পূর্ব তুর্কিস্তান || দেড় মাস ধরে উইঘুর শিশুরা স্কুলে বন্দী

আবু-উবাইদা

1
566

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে যে, তুর্কীস্তানের একটি বিদ্যালয়ের মুসলিম শিশুরা বন্দী আছে তাদের শ্রেণীকক্ষেই। তাদের জন্য সেখানে না আছে বিদ্যুৎ, আর না আছে খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত খাবার। এমনকি শোবার জন্য কোন ব্যবস্থাও নেই। ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে তাই ঘুমাতে হচ্ছে শ্রেণীকক্ষের বেঞ্চে কিংবা টেবিলের ওপর। কেউ কেউ ঘুমাচ্ছে সিমেন্টের ফ্লোরেই।

বিগত দেড় মাস ধরে এই মুসলিম শিশুদেরকে শ্রেণীকক্ষে বন্দী করে বিচ্ছিন্ন রেখেছে তাদের বাবা-মা থেকে। এমতাবস্থায় সেই বাচ্চাদের জীবন নিয়ে বাবা-মা’রা বেশ আতঙ্কিত।

গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে কথিত “জিরো কোভিড নীতির” অজুহাতে পুরো পূর্ব তুর্কীস্তানে কঠোর লকডাউন জারি রেখেছে দখলদার চীন সরকার। তুর্কীস্তানের উইঘুর মুসলিমদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে বন্দী করে রেখেছে, আর তাদের শিশুদের বন্দী করে রেখেছে বিদ্যালয়ে। অথচ, সেখানকার অভিবাসী হান চাইনিজরা ঠিকই চলাফেরা করছে রাস্তায়। তাদের ক্ষেত্রে কোনই কঠোরতা আরোপ করেনি দখলদার প্রশাসন।

প্রশাসনের এমন দ্বিমুখী নীতির কারণে ইতোমধ্যেই চীনা সরকারকে নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম বিশ্বের জনগণ। অনেকে বলছেন যে, উইঘুর মুসলিমদের না খাইয়ে মারতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে ক্ষমতাসীন সি চিন পিং সরকার। অনেকে আবার বলছেন, এটি উইঘুর মুসলিমদের গণহত্যা প্রক্রিয়ারই একটি অংশ বিশেষ।

ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তুর্কীস্তানের একটি গ্রামের মুসলিম কৃষক অভিযোগ করছেন যে, কোভিড লকডাউন চলাকালীন তার মাঠ থেকে বেশির ভাগ ফসল চুরি হয়ে গেছে। সে বলছে, এই দেড় মাসের লকডাউনে শুধুমাত্র হান চাইনিজরাই খোলামেলাভাবে বাইরে ঘুরতে পেরেছে। অথচ মুসলিমদেরকে ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তাই সে ধারণা করছে এমন কাজ হয়তো হান চাইনিজরাই করে থাকতে পারে।

অন্য আরেক ভিডিওতে দেখা গেছে, এই দেড় মাসের লকডাউনে উইঘুর কৃষকরা বাইরে না বের হতে পারায় তাদের মাঠের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া একজন কৃষকের প্রায় ৩০০টি ভেড়া না খেয়ে মারা গেছে।

একটি ভিডিওতে একজন অসহায় শিশু বলছে যে, তার মা সবজি বিক্রি করে তাদের ঘর চালাতো। এখন তার মা সেটা পারছে না। এই লকডাউন কবে শেষ হবে? আমরা কবে বাইরে যেতে পারবো?

বিগত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই লকডাউনে ইতোমধ্যেই মারা গেছে অনেক অনেক উইঘুর মুসলিম। অফিশিয়ালি মৃতের প্রকৃত সংখ্যা জানা না গেলেও মনে করা হচ্ছে, এই লকডাউনে শুধু না খেয়ে এবং ওষুধের অভাবেই মারা গেছে শত শত উইঘুর। উইঘুররা সাহায্যের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অসহায় অবস্থার কথা প্রকাশ করলেও দখলদার সরকার উল্টো হুমকি দিয়েছে কোন প্রকার ভিডিও কিংবা ছবি না প্রকাশ করতে। কিছু উইঘুর এই লকডাউনের প্রতিবাদ করায়, দখলদার চীন প্রশাসন তাদের বন্দী করেছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পূর্ব তুর্কীস্তানে সাধারণ উইঘুর মুসলিমদের প্রতি কোন প্রকার মানবিকতা প্রদর্শন করতেই নারাজ ক্ষমতাসীন সি চিন পিং। উলামাগণ তাই বলছেন, উইঘুর মুসলিমদের এই বিপদের সময় উচিত হবে একে অন্যকে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা এবং এই বিপদকে আল্লাহ্‌ তা’আলার সরল পথে ফিরে আসার উপলক্ষ হিসেবে গ্রহণ করা।


তথ্যসূত্রঃ

1. Video: These #Uyghur kids were locked down in their classroom.
https://tinyurl.com/yc4y9595

2. Video: #Uyghur peasants in Uyghur homeland have been under “0-virus lockdown” for 45+ days.
https://tinyurl.com/3b48np34

3. Video: #Uyghur farmers have been under lockdown by #Xitler’s order…
https://tinyurl.com/m3bzx6vn

4. Video: This #Uyghur boy says: When we can go outside…
https://tinyurl.com/3vskxffm

১টি মন্তব্য

  1. আহ্!! আফসোস !! আর কতো জুলুম-নির্যাতন করা হলে আমাদের ঘুম ভাঙ্গবে!?? আর কতো কাল আমাদের এসব শুনতে হবে!? আমাদের কে
    মাফ করে দিন হে আল্লাহ! । আমরা নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর পাশে দাড়াইনি, তাদের ডাকে সাড়া দেইনি।😓😓😢

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের সাহায্যে জাতিসংঘের টালবাহানা; বিক্ষুব্ধ গাজাবাসী
পরবর্তী নিবন্ধইসরাইল সফরের পরিকল্পনা ইহুদিদের মিত্র এরদোয়ানের