ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বানিয়েছে সেনা প্রধানের ভাই হারিসও

0
529
ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বানিয়েছে সেনা প্রধানের ভাই হারিসও

নিজেদের নামের পাশাপাশি মা-বাবার নামও বদল করেছেন বহুল আলোচিত তিন সহোদরের দুজন; হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ। নিজেদের ছবি দিয়ে নতুন নাম আর ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করার সময় ব্যক্তিকে সশরীর হাজির থেকে ছবি তুলতে হয়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হারিছ আহমেদ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট নিয়েছেন মোহাম্মদ হাসান নামে। আর জোসেফ নিয়েছেন তানভীর আহমেদ তানজীল নামে। এ ধরনের কাজ জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ও পাসপোর্ট অধ্যাদেশ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাঁদের আরেক ভাই আনিস আহমেদও একই রকম কাজ করেছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সম্প্রতি কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ তথ্যচিত্রে হারিছ ও আনিসকে পলাতক আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

দেশের একাধিক থানা ও আদালতের নথিপত্র, সাজা মওকুফ চেয়ে (জোসেফের জন্য) মায়ের করা আবেদনসহ সাজা মওকুফের সরকারি প্রজ্ঞাপনে হারিছ ও জোসেফের বাবার নাম আব্দুল ওয়াদুদ ও মায়ের নাম রেনুজা বেগম লেখা আছে। কিন্তু হারিছ যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নিয়েছেন, তাতে বাবার নাম সুলেমান সরকার এবং মায়ের নাম রাহেলা বেগম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জোসেফের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে বাবার নাম সোলায়মান সরকার এবং মায়ের নাম ফাতেমা বেগম লেখা আছে। দুই ভাই পৃথক পৃথক স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা ব্যবহার করেছেন।

আদালতের নথি ও সরকারি প্রজ্ঞাপনে হারিছ, আনিস ও জোসেফের ঠিকানা লেখা আছে ডি/৯ নূরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা ১২০৭। কিন্তু মোহাম্মদ হাসান নামে হারিছের করা জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা বলা হয়েছে মতলব উত্তর উপজেলা, চাঁদপুর। আর বর্তমান ঠিকানা লেখা আছে বাসা নং ২৮, ডি-১ ব্লক, নূরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়।

তানভীর আহমেদ তানজীল নামে জোসেফের করা জাতীয় পরিচয়পত্রে বর্তমান ঠিকানা দেখানো হয়েছে মিরপুর ডিওএইচএসের একটি বাসা। আর স্থায়ী ঠিকানা লেখা আছে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার একটি বাসা।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, হারিছ ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ হাসান নামে ঢাকার আগারগাঁও অফিস থেকে প্রথম পাসপোর্ট করায়। তাতে জরুরি যোগাযোগ: ফাতেমা বেগম, আর-২৮ নূরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর উল্লেখ করা হয়। ২০১৭ সালে তিনি ভিয়েনা থেকে আবেদন করে আবার পাসপোর্ট নেন। ২০১৯ সালে তিনি পাসপোর্টে নিজের ছবি বদল করেন। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর নামে ১০ বছর মেয়াদি একটি ই-পাসপোর্ট ইস্যু করে পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

একই সূত্র জানায়, জোসেফ প্রথম পাসপোর্ট নেন ২০১৮ সালের ১৩ মে, তানভীর আহমেদ তানজীল নামে। তাতে স্থায়ী ঠিকানা ছিল ১২৩/এ তেজকুনীপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা। আর বর্তমান ঠিকানা ছিল ৪০ খানপুর, নারায়ণগঞ্জ। বৈবাহিক অবস্থা—অবিবাহিত। ওই বছরেরই ৪ জুন স্ত্রীর নাম যুক্ত করে তিনি পাসপোর্ট সংশোধন করান। ২০১৯ সালে পাসপোর্টে স্থায়ী ঠিকানা বদল করেন। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তিনি ই-পাসপোর্ট নেন। এ সময় নিজের ছবি, স্থায়ী ঠিকানা ও জরুরি যোগাযোগের ঠিকানা পরিবর্তন করেন।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেওয়া অথবা তথ্য গোপন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। এই আইনের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করলে বা জ্ঞাতসারে ওই জাতীয় পরিচয়পত্র বহন করলে তিনি সাত বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আর পাসপোর্ট অধ্যাদেশের ১১ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা সঠিক তথ্য লুকিয়ে অন্য নামে পাসপোর্ট নিলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা জরিমানা।

জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন) সেলিনা বানু প্রথম আলোকে বলেন, এঁদের দুজনের পাসপোর্টের বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। তিনি বলেন, যে কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট নিলে বা এ বিষয়ে অভিযোগ এলে তা তদন্ত করে অধিদপ্তর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয় এবং পাসপোর্ট বাতিল করে।

জাতীয় পরিচয়পত্র করতে জন্মসনদ ও নাগরিকত্ব সনদ জমা দিতে হয়। তাতে ব্যক্তির নাম ও মা-বাবার নাম থাকে। তার ভিত্তিতেই জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যক্তিগত তথ্য যুক্ত হয়। তাই বেনামে জাতীয় পরিচয়পত্র করার ক্ষেত্রে এই দুটি সনদও অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে করতে হয়।

জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন অনুযায়ী, জন্ম বা মৃত্যুনিবন্ধনের ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিলে অনধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা অনধিক এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। আর জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর গতকাল বুধবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে হারিছ ও জোসেফের পরিচয়পত্র নেওয়াবিষয়ক কোনো সংবাদ তাঁর চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হারিছ ও জোসেফের পাসপোর্টের আবেদন ফরমে দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে গতকাল কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। দুটি নম্বরই বন্ধ থাকায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রথম আলো

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘কাশ্মীর নিয়ে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করছে ভারত’
পরবর্তী নিবন্ধটিকা নিতে চায় না মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক তৃতীয়াংশ সদস্য