পাক-ভারত ‘আদর্শিক’ মিত্রতা || পর্ব-১ || কাশ্মীর পরিস্থিতির নাজুকতা বৃদ্ধি

2
940

কাশ্মীরের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী ভারতের সাথে আদর্শগতভাবে হাত মিলিয়েছে পাকিস্তানের গাদ্দার শাসকগোষ্ঠী। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, কাশ্মীরকে ঘিরে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে হিন্দুত্ববাদী ভারত। এদিকে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের জন্য আসা সাহায্যগুলির পথ বিভিন্নভাবে বন্ধ করে দিচ্ছে পাকিস্তান। ফলে কাশ্মীরের সংকট আরও গভীর হচ্ছে।

নিঃসন্দেহে হিন্দুত্ববাদী ভারতের দখলে থাকা কাশ্মীর তার ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন ও ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে চলতি বছরের প্রথমাংশে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসা শাহবাজ শরিফের গাদ্দারি।

শাহবাজ ক্ষমতায় আসার পরপরই গুজরাটের কসাই নরেন্দ্র মোদী অভিনন্দন বার্তা পাঠায়। বিপরীতে, শাহবাজ শরিফও বার্তা দেন যে, তারা ভারতের সাথে একটি শান্তিপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক সম্পর্কের মডেল চায়। আর তারা কাশ্মীর সমস্যারও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে।

শাহবাজ শরিফের এই শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়টি তখন স্পষ্ট না হলেও, এখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। পাকিস্তান বলছে, তারা আগামী ১০০ বছরের জন্য ভারতের সাথে শত্রুতা চাইছে না। আর অবিলম্বে প্রতিবেশীদের সাথে তারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী। এই শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশটির নিরাপত্তা নীতির ১০০ পৃষ্ঠা সংস্করণ করা হয়েছে, যা গোপন রাখা হবে।

সদ্য প্রকাশিত পাকিস্তানের এই জাতীয় নিরাপত্তা নীতির অধীনে কাশ্মীর ইস্যুটিও যুক্ত রয়েছে। যেখানে পাকিস্তান বলছে, তারা ভূ-কৌশলের পরিবর্তে এখন থেকে ভারতের সাথে ভূ-অর্থনীতিতে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। আর এই নীতিমালার অধীনে “জঙ্গি”দের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। অর্থাৎ, কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে পাকিস্তান।

আঞ্চলিক সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই নীতির অধীনেই কাশ্মীরে ভারতীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা বাহিনীগুলোকে কোণঠাসা করতেই একজোট হয়েছে পাক-ভারত সরকার। যার ফলে স্থানীয় সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

আঞ্চলিক সূত্র মারফত আরও জানা যায়, হিন্দুত্ববাদী ভারতের পক্ষ থেকে চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি, গাদ্দার পাকিস্তান এই অঞ্চলে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের জন্য আসা সাহায্যগুলিতে বাঁধা দিচ্ছে। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের গোপন সরবরাহ লাইন কেটে দিচ্ছে। পাশাপাশি উভয় দেশই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করছে।

সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার কাশ্মীর যুদ্ধে যুক্ত প্রাক্তন স্বাধীনতাকামীদেরকেও বন্দী করতে একটি আদেশনামা জারি করেছে। তালিকায় মাসুদ আজহারের নামও রয়েছে। পাকিস্তান অভিযোগ তুলেছে যে, তিনি বর্তমানে আফগানিস্তানে আছেন।

পাকিস্তানের এমন বক্তব্যের পর তালিবান মুখপাত্র স্পষ্টই জানিয়ে দেন যে, তিনি আফগানে নয় বরং পাকিস্তানেই আছেন। কেননা জাইশ-ই-মুহাম্মদ ও তার নেতা পাক-সরকার ও দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা পরিচালিত একটি গোষ্ঠী। দলটি তাদের নেতৃত্বেই কাজ করে থাকে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তানের এমন বক্তব্য ও ধরপাকড় তাদের নতুন নিরাপত্তা নীতিরই একটি অংশ। এর মাধ্যমে তারা ভারতকে সন্তুষ্ট করতে চাচ্ছে। আর পাকিস্তানের এমন নীতি কাশ্মীরের চলমান সংগ্রামকে বাঁধাগ্রস্ত করার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায় যে, কাশ্মীর একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যদি প্রতিরোধ যোদ্ধারা উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে না পারেন, তবে বহু বছরের জন্য এই অঞ্চলের স্বাধীনতা সংগ্রাম তার আপন শক্তি ও প্রভাব হারাবে। ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য থেমে যেতে পারে কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপ্ন।

জানা যায় যে, হিন্দুত্ববাদী ভারত সম্প্রতি কাশ্মীরের তিনজন শীর্ষস্থানীয় ইসলামিক স্কলারকে আটক করেছে। যারা এই অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় ধর্মীয় আলেম। তাঁরা হলেন, মাওলানা মুশতাক, মাওলানা আবদুর রশিদ এবং আব্দুল মাজিদ দার।

এটা মনে করা হয় যে, আগামী দিনগুলোতে এই অঞ্চলে সংকট আরও গভীর হবে। সেই সাথে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ প্রক্রিয়া কাশ্মীরকে বড় সমস্যার মুখোমুখি করবে। কেননা সম্পর্কের এই স্বাভাবিককরণ প্রক্রিয়ার মানেই হচ্ছে কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার করা এবং কাশ্মীরকে আবারও কুফুরি গণতন্ত্র ও হিন্দুত্ববাদী ভারতের কাছে বিক্রি করে দেওয়া।

তাই সচেতন ইসলামিক স্কলারগণ অনেক আগে থেকেই পাকিস্তানের ব্যাপারে সতর্ক করে আসছেন। কেননা এই রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে বিশ্বাসঘাতকতা। তারা পরামর্শ দিয়ে আসছেন যে, কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রাম যেন পাকিস্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে। এর পরিবর্তে তারা যেন নিজেরাই যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেন এবং ইসলামি ভাবধারার উপর তারা যেনো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেন।


লেখক: ত্বহা আলী আদনান

2 মন্তব্যসমূহ

Leave a Reply to حسسان عبود في مالي প্রতিউত্তর বাতিল করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিলেটের কলেজে দাড়ি রাখতে চাইলে লাগে অনুমতি, অধ্যক্ষ বরাবর ছাত্রের দরখাস্ত
পরবর্তী নিবন্ধএবার ভারতের উত্তর প্রদেশে মাদ্রাসার ওপর নজরদারির ঘোষণা