‘রক্তাক্ত কাশ্মিরে স্বাগতম’ ব্যানার ঝুলছে উপত্যকাজুড়ে

2
1555
‘রক্তাক্ত কাশ্মিরে স্বাগতম’ ব্যানার ঝুলছে উপত্যকাজুড়ে

দখলকৃত জম্মু কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনী যে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রেখেছে তা স্বরজমিনে দেখতে ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের কাশ্মির সফর কর্মসূচির প্রতিবাদে গত বুধবার কাশ্মিরে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে।

সরকারি কড়াকড়ি থাকলেও দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়, রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকে এবং বিভিন্নস্থানে কাল পতাকা উত্তোলন করা হয়। ইউরোপীয় প্রতিনধিদলের উদ্দেশে ‘রক্তাক্ত কাশ্মিরে স্বাগতম’ লেখা ব্যানার ঝোলান হয় উপত্যকাজুড়ে।

সম্প্রতি কাশ্মির মিডিয়া সার্ভিসের এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, কাশ্মিরি জনগণ গত ৭০ বছর ধরে তাদের মাতৃভূমিকে ভারতের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করতে অব্যাহত লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। এতে বলা হয়, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হবার পর, ভারত কাশ্মিরকে দখলে নিয়ে এ যাবত চার লাখের বেশি কাশ্মিরিকে হত্যা করেছে।

এ প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, কাশ্মিরের মুক্তিকামী জনতাকে দমিয়ে রাখতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ১৯৮৯ সাল থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত গত ৩১ বছরে এক লাখ নিরপরাধ কাশ্মিরি নাগরিককে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ৭,১৫৫ জনকে নিরাপত্তাবাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় অথবা ভুয়া এনকাউন্টারের নামে হত্যা করা হয়েছে।

এ সময়ের মাঝে আরো আট হাজারের বেশি নাগরিককে গুম করা হয়েছে; প্রায় ২৩ হাজার নারীকে বিধবা করা হয়েছে; ১,০৮,০০০ শিশুকে পিতৃহীন করা হয়েছে; ১১,২২৬ জন নারী দলবদ্ধ ধর্ষণ বা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ঘেরাও তল্লাশি এবং দমন অভিযানের নামে এ সময় নিরাপত্তাবাহিনী ১১০,৩৮৩ ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে। গত ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কাশ্মিরের বিশেষ অধিকার খর্ব করার পর কারফকিউ ও লকডাউনের টানা অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে ৩০৫ জন কাশ্মিরিকে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৬ সালের পর থেকে এ যাবত রিজার্ভ পুলিশের নিক্ষিপ্ত পিলেটে ১০, ৮৪০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে চোখে পিলেট বিদ্ধ হয়ে ১৪০ জন অন্ধ হয়ে গেছেন আর ২,৫০০ জন গুরুতর জখম নিয়ে বেঁচে আছেন।

ভারতীয় বাহিনীর ভয়াবহ এসব নির্যাতন কাশ্মিরীদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মোটেই দমিয়ে রাখতে পারেনি বরং তারা তাদের সংগ্রামকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে উল্লেখ করেছে কাশ্মির মিডিয়া সার্ভিসের এ প্রতিবেন।

এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের জনগণ, বিশেষ করে যুবকগণ উষ্ণ রক্ত বিসর্জন দিচ্ছেন তাদের মাতৃভুমিকে ভারতের দখল থেকে মুক্ত করার পবিত্র যুদ্ধে। মোদী সরকার বন্দুকের জোরে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে এসব মুক্তিকামী কাশ্মিরিদের সংগ্রামকে শেষতক রুখে দিতে পারবেনা।

জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনী যে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রেখেছে তা বিশ্বের শান্তিকামি মানুষদের প্রতি চরম হুমকি স্বরুপ। এ অবস্থায় ভারতের হাত থেকে কাশ্মীরের মুক্তি নিশ্চিত করা এবং কাশ্মির সমস্যা যাতে আর দির্ঘায়িত না হয় সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছে কাশ্মিরের জনগন।

এছাড়া, বাদগাম জেলা উন্নয়ন কমিটির যে সকল সদস্য সফররত ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিদলের সাথে দেখা করার কথা ছিল, তাদেরকে ঘরে আটকে রাখা হয়েছে, বাইরে বের হতে দেয়া হয়নি।

জেলা উন্নয়ন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নাজির আহমেদ যাহরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ন্যাশনাল কনফারেন্সভুক্ত ছয় সদস্যকে শহরের একটি হোটেলে আটক রাখা হয়। পিপলস এলাইন্সভুক্ত সদস্যদের তাদের বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে গত তিনদিন ধরে। নাজির আহমেদ যাহরা জানান, ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সফরকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরের জেলা উন্নয়ন কমিটির সদস্যদের সাথে চোরের মতো আচরণ করা হচ্ছে।

2 মন্তব্যসমূহ

Leave a Reply to Khalid Bin Walid প্রতিউত্তর বাতিল করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআল-ফিরদাউস সাপ্তাহিকী || সংখ্যা : ৫০ || ফেব্রুয়ারি ২য় সপ্তাহ, ২০২১ ঈসায়ী
পরবর্তী নিবন্ধমিশরে সন্ত্রাস দমনের নামে সিলেবাস থেকে কুরআন-সুন্নাহ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে “সিসি”