বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের এক নতুন ও বিপদজনক পর্যায় (১)

0
4081
বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের এক নতুন ও বিপদজনক পর্যায় (১)

বাংলাদেশে

হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের

এক নতুন ও

বিপদজনক পর্যায়

(১)

 

পূর্বকথা

বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থান এবং এর পরিধি নিয়ে আস-সাহাব মিডিয়া উপমহাদেশের ‘নাওয়ায়ে গাযওয়ায়ে হিন্দ’ ম্যাগাজিনের সেপ্টেম্বর সংখ্যায় একটি বিশেষ প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। “বাংলাদেশ মে হিন্দুতওয়া কা খতরনাক মারহালা” (بنگلہ دیش میں ہندوتوا کا خطرناک مرحلہ) শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন বাংলাদেশে জামাআত কায়িদাতুল জিহাদ উপমহাদেশের মুজাহিদগণ। উপমহাদেশে তাওহিদবাদী মুসলিমদের সাথে সাথে হিন্দুত্ববাদী মুশরিকদের যে অমোঘ সংঘাতের প্রেক্ষাপট ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে তার বাস্তবতা অনুধাবনের জন্য, উপমহাদেশে জিহাদী আন্দোলনের সামগ্রিক চিত্র সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্য ও বিশ্লেষণ ইনশাআল্লাহ উপকারী হবে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ বিশ্লেষণের প্রথম পর্বের অনুবাদ – বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের এক নতুন ও বিপদজনক পর্যায় – শিরোনামে প্রকাশ করা হল।

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম

সকল প্রশংসা কেবলই আল্লাহর, সালাত ও সালাম বর্ষিত হক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও তাঁর সাহাবীগণের উপর।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا

“তুমি মানবমন্ডলীর মধ্যে ইয়াহুদী ও মুশরিকদেরকে মুসলিমদের সাথে অধিক শক্রতা পোষণকারী পাবে…” [সুরা মায়েদা, ৮২]

বহুবার উম্মাহর সামনে মহান আল্লাহ্‌ তা’আলার এ পবিত্র আয়াতের সুগভীর বাস্তবতা প্রকাশিত হয়েছে, এবং বহুবার উম্মাহ তা বিস্মৃত হয়েছে। বর্তমানে এ ভূখণ্ডে এবং সমগ্র উপমহাদেশে এ আয়াতে বর্ণিত সত্যের বাস্তব চিত্র আমরা আবারো দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী আদর্শ ও আন্দোলনের প্রকাশ্য উত্থান ঘটছে, এবং এ কাজ এরই মধ্যে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। হয়তো অতি শীঘ্রই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, তাগুতের অনুগত বাহিনীর পরিবর্তে এই উগ্র হিন্দুরা মুসলিমদের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে এ ভূখন্ডে আবির্ভূত হবে।

বাংলাদেশকে ঘিরে উপমহাদেশের হিন্দুদের ষড়যন্ত্র আজকের না। আজ ৭০-৮০ বছর ধরেই তা চলছে। এ ষড়যন্ত্রের সর্বশেষ পর্যায়ও চলছে প্রায় এক যুগ ধরে। হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর গত ১১ বছর ধরে প্রায় নির্বিঘ্নে হিন্দুরা তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে গেছে। এ সময়ে ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে। বিচার বিভাগ, প্রতিরক্ষা বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী সব জায়গাতে ভারতের অনুগত নামধারী মুসলিমদের পাশাপাশি বসানো হয়েছে অনেক হিন্দুকেও। হিন্দুদের গণহারে সরকারী চাকরীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, দেয়া হয়েছে যত্রতত্র পূজা করার সুযোগ, হিন্দুদের পূজা মন্ডপ প্রতি ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, পূজা উপলক্ষে মুসলিমদের কাছ থেকে নেয়া ট্যাক্স থেকে দেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বরস্বতি পূজা ও হোলি পূজা উদযাপন শুরু হয়েছে, স্কুল-কলেজে  হিন্দু কবি সাহিত্যকদের সাম্প্রদায়িক লেখনী পড়ানো হচ্ছে, সম্পত্তি প্রত্যাপর্নের নামে মুসলমানের সম্পত্তি তুলে দেয়া হচ্ছে হিন্দুদের হাতে। প্রশাসন হাত ছাড়া হয়ে গেছে অনেক আগেই। সেই সাথে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামরিক চুক্তি, ট্রানজিট ইত্যাদির মাধ্যমে পাকাপোক্ত করা হয়েছে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ। দেশের মিডিয়াগুলো প্রায় একচেটিয়াভাবে ভারতের দালালি করে যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু কিছু মিডিয়া, যারা আমেরিকার দালালি করতে চায়, তাদেরও কাজ করতে হয় ভারতীয় প্রভুদের খুশি রেখে। দেশের পুঁজি বাঁজার, পণ্য বাঁজার এবং অর্থনীতিও চলে গেছে ভারতীয় চক্রের হাতে।

মোটকথা বাংলাদেশকে নামেমাত্র একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে রেখে একে সম্পূর্ণভাবে ভারতের উপনিবেশে পরিণত করার প্রক্রিয়া গত ১১ বছর ধরে গুছিয়ে এনেছে ভারত। তবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করার পর বাংলাদেশকে ঘিরে হিন্দু চক্রান্ত এখন প্রবেশ করেছে নতুন এক পর্যায়ে। নিজেদের অনুগত আওয়ামী লীগ এবং হাসিনাকেও এখন আর তোয়াক্কা করছে না হিন্দুত্ববাদী শক্তি। দীর্ঘদিন ধরে শক্তি সঞ্চয় ও প্রস্তুতির পর হিন্দুরা সর্বসম্মুখে তাদের ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে এবং মুসলিমদের চ্যালেঞ্জ করতে এখন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে।

এ প্রতিবেদনে আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে বাংলাদেশে চলা হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার কার্যক্রম ও প্রভাবের একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করবো। সেই সাথে বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার জন্য উপস্থাপন করবো সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাপ্রবাহ ও উদাহরণ।

প্রশাসনে হিন্দুদের দৌরাত্ম্য

পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশেরর মোট জনসংখ্যার ১০.৭% হল হিন্দু[1]। হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের ভাষ্য অনুযায়ী সরকারী চাকুরেদের ২৫% হল সংখ্যালঘু[2]। কিন্তু প্রশাসনে হিন্দুদের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্যাবিনেট সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী ২০১৬ তে প্রশাসনের কমপক্ষে ২৯% চাকরি ছিল হিন্দুদের দখলে[3]। গত ৩ বছরে এ সংখ্যা আরো বেড়েছে। বর্তমানে প্রশাসনের ৩৫% এর কাছাকাছি পদ দখল করে আছে হিন্দুরা।

হাসিনা সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে প্রশাসনে স্থান পাওয়া হিন্দুরা সাধ্যমত চেষ্টা করছে নিজের স্বজাতির লোকজন দিয়ে প্রশাসনকে ভরে ফেলতে। পরীক্ষক, পরিদর্শক, ভাইবা বোর্ড সদস্যসহ বিভিন্ন পদে থাকা হিন্দুরা নানান রকম অনিয়মের মাধ্যমে অন্যান্য হিন্দুদের প্রশাসনে জায়গা করে দিচ্ছে, এমন অনেক খবর পাওয়া গেছে। জাতীয় পত্রিকাতেও এসব নিয়ে নিউজ হয়েছে।  এছাড়া প্রশাসনে পদোন্নতির জন্য প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে হিন্দুদের। বছর কয়েক আগে নতুন পদ সৃষ্টি করে প্রমোশন দেয়া হয়েছে ৬৫ জনকে। এর মধ্যে ৪৫ জন হিন্দু। সরকারের পক্ষ থেকে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। সেখানেও প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে হিন্দুদের। এভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে ভবিষ্যৎ পদোন্নতি। এ প্রক্রিয়া চলছে দীর্ঘদিন, প্রায় ১০ বছর ধরে। এভাবেই বিভিন্ন স্ট্র্যাটিজিক পজিশানে পৌছে গেছে হিন্দুরা। দেশজুড়ে হিন্দুদের প্রভাব বৃদ্ধি ও হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে প্রশাসনে জায়গা করে নেয়া এই হিন্দুরা।

বর্তমানে হাসিনার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুই উপদেষ্টারই একান্ত সচিব হল হিন্দু। হাসিনার বিশেষ সহকারীও একজন হিন্দু। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে যে মন্ত্রনালয় আছে সেখানেও একদম উপরের দিকের পদগুলো হিন্দুদের দখলে।

প্রশাসনের প্রতিটি পর্যায়ে খুব হিসেবনিকেশ করে বসানো হয়েছে হিন্দুদের। রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ – প্রতিটি ডিসি অফিসের উচ্চ পর্যায়ে এখন কোন না কোন হিন্দু আছে। বিশেষভাবে টার্গেট করে শিক্ষাখাতে জায়গা করে নিয়েছে অনেক হিন্দু। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের চেয়ারম্যান এক হিন্দু। এই মালাউনের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হচ্ছে, চলছে হিন্দুয়ানিকরণ।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ থানা ও জেলায় ওসি ও এসপি পদে বসানো হয়েছে হিন্দুদের। ১৯৭১ থেকে পরবর্তী ৩৩ বছর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে কোন কাফির/মুশরিককে নিয়োগ দেয়া হয়নি। কিন্তু ২০১৪ থেকে স্পেশাল ব্র্যাঞ্চেও হিন্দুদের নিয়োগ দেয়া শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ডিবির প্রধানও নিযুক্ত করা হয়েছে এক হিন্দুকে। এসব হিন্দু অফিসাররা নিয়মিত মুসলিমদের উপর হম্বিতম্বি করে। হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করা হলে ফোন আসে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে কিংবা ভারতীয় হাইকমিশন থেকে।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে বাংলাদেশে কাজ করছে প্রায় ১৫/২০ লক্ষ হিন্দু। গার্মেন্টস সেক্টরসহ বিশেষ কিছু ইন্ডাস্ট্রিতে টপ পজিশনগুলো এই হিন্দুরা দখল করে আছে।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল বাংলাদেশের হিন্দুদের ৫০% এর বেশি হল নিম্ন বর্ণের হিন্দু, যাদের দলিত বা ‘হরিজন’ বলা হয়। এদের বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত, সামাজিকভাবে এবং চাকরির দিক দিয়ে এদের অবস্থা ভালো না। উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা নিয়মিত এদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে। সরকারী চাকরিতে এই ৫০% এর অবস্থান অত্যন্ত নগণ্য। সরকারী চাকরিগুলো যারা দখল করেছে তারা হল তুলনামূলক “উচ্চ বর্ণের’ হিন্দু। যার অর্থ, প্রশাসনের ৩৫% কিংবা তারও বেশি পদ দখল করে নিয়েছে এমন একটি গোষ্ঠী যারা মোট জনসংখ্যার ৫% চেয়েও কম। এই উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা ঐতিহাসিকভাবেই ভারতের দালালি এবং হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজ করে আসছে। আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করা হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সিনহাও ছিল হিন্দু। এই সিনহার পদ প্রাপ্তি এবং ক্ষমতার মূল উৎস ছিল ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে তার সম্পর্ক।  সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় বিচার বিভাগের অনেক রায় ডিকটেট করা হতো ভারতীয় হাইকমিশন থেকে।

কিছুদিন আগে একজন সাংবাদিকের অনুসন্ধানী রিপোর্টে একটি চিঠির কথা উঠে এসেছে। হিন্দু সংগঠন ইসকনের পক্ষ থেকে সরকারী চাকরি করা হিন্দুদের এ চিঠি দেয়া হচ্ছে। চিঠির মাধ্যমে প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে নিজ প্রশাসনিক অবস্থান থেকে ইসকনের কথা অনুযায়ী কাজ করার। বিনিময়ে ইসকনের পক্ষ থেকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সব ধরণের সাহায্য। সেই সাথে মাসে মাসে দেয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে যে বেতন দেয়া হয় তার ৬০% বাড়তি। উল্লেখ্য স্বতন্ত্রভাবে এ চিঠির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে যদি এ বক্তব্য আসলেই সঠিক হয় তবে তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না। (ইসকন নিয়ে আরো কথা পড়ে আসছে)

মোট কথা, যায়নিস্ট ইহুদীদের আদলে, একই ধরণের কৌশল অবলম্বন করে, এবং হাসিনা সরকারের মদদে সঙ্ঘবদ্ধভাবে হিন্দুরা বাংলাদেশের প্রশাসন দখল করে নিয়েছে। সাম্প্রতিক যেসব ঘটনা আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেগুলো হল হিন্দুদের এই প্রশাসনিক ও সামাজিক প্রভাবের প্রত্যক্ষ ফলাফল।

বাংলাদেশে হিন্দুদের সাম্প্রতিক ঔদ্ধত্য

প্রায় এক দশক ধরে অনুপ্রবেশের নীতির মাধ্যমে প্রশাসনে যে প্রভাব হিন্দুরা অর্জন করেছে তার প্রকাশ এখন ঘটতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনা থেকে এ বাস্তবতা অনুধাবন করা যায়।

· সম্প্রীতি বাংলাদেশ

এ বছরের মে মাসে প্রায় সব জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় এক যোগে প্রকাশিত হয় একটি বড় আকারের বিজ্ঞাপন। ‘সন্দেহজনক জঙ্গী সদস্য সনাক্তকরণের নিয়ামকসমূহ’ শিরোনামের এ বিজ্ঞাপনে ইসলামের নানা বিধিবিধান ও বুনিয়াদি বিষয়কে উপস্থাপন করা হয় উগ্রবাদ ও র‍্যাডিকেলাইযেইশানের চিহ্ন হিসেবে। এ বিজ্ঞাপনে যেসব বিষয়কে জঙ্গিবাদের চিহ্ন বলা হয়েছে তার মধ্যে আছে –

  • গণতন্ত্রকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করা,
  • ইসলামী শাসন, শরীয়াহ, খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার প্রতি আগ্রহ থাকা,
  • হঠাৎ করে ধর্মচর্চা শুরু করা,
  • দাড়ি রাখা,
  • টাকনুর উপর কাপড় রাখা,
  • শিরক-বিদাতের বিরুদ্ধে বলা,
  • বিভিন্ন জাতীয় দিবসের নামে যেসব শিরক প্রভাবিত অনুষ্ঠান চালু আছে সেগুলোর বিরোধিতা করা,
  • গাযওয়াতুল হিন্দ নিয়ে আগ্রহ থাকা,
  • আল মাহদি ও দাজ্জালের আগমন নিয়ে আগ্রহ থাকা,
  • বিভিন্ন দেশে চলমান মুসলিম নির্যাতন নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা,
  • শাইখ আনওয়ার আল আওলাকি, আমীরে মুহতারাম শাইখ আসীম উমার, শাইখ জসীমুদ্দিন রহমানি, উস্তাদ তামিম আদনানির লেকচার শুনা,
  • হালাকা আয়োজন করা,
  • মিলাদ-শবে বরাতের বিরোধিতা করা,
  • ইসলাম পালনের পাশাপাশি শরীরচর্চার প্রতি আগ্রহী হওয়া ইত্যাদি।

এ বিজ্ঞাপনটি প্রচার করা হয় ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে। বছর তিনেক আগে শুরু হওয়া এ সংগঠনের আহ্বায়ক হল পীযূষ বন্দোপাধ্যায় নামের এক ইসলামবিদ্বেষী হিন্দু। শাহবাগের আন্দোলনের সময়ে এই হিন্দু সর্বসম্মুখে একটি ইসলামবিদ্বেষী কবিতা আবৃত্তি করেছিল। ২০১৬তে আরো কয়েকজন হিন্দুর সাথে মোদির সাথে সাক্ষাতে গিয়ে ‘বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর চলা অত্যাচার’ নিয়ে অনেক দেনদরবার করেছিল এই মালাউন। তার সম্পর্ক আছে ইসকন নামের সংগঠনের সাথেও। পীযূষ ছাড়াও এ সংগঠনে আছে মুসলিম নামধারী বিভিন্ন ভারতীয় দালাল বুদ্ধিজীবি। এছাড়া আছে খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন যাজক, পুরোহিত ও নেতা।

আলহামদুলিল্লাহ এ বিজ্ঞাপনটি প্রচারিত হবার পর মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে এর সমালোচনা করে সাধারণ মুসলিমরা। তার কয়েকদিন পর পত্রিকায় আবার বিজ্ঞাপন দিয়ে সম্প্রীতি বাংলাদেশ দাবি করে এ বিজ্ঞাপনটি তারা দেয়নি, কাদের পক্ষ থেকে এ বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে তারা জানেনা। জানা গেছে, এ ঘটনার পর ডিজিএফআই- এ পীযূষকে তলব করা হয়েছিল।

·  হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ/প্রিয়া সাহা

১৭ জুলাই হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ‘হিন্দু নির্যাতন’ নিয়ে ট্রাম্পের কাছে নালিশ করে প্রিয়া সাহা নামের এক হিন্দু মহিলা। মহিলা ট্রাম্পকে বলে বাংলাদেশ থেকে ৩৭ মিলিয়ন (৩ কোটি ৭০ লক্ষ) হিন্দু নিখোজ/নিরুদ্দেশ/গুম (disappeared) হয়েছে। আর এ সবই করেছে মৌলবাদী মুসলিমরা বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় আসা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। প্রিয়া সাহা নামের এ মহিলা বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার স্বামী উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী। প্রিয়া সাহার বক্তব্যের পর দেশে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বক্তব্য সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়াতে আওয়ামী লীগের লোকজনও বিরোধিতা করে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা ও সোশ্যাল মিডিয়াতে জনপ্রিয় এক আইনজীবি তার বিরুদ্ধে মামলা করারও চেষ্টা করে। কিন্তু হিন্দু নিয়ন্ত্রিত কোর্ট তার মামলা গ্রহণ না করে বাতিল করে দেয়। তারপর উল্টো তার বিরুদ্ধে মামলা করে দেয় হিন্দুরা। ঘটনার প্রথম দিন সরকারের মন্ত্রীদের কাছ থেকে শোনা যায় অনেক হম্বিতম্বি। দেশদ্রোহের মামলা করা হবে, বিচার করা হবে ইত্যাদি। কিন্তু দু দিন পরেই পাল্টে যায় সুর। এবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা শুরু হয় তার বিরুদ্ধে কোন মামলা করা হবে না, তার বক্তব্য দেশদ্রোহীতা না, সে চাইলে দেশে আসলে তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে, ইত্যাদি।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে প্রথমে বলা হয় যে এ বক্তব্য প্রিয়া সাহার নিজের। কিন্তু একই সংগঠনের যুক্তরাষ্ট্র শাখা প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে সমর্থন জানায় এবং এ বক্তব্যের প্রশংসা করে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান পরিষদ নামের এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৮তে গঠিত। নামে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান হলেও, এটি আসলে হিন্দুদের একটি সংগঠন, যারা সবসময় ভারতের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে আসছে। এ সংগঠনের নেতা রানা দাশগুপ্ত ২০১৬ তে পীযুষের সাথে ভারতে গিয়ে মোদির কাছে দেনদরবার করে।

এ সংগঠনের আমেরিকা শাখার নেতারা কয়েক বছর আগে এক প্রেস কনফারেন্সে দাবি করে যে বাংলাদেশে গরু জবাই আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সিনহা সরকারের চাপে পালিয়ে আমেরিকা গেলে, সেখানে তার আওয়ামী বিরোধী বইয়ের প্রকাশনায় সব ধরণের সহযোগিতা করা হয় এই সংগঠনের পক্ষ থেকে।

দেশের হিন্দুরা শুরু থেকেই প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে সমর্থন দেয়। কেউ কেউ বড়জোড় এটুকু বলে যে প্রিয়া সাহার মূল বক্তব্য ঠিক, তবে সংখ্যার বেলায় সে কিছুটা ভুল করে ফেলেছে। অন্যদিকে প্রিয়া সাহার বক্তব্যের পর উগ্রবাদী হিন্দুদের পক্ষ থেকে জোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে বাংলাদেশ থেকে আসলেই ৩ কোটি ৭০ লক্ষ নাগরিক নিখোজ হয়েছে, এবং এরা সবাই আশ্রয় নিয়েছে ভারতে। বিশেষ করে তারা দাবি করে যে বাংলাদেশে থেকে নিখোজ হওয়া এ নাগরিকদের অনেকেই আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরাসহ পূর্ব ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। একটি হিন্দু পত্রিকায় সরাসরি দাবি করা হয়েছে যে বাংলাদেশে থেকে পালিয়ে যাওয়া অনেকেই আসামে আশ্রয় নিয়েছে। এভাবে আসামের ৩০/৪০ লক্ষ মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল করার যে পরিকল্পনা বিজেপি নিয়েছে সেটার পক্ষে একটা প্রচারণা তৈরি চেষ্টা করছে এদেশীয় হিন্দুরা।


[1] বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা এত বাড়ল কীভাবে?, আকবর হোসেন, বিবিসি বাংলা, ২৩ জুন ২০১৬

[2] “প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে যে অভিযোগ করেছেন তা একেবারেই মিথ্যা এবং বিশেষ মতলবে এমন উদ্ভট কথা বলেছেন। আমি এমন আচরণের নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীর ২৫% হচ্ছে ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু। যদিও মোট জনসংখ্যার ১২% হলেন সংখ্যালঘু’-এ কথা বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেওর উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য রেখেছেন সমাপনী সমাবেশে।” সরকারী কর্মচারীদের ২৫ শতাংশ পদে হিন্দুরা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২১শে জুলাই, ২০১৯।

[3] খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের আন-অফিসিয়াল অঙ্গসংগঠন ওলামা লীগ ২০১৫ তে সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘু নিয়োগের একটি চিত্র পেশ করেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী,

গত ২০১৩ সালের অক্টোবরে পুলিশের এসআই পদে নিয়োগে ১৫২০ জনের মধ্যে হিন্দু নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৩৩৪ জন যা মোটের ২১.৯৭ শতাংশ। গত ২০১১ সালে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইতে নিয়োগের ৯৩ জনের মধ্যে হিন্দু নিয়োগ করা হয়েছে ২৩ জন যা মোটের ২৪.৭৩ শতাংশ। সম্প্রতি ষষ্ঠ ব্যাচে সহকারী জজ পদে নিয়োগ দেয়া ১২৪ জনের মধ্যে ২২ জনই হিন্দু যা শতকরা হিসেবে ১৭ শতাংশ

বিতর্কিত ও সমালোচনামূলক কাজ করেই চলছে ওলাম লীগ, আমাদের সময়.কম, ১৭ অক্টোবর ২০১৫, প্রশাসনে হিন্দুতোষণ বন্ধ করতে হবে: ওলামা লীগ, RTNN, ০৮ আগস্ট,২০১৫)

এই প্রতিবেদন তৈরির সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন ক্যাবিনেট সচিবের সাথে আলাপে জানা যায় ভিন্ন চিত্র। তিনি খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন ২০০৬ সালের হিসাব অনুসারে সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি ছিল  ১৯% এর অধিক।তিনি আরো জানান বর্তমানে সেটা প্রায় ২৯% তাকে যখন টিআইবির গবেষনার কথা বলা হল তিনি বলেন এটা আন্ডারস্কোর করা হয়েছে।তাঁর বক্তব্য অনুসারে টিআইবির গবেষণার দিকে গভীরভাবে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় টিআইবি তথ্যের অভাবে সবগুলো বিসিএস পরীক্ষার ডাটা ক্যালকুলেশনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি।নিম্নের চিত্রটি সে কথাই বলে।”, বাংলাদেশে সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘুদের অবস্থান, আনোয়ার মোহাম্মাদ, ২৬শে এপ্রিল, মূলধারা বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৮ বছর পর ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া স্বামীকে দেখে আবেগে আত্মহারা স্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধআল-ফিরদাউস নিউজ বুলেটিন || সেপ্টেম্বর ৪র্থ সপ্তাহ, ২০২০ঈসায়ী ||