য সূচকের এমন উল্টো যাত্রায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। অনেক বিনিয়োগকারী ধারণ করা শেয়ারের দাম কমিয়েও বিক্রি করতে পারছেন না। এতে দিন যত যাচ্ছে শেয়ারের দাম তত কমছে, আর ভারী হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা।

বাজারের করুণ পরিস্থিতি কেউ কোনো দিশা দিতে পারছেন না। কয়েক দিন ধরে ভয়াবহ পতনের প্রতিকারে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) ও ডিএসইর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এখন বাজারের বেহাল অবস্থা চরমে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীসহ বৃহৎ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সবাই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এদিকে ডিএসইতে এমডি নিয়োগ কেন্দ্র করে পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে বাজার আরও বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

এদিকে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতনের যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বিশ্লেষকরা। পতনের প্রবণতা দেখে অনেকেই বিস্মিত। তবে তারা মনে করছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট আর সুশাসনের অভাবে শেয়ারবাজারে এ দুরবস্থা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বাজারের ওপর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন যে, তারা আর কোনো ভরসা পাচ্ছেন না। এটা অশনিসংকেত।

সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবারে বিবাড়িয়ায় মাদরাসা ছাত্রদের ওপর কাদিয়ানিদের হামলা
পরবর্তী নিবন্ধভারতে ২কোটি নতুন চাকরি তো দূর, চলতি বছরে চাকরি কমবে ১৬লক্ষ!