“আমি এখন ঘুমাতে পারি না। ঘুমালেও অনেক লম্বা সময় ঘুমাই। আমার এখন কিছুই মনে থাকে না। গতকালের বিষয়গুলো মনে করতেও আমাকে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। আমার স্মৃতিশক্তি দিন দিন লোপ পাচ্ছে। আমার হৃদস্পন্দনের হারও বেশি। মাঝে মাঝে আমার সারা শরীর কাঁপে। কোন ওষুধেই এখন কোন কাজ হয় না। কাজাখস্তানে ফিরে আসার পর আমার স্ত্রীর সাথেও আমার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়।”
উইঘুর কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি পাওয়া কাজাখস্তানের এক মুসলিম এভাবেই তার বর্তমান শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের নির্মম নির্যাতনের ফলশ্রুতিতে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার এমন অবনতি হয়েছে।
অরিনবেক ককসেবেক, জন্মসূত্রে উইঘুর হলেও তিনি এখন একজন কাজাখ মুসলিম। তার জন্ম ১৯৮০ সালে পূর্ব তুর্কিস্তানের ইলি কাজাখ জেলার তাচেং শহরের মৈনতাল গ্রামে। তুর্কিস্তানে জন্ম নিলেও অরিনবেক ২০০৪ সালে কাজাখস্তানে চলে আসেন এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে জীবনযাপন শুরু করেন। ২০০৫ সালে তিনি কাজাখস্তানের নাগরিকত্ব পান।
২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর অরিনবেক তুর্কিস্তান আসেন। উদ্দেশ্য ছিল তার কিছু আত্মীয়দের সাথে দেখা করা। কারণ তার আত্মীয়দের অনেকেই এখনও পূর্ব তুর্কিস্তানেই থাকেন। এখানে এসে তিনি তার চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে ওঠেন। এরপরই তার সাজানো জীবনের সবকিছুই পালটে যায়।
উইঘুর ট্রাইবুনালকে দেয়া স্বীকারোক্তিতে অরিনবেক বলেন, “সেখানে গেলে আমার বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ আনে চীনা প্রশাসন। তারা আমাকে ২ মাসের জন্য গৃহবন্দী করে রাখে।”
চীনা প্রশাসনকে অরিনবেক তার পাসপোর্ট দেখালে তারা সেটি বাজেয়াপ্ত করে এবং তাকে পূর্ব তুর্কিস্তানে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করতে থাকে।
অরিনবেক বলেন, “তারা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আমার চাইনিজ পাসপোর্ট কোথায়?’ আমি বললাম, ‘আমি কাজাখস্তানের নাগরিক এবং আমার কাছে কোন চাইনিজ পাসপোর্ট নেই।’ এরপর তারা আমার একটি ছবি তুলতে চায় এবং আমার উপর অভিযোগ আনে যে, আমি নাকি দুই দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে আছি যা চীনের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।”
চীনের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার কোন কাগজ ছিল না অরিনবেকের কাছে যার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করতে পারতেন যে, তিনি এখন আর চীনের নাগরিক নন।
চাচাতো ভাইয়ের বাসায় থাকাকালীন সর্বদা অরিনবেককে নজরদারিতে রাখতো দখলদার প্রশাসনের লোকেরা। ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন কিংবা আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের কারও সাথে দেখা করার কোন অনুমতি ছিল না তার।
দুই মাস গৃহবন্দী থাকার পর অরিনবেক সুযোগ পান তার আত্মীয়দের সাথে দেখা করার। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি। চিরচেনা শহরটি এবার কেমন যেন অচেনা লাগে তার কাছে।
“আগের মতো কিছুই ছিল না। এমনকি আমার নিজের পরিবার আমার সাথে কথা বলতেও ভয় পেত। প্রতিদিন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এসে আমাকে বলতো যে, আমার নাগরিকত্ব ত্যাগের কাগজপত্র তাদের কাছে না দেখানো পর্যন্ত আমি চীন ছেড়ে কোথাও যেতে পারব না,” বলেন অরিনবেক।
চাচাতো ভাইয়ের বাসায় থাকাকালীন সময়েই অরিনবেক চীনের নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য আবেদন করেন। দখলদার প্রশাসন তাকে আশ্বাসও দেয় যে, শীঘ্রই তিনি সেটা হাতে পাবেন।
একদিন অরিনবেককে তারা একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলে। তারা বলে যে, এতে স্বাক্ষর করলে আনুষ্ঠানিকভাবে তার চীনের নাগরিকত্ব বাতিল হবে এবং তিনি কাজাখস্তানে ফিরতে পারবেন। অরিনবেক সেই কাগজে স্বাক্ষর করেন। কারণ এই কাগজটির জন্যেই তাকে এতদিন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে দখলদার চীনা প্রশাসনের কাছে। কিন্তু স্বাক্ষর করার সময় তারা চাপ প্রয়োগ করে যেন তিনি নিজেকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে স্বীকার করে নেন। তারা আবারও অরিনবেকের কাছে তার কাজাখস্তানে যাওয়ার, নাগরিকত্ব পরিবর্তন করার এবং পূর্ব তুর্কিস্তানে ফিরে আসার কারণ জানতে চায়।
অরিনবেক বলেন, “কয়েক সপ্তাহ পর কাজাখ সীমান্ত থেকে কিছু কাজাখ জিজ্ঞাসাবাদকারী আমার সাথে দেখা করতে আসে। তাদের সঙ্গে ছিল তিনজন হান চীনা নাগরিকও। তারা বলে আমার কাগজপত্র সব চলে গেছে। তারা আমাকে সীমান্তে নিয়ে যাবে। কিন্তু প্রথমে আমাকে একজন ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করতে যেতে হবে। এরপর তারা আমাকে একটি বড় অফিস ভবনে নিয়ে যায়। সেখানে সবাই সাদা মেডিকেল পোশাক পড়েছিল। তবে সাধারণ হাসপাতাল থেকে এটা কিছুটা আলাদা ছিল।”
“বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার জন্য তারা আমাকে এক রুম থেকে আরেক রুমে নিয়ে যায়। সেখানে বেশ কয়েকজন ডাক্তার ছিল এবং তারা আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীর পরীক্ষা করেছিল। আমার চাইনিজ ভাষা জানা না থাকায় আমি বুঝতে পারছিলাম না যে, তারা কী কথা বলছে। আমি প্রতিরোধ করতে চেয়েও ভয়ের কারণে তা পারিনি। তারা আমার রক্তচাপ, শরীরের তাপমাত্রা এবং হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করে। এমনকি তারা আমার প্রস্রাব, রক্ত এবং মলের নমুনাও নেয়। তারা সেখানে আমার একটি এক্স-রে পরীক্ষাও করে।”
“এরপর সেখান থেকে আমাকে একটি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ জানতে চাইলে তারা আমাকে বলে কাজাখ নাগরিক হয়ে চীনের সাথে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। তারা আমাকে দেয়াল এবং কাঁটাতারের বেড়া দ্বারা বেষ্টিত একটি বহুতল ভবনে নিয়ে যায়। জায়গাটি ছিল অনেকটা জেলখানার মতো। আমি পকেট থেকে আমার ফোনটি বের করলাম এবং কল করার চেষ্টা করলাম। তখন আমার অবস্থা এমন ছিল যে, আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না যে, আমি কাকে কল করব। তারা এটি দেখতে পেয়ে ফোনটি আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়।”
“সেই বিল্ডিংয়ে প্রবেশের পর তারা আমাকে একটি চেক-ইন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে বলে। এরপরে তারা আমার শার্ট-প্যান্ট খুলে নিয়ে যায়। সেসময় আমি শুধু আমার অন্তর্বাসটি পড়েছিলাম।”
“তারপর তারা আমাকে একটি পুনঃশিক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রতি সেলে ছিল ৭ জন করে লোক। তাদের সবাই ছিলেন মুসলিম। সেখানে একমাত্র আমিই কাজাখ ভাষায় কথা বলতাম। ক্যাম্পটিতে কয়েকটি জানালা ছিল। কিন্তু পুরো জায়গাটি ছিলো খুবই অন্ধকার। প্রতিটি সেলের চারপাশ বেষ্টিত ছিল লোহা দ্বারা। সেখানে কোনো পানি ছিল না, ছিল শুধু একটি কূপ।”
“প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাকে একবার জেরা করে তারা। অনেক প্রশ্ন করে। আমি এখানে কেন এসেছি, আমি কোথায় যাচ্ছি, আমি এখানে কী করার চেষ্টা করছি, আমি কার সাথে থাকবো, ইত্যাদি। আমি তাদের সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছি। আমি বলেছি যে, আমার সব ভাই কাজাখস্তানে থাকে। আর এখানে আমি আমার আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে এসেছি। কিন্তু তারপরও তারা আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলে।”
অরিনবেক ছিলেন একজন সাধারণ কাজাখ মুসলিম। ঘটনার এক যুগ আগে থেকেই তিনি কাজাখস্তানের নাগরিক হয়ে সেখানে জীবনযাপন করছিলেন। পূর্ব তুর্কিস্তানেও তার যাওয়া আসা ছিল। কারণ তুর্কিস্তান হলো তার জন্মস্থান এবং তার অনেক আত্মীয়ও সেখানে বসবাস করছিল। তার বাবাও তুর্কিস্তানেই থাকতেন। ২০১৬ সালে বাবা মারা গেলে তাকে কবর দিতে অরিনবেক তুর্কিস্তানে এসেছিলেন। কিন্তু তখন দখলদার চীনা প্রশাসন তাকে আটক করেনি, কিংবা বিশ্বাসঘাতক উপাধিও দেয়নি। অথচ এক বছরের ব্যবধানেই তিনি হয়ে গেলেন বিশ্বাসঘাতক এবং চাইনিজ নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়ে গেল একটি দণ্ডনীয় অপরাধ।
মূলত এসব হচ্ছে উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতন করে পূর্ব তুর্কিস্তানে জোরপূর্বক চীনা সংস্কৃতি প্রবেশ করানোর একটি কৌশল মাত্র। যাতে উইঘুররা চীনা সংস্কৃতির সংমিশ্রণে এসে তাদের নিজেদের ধর্ম ভুলে যায় এবং ইসলাম ত্যাগ করে। এর মাধ্যমে পূর্ব তুর্কিস্তানে দখলদার চীন নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।
বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয় যখন অরিনবেক বলেন, “তারা আমাকে তিনটি গান শিখতে দেয়। আমি যদিও চীনা ভাষা জানতাম না তারপরও কোনভাবে আমি সেটা শেখার চেষ্টা করি। গানটি শিখতে আমার দেড় মাস সময় লাগে। আমি জানতাম না যে, আমি কী শিখছি।”
“কারাগার প্রধান আমার ভাষায় কথা বলতে পারতো। সে আমাকে বলে যে, আমাকে চাইনিজ ভাষা শিখতে হবে এবং এখানে পাঁচ বছর থাকতে হবে। এছাড়া আমাকে গান শিখতে হবে। আমাকে বলা হয়, আমি যদি চাইনিজ না শিখি তাহলে তারা আমাকে বাইরে যেতে দিবে না।”
“খুব ভোরে তারা কিছু কয়েদিকে স্কুলে নিয়ে যেত। শুরুতে আমি জানতাম না যে, স্কুলটি কীসের। দেড় মাস পর তারা আমাকেও স্কুলে নিয়ে যাওয়া শুরু করে। সেখানে আমাকে চীনের ইতিহাস পড়ানো হয়। জোরপূর্বক আমাকে সব শিখতে বাধ্য করা হয়। সেখানে তাদের কথা না শুনলে সবাইকে শাস্তি দেওয়া হতো।”
“সেলে আমাদেরকে কিছু মাংস খেতে দেওয়া হতো। আমরা কেউ জানতাম না যে, সেটা কীসের ছিল, শূকরের না গাধার না অন্য কিছুর। এটি খাওয়া ছাড়া আমাদের কাছে আর কোন বিকল্পও ছিল না।”
“ইসলামে একজন মুসলিমের জন্য যা যা হারাম ঠিক সেগুলোই উইঘুর মুসলিমদের করতে বাধ্য করছে দখলদার চীন প্রশাসন। ইসলামকে উইঘুরদের জীবন থেকে মুছে ফেলতেই কথিত পুনঃশিক্ষা কেন্দ্রে নিষ্ঠুর ও অমানবিক এসব কর্মপন্থা আয়োজন করেছে জালিম চীনা প্রশাসন।”
ক্যাম্পে অরিনবেককে সহ্য করতে হয়েছে ভয়াবহ নির্যাতন। কনকনে ঠাণ্ডায় তাকে গর্তের মধ্যে ফেলে তার উপর ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দেওয়া, মাথার চুল ন্যাড়া করে দেওয়া, মারধর করা, ইত্যাদি ছিল প্রায় নিত্যদিনের ব্যাপার।
অরিনবেককে যে সেলে রাখা হয়েছিল সেখানে ২৫ জন লোক ছিল। বিছানা, খাবার এবং বাথরুম তিনটিই ছিল ঐ একই জায়গায়। সেলের বন্দীরা ঘর পরিষ্কার করে রাখলে নিরাপত্তা রক্ষীরা তা দেখে ভিতরে আসতো আর সবকিছু উলটপালট করে চলে যেত। বন্দীরা এরপর আবারও সবকিছু পরিষ্কার করতো। রক্ষীরা সেলে ঢুকলে সবাইকে হাঁটু গেড়ে নিচে বসতে হতো। অরিনবেক বলেন, “তাদের পকেটে রাখা পিস্তলগুলি ঠিক আমাদের চোখ বরাবর থাকতো।”
তিনি আরও বলেন, “সেখানে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলার অনুমতি ছিল না। যদি কেউ এমনটা করতো তাহলে তাকে পিঠ ছাড়া একটি ছোট প্লাস্টিকের চেয়ারে বসিয়ে রাখা হতো। কেউ বসতে না চাইলে তাকে মারধর করা হতো। সেই চেয়ারে সবাইকে সোজা হয়ে বসতে হতো। যদি কেউ এই নিয়ম ভঙ্গ করতো তাহলে তাকে ‘টাইগার চেয়ারে’ বসার শাস্তি দেওয়া হতো।”
“সেখানে সবসময় আমরা লোকেদের চিৎকার শুনতে পেতাম। এটা যে মারধরের আওয়াজ তা বুঝতে আমাদের কারোরই অসুবিধা হতো না। এমনকি আমরা ডাইনিং রুম থেকেও এই আওয়াজ শুনতে পেতাম।”
“তারা পাঁচ-ছয়বার আমাকে একটি কালো অন্ধকার রুমে বন্দী রাখে। রুমটি এতই অন্ধকার ছিলো যে, সেখানে কোন কিছুই দেখা যেত না। সেখানের মেঝেও ছিল সিমেন্টের এবং সেখানে ঘুমানোর কোন জায়গাও ছিল না। সেখানে আমি প্রায় ১২৫ দিন বা তারও বেশি সময় থাকি। লবণের অভাবে সেসময় আমার শরীরের হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে।”
“বন্দী থাকাকালীন আমাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা আমার শরীর পরীক্ষা করে এবং আমাকে একটি ইনজেকশন দেয়। আমাকে বলা হয় যে, এটি একটি ফ্লু ইনজেকশন। যদিও আদতে সেটি ফ্লু ইনজেকশন ছিল বলে মনে হচ্ছিলো না। কারণ বন্দী সবাইকেই এটি দেওয়া হয়েছিল। এই ইনজেকশন নেবার পর থেকে আমার স্বাস্থ্য পরিবর্তন হতে শুরু করে। আমি সব সময় ক্লান্ত অনুভব করা শুরু করি এবং মানসিকভাবে আমি অনেক পরিবর্তন হয়ে যাই। কোন কিছুতে মনোযোগ দেওয়াও আমার জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়ে,” বলেন অরিনবেক।
অরিনবেককে দুটি কারাগারে বন্দী রাখে চীনা কর্তৃপক্ষ। প্রথম কারাগারের তুলনায় দ্বিতীয় কারাগার ছিল বেশ বড় এবং সেখানে মানুষকে মারধর করা হতো নিয়মিত। নারী ও পুরুষদের মধ্যে সাদৃশ্য রাখার জন্য সেখানে সবার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হতো। সেখানে বন্দীদের বাইরে যাওয়া কিংবা কারও সাথে কথা বলাও নিষেধ ছিল।
বন্দী মুসলিমদের সেখানে মাথায় কালো কাপড় পরিয়ে রাখা হতো। বিশেষ করে যারা কারা রক্ষীদের কথা শুনতো না। বন্দীদের সবসময় শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতো রক্ষীরা। অরিনবেককেও গায়ে শিকল পড়ে থাকতে হয়েছে অনেকদিন।
অরিনবেক এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রুমে ক্যামেরা থাকায় রক্ষীরা এসে তাকে থামিয়ে দেয়। অরিনবেককে মুক্তির একদিন আগে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে কর্তৃপক্ষ।
অরিনবেক অভিযোগ করে বলেন, “আমার সাথে যা হয়েছে তার জন্য দায়ী চীনের সরকার। না আমি চাইনিজ নাগরিক ছিলাম, আর না ছিলাম উইঘুর। আমি ছিলাম একজন কাজাখ নাগরিক। তারপরও আমার সাথে কেন এমন করলো তারা?”
একজন কাজাখ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তার সাথে দখলদার চীনা প্রশাসনের এমন আচরণ একটি স্পষ্ট বার্তাই দিচ্ছে যে, শুধু উইঘুর নয় বরং গোটা মুসলিম উম্মাহকেই তারা নিজেদের শত্রু মনে করে। তাই বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, যারা মুসলিমদেরকে নিজেদের শত্রু হিসেবে দেখে তাদের সাথে শত্রুতার সম্পর্ক স্থাপন করা এবং শত্রুর আসল পরিচয় সকলকে ভালোভাবে চিনিয়ে দেওয়াই হবে একজন মুসলিমের জন্য উত্তম কর্মপন্থা।
লিখেছেন : আবু-উবায়দা
তথ্যসূত্র :
——–
1. Uyghur Tribunal: Horrific New Testimonies From Concentration Camp Survivors
– https://tinyurl.com/yxvcpps2