কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে অবস্থিত ঐতিহাসিক জামিয়া মসজিদ আবারও হিন্দুবাদীদের চক্ষুশূলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কারণ এ মসজিদ থেকেই তাওহিদবাদী মুসলিমদের মাঝে হিন্দুত্ববাদীদের আগ্রাসনের মোকাবেলা করার প্রত্যয় তৈরী হয়। মুসলিমদের জাগরণের ভয়ে হিন্দুত্ববাদী কর্তৃপক্ষ ৩ মে মসজিদে ঈদ-উল-ফিতরের নামাজের অনুমতি দেয়নি।
এর আগে ২৮ এপ্রিল হিন্দুত্ববাদী কর্তৃপক্ষ মসজিদে জুমাতুল-বিদা এবং শব-ই-কদরের নামাজের অনুমতি দেয়নি। এই ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্তটি কাশ্মীরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। মুসলিম দলগুলি ঘোষণা করে যে, এই পদক্ষেপটি ইচ্ছাকৃতভাবে কাশ্মীরের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য নেওয়া হয়েছিল। কারণ এটি একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল।
ঐতিহাসিক মসজিদে ঈদের বিশেষ নামাজ আদায় করতে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হলেও মসজিদে তালা দেওয়া দেখে মন ভেঙে ফিরে আসেন।
আঞ্জুমান আউকাফ জামিয়া মসজিদ শ্রীনগর, যা মসজিদের বিষয়গুলি পরিচালনা করে, তারা এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং দাবি করেছে যে হিন্দুত্ববাদী কর্তৃপক্ষ মসজিদে নামাজের জন্য অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করেছে।
২০০৮, ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১৬ সালে বেসামরিক অস্থিরতার সময় এলাকাটি মারাত্মক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের সাক্ষী ছিল। ফলস্বরূপ, হিন্দুত্ববাদী কর্তৃপক্ষ তখন থেকেই জুমার নামাজের অনুমতি দেয়নি এবং মসজিদ বন্ধ করে দেয়। পরে, ২০১৭ সালে শব-ই-কদরের রাতে মুসল্লিদের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় জামিয়া মসজিদের কাছে পুলিশের একজন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট (ডিএসপি) মোহাম্মদ আইয়ুব পণ্ডিতকে মারধর করার পরে নিষেধাজ্ঞাগুলি আরো কঠোর করা হয়।
হিন্দুত্ববাদীরা ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর থেকে মসজিদটি বেশিরভাগ সময়েই জামাতের নামাজের জন্য বন্ধ করে রাখে। ২০২১ সালে ঐতিহাসিক মসজিদে জুমার নামাজের উপর সর্বোচ্চ সংখ্যক নিষেধাজ্ঞার সাক্ষী রয়েছে। যেহেতু এটি কমপক্ষে ৪৭টি শুক্রবারের জন্য বন্ধ ছিল।
হিন্দুত্ববাদী সরকার এই অন্যায় নিষেধাজ্ঞাকে ন্যায্যতা দেয়। জামিয়ায় নামাজের অনুমতি না দেওয়াকে “আইন-শৃঙ্খলা” পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা হিসেবে তুলে ধরে।
একজন পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছে যে কিছু লোক ভারত বিরোধী স্লোগান তুলে মসজিদের অভ্যন্তরে সরকার বিরোধী মনোভাব গড়ে তুলতে চায়। “এটা মোটেও সহ্য করা হবে না।”
বিভাগীয় কমিশনার পোল পান্ডুরং কে. পোল এবং কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বিজয় কুমারের নেতৃত্বে মসজিদ ব্যবস্থাপনা এবং সরকারী কর্মকর্তাদের একটি দলের মধ্যে বৈঠকের পর হিন্দুত্ববাদী কর্তৃপক্ষ এই বছরের ৪ঠা মার্চ শুক্রবারের নামাজের জন্য মসজিদটি আবার খুলে দিতে বাধ্য হয়।
পরপর দুটি রমাদান ধরে হিন্দুত্ববাদী ভারত জোরপূর্বক বন্ধ করে রাখে শ্রীনগরের জামিয়া মসজিদ। দীর্ঘ এই সময়ের পর ৮ এপ্রিল জুমুআর সালাত আদায়ের জন্য কোনরকম খুলে দেয়া হয় মসজিদটি।
জুমার নামাজের পরে একদল লোক গ্র্যান্ড মসজিদের অভ্যন্তরে স্বাধীনতার স্বপক্ষে স্লোগান দেয়, তখন এ ঠুনকো অজুহাতে পুলিশ ১৩ জন মুসলিম যুবককে গ্রেফতার করে এবং মামলা দেয়। যার মধ্যে রয়েছে কঠোর পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট (PSA)-এর অধীনে একটি আইন যা একজন ব্যক্তিকে দুই বছর পর্যন্ত আটকে রাখা যায়৷
মসজিদটি ঘন ঘন বন্ধের সমালোচনা করে সচেতন মহল ক্ষুব্ধ। তারা অভিযোগ করেছে যে, মসজিদের ঘন ঘন বন্ধ হওয়া ইঙ্গিত দেয় – হিন্দুত্ববাদী সরকার তাদের ধর্মের স্বাধীন অনুশীলনে হস্তক্ষেপ করছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করছে – বিশেষ করে যখন অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় স্থানগুলি এই ধরনের কোনও বিধিনিষেধের সম্মুখীন হয় না। শুধু মুসলিমদের পবিত্র স্থানেই এমনটা হচ্ছে।
রমজান মাসে হিন্দুত্ববাদীদের সহিংস ঘটনা বৃদ্ধি পায়
রমজানে সাধারণত মুসলিমরা আযাদীর স্লোগানে রাস্তায় নামে। তাই সহিংস ঘটনা বেড়ে যায়। “২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত, রমজান মাসে শুক্রবারে ভারত-বিরোধী সমাবেশের ঘটনা ঘটেছে, যা জামিয়া মসজিদ থেকেই বের হয়েছিল।
“২০১৮ এবং ২০১৯ সালের ঈদ উল ফিতরের প্রাক্কালে, যখন নওহাট্টার জামিয়া মসজিদে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল – উভয় নামাজের পরেই “আযাদী আযাদী” বলে কাশ্মীরের স্বাধীনতার স্লোগান দিতে থাকেন কাশ্মিরী যুবকরা। আর এই স্লোগান দেওয়ার ঠুনকো অজুহাতে পুলিশ স্লোগানদাতা কাশ্মীরি যুবকদের উপর হামলা চালায়। যার ফলে প্রায় ৫০ জনেরও অধিক বেসামরিক মুসলিম আহত হয়েছে।
উল্লেখ্য, জামিয়া মসজিদ কাশ্মীরি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রেরণাস্বরূপ। ২০১০ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ কাশ্মীরিদের প্রতিরোধ আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু এই জামিয়া মসজিদ। প্রত্যেক জুমুআর সালাতের পরই মসজিদের আশেপাশে মুসল্লীদের সাথে হিন্দু সেনাদের সংঘর্ষ বেধে যায়।
তথ্যসূত্র :
———-
1. Explained: Why is Kashmir’s historic grand mosque frequently shut down by authorities?
– https://tinyurl.com/vkpube5k
2. sloganeering inside srinagar jamia masjid: 13 held, says police
– https://tinyurl.com/2p923ddw