নিজ বাড়িতে সন্তানকে কুরআন ও ইসলাম শিক্ষা প্রদান করার অভিযোগে পূর্ব তুর্কিস্তানে এক উইঘুর ইমাম ও তার ছেলে গত চার বছর ধরে কারাবন্দী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উইঘুর মুসলিম জানিয়েছেন, পূর্ব তুর্কিস্তানের হোতান বিভাগের কেরিয়ে জেলার লেঙ্গার গ্রামের ৫০ বছর বয়সী উইঘুর ইমাম মেমেত মূসা এবং তাঁর ২০ বছর বয়সী ছেলে ওসমান মেমেতকে ২০১৮ সালে কারাগারে পাঠায় দখলদার চীনা প্রশাসন। তাদের অভিযোগ ছিল যে, মূসা তাঁর ছেলে ওসমানকে ঘরে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন।
সূত্র মারফত আরও জানা যায় যে, মূসা একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজে পরিচিত ছিলেন। দখলদার চীনা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সীমা মেনে চলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অন্যতম। কেউ যদি মূসাকে কুরআন শেখাতে আবেদন করতো, মূসা অত্যন্ত বিনীতভাবে সবাইকে না করে দিতেন।
কিন্তু মূসা তাঁর পুত্র ওসমানকে ঘরেই কুরআন এবং ইসলামের মৌলিক শিক্ষা দিচ্ছিলেন। একজন পিতা হিসেবে মূসা তাঁর দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানান সেই উইঘুর ব্যক্তি।
কেরিয়ে জেলার চীনা সরকারী কর্মকর্তারা মেমেত মূসা ও তার ছেলের কারাবাস সম্পর্কে রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএর) প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করলেও লেঙ্গার গ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা আরএফএ-কে উক্ত তথ্য নিশ্চিত করেছে।
লেঙ্গার গ্রামের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমি তাঁর (মূসার) মামলার কথা শুনেছি।” গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের একজন ছিলেন মূসা। তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে একসাথে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঐ পুলিশ কর্মকর্তা।
অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গ্রামের মসজিদে ইমাম হিসেবে কাজ করতেন তিন সন্তানের জনক মূসা। পরে তাঁকে দশ বছরের কারাদণ্ড এবং তাঁর ছেলেকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয় চীনা কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও জানান, মূসা ও মেমেত দুজনেই এখন কেরিয়ের একটি কারাগারে বন্দী আছেন।
এদিকে, ফাঁস হওয়া চীনা সরকারী নথিপত্র এবং কথিত “পুনঃ শিক্ষাকেন্দ্রের” প্রাক্তন বন্দীদের মাধ্যমে জানা যায় যে, বিগত পাঁচ বছরে দখলদার চীনা কর্তৃপক্ষ পূর্ব তুর্কীস্তানে বিপুল সংখ্যক উইঘুর এবং অন্যান্য তুর্কী সংখ্যালঘু মুসলিমদেরকে পরিবার-ভিত্তিক ইসলাম শিক্ষায় অংশ নেওয়ার “অপরাধে” গ্রেপ্তার করেছে।
গত ২৪শে মে প্রকাশিত ওয়াশিংটন ভিত্তিক ভিকটিমস অফ কমিউনিজম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের “শিনজিয়াং পুলিশ ফাইলসের” নথি অনুসারে, বাবা-মা ও দাদা-দাদির কাছ থেকে ইসলাম শিক্ষা গ্রহণের জন্য তরুণ উইঘুরদেরকে বন্দী করছে দখলদার চীনা কর্তৃপক্ষ।
নির্বাসনে থাকা এক উইঘুর মুসলিম জানান, ২০১৭ সাল থেকে কমিউনিস্ট চীন সরকার পূর্ব তুর্কীস্তান জুড়ে পরিবার-ভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণকে “অপরাধ” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
২০১৭ সাল থেকে দখলদার চীনা কর্তৃপক্ষ উইঘুর এবং অন্যান্য তুর্কি মুসলিমদের কথিত উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের অজুহাতে নির্বিচারে আটক ও বন্দী করতে শুরু করে। আর সেখানে কথিত পুনঃ শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণ করে জোরপূর্বক তাদের চীনা সংস্কৃতি গ্রহণ করতে বাধ্য করে।
এছাড়াও সেসব কেন্দ্রে উইঘুর মুসলিমদেরকে জোরপূর্বক শ্রম, নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক গর্ভপাতের মতো ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করার অভিযোগও আছে চীনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। দখলদার কর্তৃপক্ষ উইঘুর ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মকে নির্মূল করার জন্যই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেছে উইঘুর মুসলিমরা।
মুসলিম বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো প্রায় ২ কোটি উইঘুর তাদের মুসলিম পরিচয় হারিয়ে ফেলবে। তাই তাঁরা মনে করেন, মুসলিমদের উচিত অতিসত্বর উইঘুরদের সাহায্যে এগিয়ে আসা এবং দখলদার চীন থেকে পূর্ব তুর্কিস্তানকে মুক্ত করা।
তথ্যসূত্র :
———
1. Uyghur imam sentenced for providing religious instruction to son in Xinjiang
– https://tinyurl.com/45p2vyvf