গোরক্ষা ও দূষণবিরোধী আইনে নাকাল চামড়াশিল্প: ইউপির মুসলিমদের জীবিকায় আঘাত

- আবু আব্দুল্লাহ

0
328

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসিন হয় কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী নেতা যোগী আদিত্যনাথ। ক্ষমতায় আসার পর উত্তরপ্রদেশের মুসলমানদের কার্যত প্রান্তিকরণ করে ফেলেছে সরকার। রাজ্যজুড়ে মুসলিমদের মালিকানাধীন এবং তাদের নিযুক্ত ব্যবসায় ও শিল্পে পতন ঘটতে শুরু করে তখন থেকেই।

ভারতের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য এই উত্তরপ্রদেশে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকারের নির্বাচনের সাথে সাথে করা কথিত জোরপূর্বক ধর্মান্তর বিরোধী আইন, কথিত গরু চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে “গ্যাংস্টার বিরোধী আইন”, গবাদি পশু বিক্রি ও জবাই নিষিদ্ধ করার আইন প্রণয়ন করা সহ রাজ্যের মুসলিমদের টার্গেট করে কথিত গবাদি পশু চোরদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন আরোপ করেছে। পাশাপাশি হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর লেলিয়ে দেওয়া গুণ্ডারা গণপিটুনি দিয়ে এবং পুলিশ বিচারবহির্ভূত ভুয়া এনকাউন্টার চালিয়ে মুসলিমদেরকে একরকম কোণঠাসা করে রেখেছে। তাছাড়া সরকার নির্বিচারে মুসলিমদের সম্পত্তি ধ্বংস করে যাচ্ছে নানান অজুহাতে।

হিন্দুত্ববাদী সরকারী নীতিমালা মহারাষ্ট্রের মতো উত্তরপ্রদেশের মাংস ব্যবসায়ীদের জীবন ও জীবিকাকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। উত্তরপ্রদেশের কানপুর এবং উন্নাও অঞ্চলে মুসলিম-মালিকানাধীন চামড়া শিল্পের উপরেও এর অনুরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলে ব্যবসাগুলো আজ পতনের দ্বারপ্রান্তে।

একসময় ‘প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার’ এবং ভারতের ‘লেদার সিটি’ হিসাবে খ্যাত এই অঞ্চলটি, বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কানপুর ক্যান্টনমেন্ট বিধানসভা কেন্দ্রটি একসময় ট্যানারি এবং চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায়ে ভরপুর ছিল।

কানপুরের জাজমাউ এলাকায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪০০ টিরও বেশি ট্যানারি ছিল, যার পরে অর্ধেকেরও বেশি বন্ধ হয়ে যায়। পরিবেশ দূষণ, বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতি এবং গোহত্যা আইনের সংমিশ্রণ এই শিল্পকে পতনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যে গোহত্যা বিরোধী আইন এবং চামড়া শিল্পের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতির আর্থ-সামাজিক প্রভাব অনেক ব্যাপক।

কানপুর, লখনউ এবং উন্নাও:

জনাব ‘ক’ (ছদ্মনাম) একসময় পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কানপুর শহরের ব্যস্ত ট্যানারিতে একজন আড়তদার ছিলেন, যেখান থেকে বাটা ও রেড টেপের মতো প্রধান জুতা প্রস্তুতকারকদেরকে ট্রাকপ্রতি ৫০০ টি প্রস্তুতকৃত পশুর চামড়া সরবরাহ করা হতো।

কানপুরের একসময়ের ক্রমবর্ধমান পেচবাগ বাজারের ৫০০ জন মধ্যস্বত্বভোগীর মধ্যে জনাব ‘ক’ ছিলেন চতুর্থ প্রজন্মের আড়তদার। তার পরিবার বংশপরম্পরায় ১২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চামড়া মজুদ ও বিক্রয় ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিল। সেখানকার গুদামগুলি এখনও রয়ে গেছে, তবে সেগুলো এখন পাইকারি পোশাক বিক্রির জন্য ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, আড়তদারদের মধ্যে ৫০ জনের বেশি আর অবশিষ্ট নেই।

জনাব ‘ক’ বলছিলেন যে, তিনি প্রায় এক দশক আগে পর্যন্ত অর্ডার প্রতি ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা উপার্জন করতেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর কথিত গোহত্যার বিরুদ্ধে আইন কঠোর করায় আড়তদারের সংখ্যা ৯০ শতাংশ কমে যায়।

জনাব ‘ক’ বলেন, “যেখানে এক সময় ভালো মানের চামড়া ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যেত, এখন তা ৭০০-৮০০ টাকারও কম। সুতরাং, আড়তদার হিসাবে আমাদের কাজ একেবারে শেষ হয়ে গেছে, কেননা ট্যানারিগুলি এখন সরাসরি বড় বেসরকারী কসাইখানা থেকে চামড়া ক্রয় করে।”

বর্তমানে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, পরিবহন ও লবণাক্তকরণের কাজের একটি বড় অংশ বড় কর্পোরেট কসাইখানাগুলোর হাতে চলে গেছে। তারাই এখন এই চামড়া লবণাক্তকরণ ও ট্যানিং করে তা চামড়া প্রস্তুতকারকদের কাছে সরাসরি বিক্রি করে থাকে।

এভাবে শ্রমজীবী মুসলিম সম্প্রদায় সহিংসতা এবং রাষ্ট্রীয় ও রাষ্ট্রবহির্ভূত বৈরিতার শিকার হয়েছে চরম সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড ও বৈষম্যের কারণে। এসব কারণে প্রধানত মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসাগুলি হ্রাস পেয়েছে। আর রাজ্যজুড়ে ব্রাসওয়্যার, বেনারসি সিল্ক এবং মাংসের ব্যবসার সাথে জড়িত মুসলিম শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ধ্বংস করা হয়েছে।

মুসলিমদের দূষণকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে:

কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টসের (সিএলই) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সাত বছরে দেশের মধ্যাঞ্চল (কানপুর-উন্নাও বেল্ট সহ) থেকে চামড়া রফতানি ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

সিএলইর কার্যনির্বাহী সদস্য ও পি পান্ডে বলেন, ২০১৪-১৫ সালে রফতানি ৭,২০০ কোটি টাকা থেকে কমে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৪,৯০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

যদিও দীর্ঘদিন থেকেই কানপুর এবং উন্নাও বর্জ্য নিষ্কাশনের ও শিল্প দূষণের সমস্যায় জর্জরিত, তবে ২০১৪ সালে এসে দূষণের বিরুদ্ধে অভিযান বিচারবিভাগীয় উত্তাপ অর্জন করে। সেবছরই নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল এবং সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে এই জাতীয় মামলাগুলি জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালে (এনজিটি) প্রেরণ করা হবে।

২০১৪ সালের জুন মাসে মোদী সরকার ২০০ কোটি রুপির ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গার আওতায় ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্প ঘোষণা করে, যার আক্ষরিক অর্থ ‘গঙ্গার কাছে মাথা নত করা’। এই প্রকল্প “দূষণের কার্যকর উপশম, সংরক্ষণ এবং জাতীয় গঙ্গা নদীর পুনরুজ্জীবন” করাকে তার লক্ষ্য হিসাবে ঘোষণা করেছিল। প্রকল্পের আওতায় কানপুরের চামড়া শিল্পকে একটি মূল “হটস্পট” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

যদিও ঐ মিশন জানিয়েছিল যে, এই অঞ্চলের শিল্পগুলি (কাগজ, চিনি, ডিস্টিলারি এবং ট্যানারি) সম্মিলিতভাবে গঙ্গার মোট দূষণের মাত্র ২০ ভাগের জন্য দায়ী ছিল, তবুও চামড়া শিল্প এবং ট্যানারিগুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবেই সবচেয়ে বেশি তদন্তের মুখোমুখি করা হয়েছিল। এই অঞ্চলের শিল্পবর্জ্য বাদে, অবশিষ্ট ৮০ ভাগ দূষণ সংঘটিত হয় পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য এবং “নন-পয়েন্ট দূষণকারী সোর্স” হিসাবে পরিচিত কৃষি, উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ, বর্জ্য এবং আংশিকভাবে দাহ করা মৃতদেহের মতো উৎসগুলো থেকে।

এই বিষয়ে ইঙ্গিত করে জনাব ‘ক’ বলেছেন, “সরকারী কর্তৃপক্ষ বারবার ট্যানারি এবং শিল্পকে দূষণের জন্য অভিযুক্ত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, রাসায়নিক শিল্পও দূষিত করে, কিন্তু কেউ তাদের খুব বেশি টার্গেট করে না। এর কারণ কি এই যে, এই শিল্প (ট্যানারিগুলি) মুসলমানদের দ্বারা প্রভাবিত?”

ক্ষুদ্র ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নায়ার জামাল বর্তমানে ছোট আকারের মখদুম ট্যানারি পরিচালনা করেন। এটি তিনি ১৯৮০ সালে তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “দূষণ এবং চামড়া শিল্পের পতন নিয়ে বিতর্কের কারণে এই পেশাটিকে আর মর্যাদাপূর্ণ হিসাবে দেখা হয় না।”

তিনি বলছিলেন যে তিনি সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রাজ্য দূষণ বোর্ডের জাজমাউ হাব থেকে ট্যানারিগুলি সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবুও এই ব্যবসায়ের পতন অব্যাহত রয়েছে। জামাল সাহেব আরও জানান, “২০ এর দশকের গোড়ার দিকে কমপক্ষে ৪০০ টি ট্যানারি থাকলেও এখন মাত্র ১৫৮ টি ট্যানারি অবশিষ্ট রয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ৯৪টি ট্যানারি ‘দূষণের নিয়ম লঙ্ঘনের’ কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।”

মুসলমান ব্যবসায়ি ও শ্রমজীবীরা নিরবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছেন:

২০১৪ সালে শিল্প দূষণের বিষয়টি এনজিটি-র কাছে পাঠানোর পরে ট্রাইব্যুনাল কানপুর এবং উন্নাওয়ের ট্যানারিগুলি কার্যকরভাবে বন্ধ করার একাধিক আদেশ জারি করে।

২০১৫ সালে, এনজিটি পর্যবেক্ষণ করেছিল যে কানপুরের প্রায় ৭০০ ট্যানারি শিল্প দূষণের জন্য দায়ী, যার পরে উত্তরপ্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড কানপুর অঞ্চলের আশেপাশের ৯৮ টি কারখানা বন্ধ করতে শুরু করে।
আদিত্যনাথের দায়িত্ব গ্রহণের পরে তার সরকার এনজিটিকে জানিয়েছিল যে, কানপুরের ৪০০ ট্যানারি অন্যত্র স্থানান্তরিত করা যেতে পারে।

২০১৮ সালের পর হিন্দু ধর্মীয় তীর্থস্থান অর্ধকুম্ভ মেলার আগে সরকারের দমন-পীড়ন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত ট্যানারি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় আদিত্যনাথ সরকার। ৬ বছর পর পর অনুষ্ঠিত এই অর্ধকুম্ভ মেলার উৎসব শেষ হওয়ার পর বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও সরকার পুনরায় ট্যানারি খোলার আদেশ জারি করেনি; ফলে ট্যানারিগুলি আরও ক্ষতির সম্মুখিন হয়। অবশেষে ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ট্যানারিগুলো পুনরায় চালু হয়।
চামড়া রফতানির সঙ্গে জড়িত মুসলিম ব্যবসায়ীরা বলেছেন যে, তারা বিশ্বাস করেন এ ধরনের অবহেলা ইচ্ছাকৃত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ট্যানারির মালিক জনাব ‘খ’ আর্টিকেল ১৪-কে জানিয়েছেন যে, ২০১৮ সালের পরে আদিত্যনাথ সরকারের নীতিগুলিকে তারা তাদের ব্যবসায় “ধ্বংসের” মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন।
তিনি বলেন, “মোদীর আগমনের পর প্রথম এক বা দুই বছর তাদের সরকার নীতি পরিবর্তন করতে সময় নিয়েছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের পরে (যখন আদিত্যনাথ ক্ষমতায় এসেছিল) আমরা অত্যন্ত খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।”

২০১৯ সালের মে মাসে (ভারতের সাধারণ নির্বাচনের একই সময়ে) এনজিটি কানপুর এবং উন্নাও জেলার আরও ৭৮টি ট্যানারি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। ওই বছরের নভেম্বরে এনজিটি কানপুরের ২২টি ট্যানারিকে ২৮০ কোটি টাকা জরিমানা করে, গঙ্গায় ক্রোমিয়াম নামক বিষাক্ত ভারী ধাতু ফেলার অভিযোগে।

দেশব্যাপী কোভিড-১৯ এর দুটি মারাত্মক ঢেউয়ের কারণে অর্থনৈতিক পতনের পরেও, ২০২১ সালের মার্চের পরে উত্তরপ্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড কানপুরের জাজমাউ শিল্প এলাকায় আরও ৯৪ টি ট্যানারি বন্ধ করে দেয়।

২০২১ সালের আগস্টে পরিদর্শন করার সময় ট্যানারিমালিকরা আর্টিকেল ১৪-কে বলেছিলেন যে, মাঘ মেলা এবং বেশ কয়েকটি সরকারী ও ধর্মীয় ছুটির কারণে তাদের ট্যানারি আবার বন্ধ থাকবে। মাঘ মেলা প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়, সাধারণত জানুয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবারো ট্যানারিগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের মার্চ মাসে “অবৈধ” এবং “দূষণকারী” কসাইখানাগুলি বন্ধ করার নির্দেশের অধীনে যখন কানপুরের সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বকর মান্ডি কসাইখানাটি যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন ট্যানারিগুলো কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বড় কসাইখানাগুলির উপর ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা এখন আর সরাসরি কসাইদের কাছ থেকে চামড়া পান না, তাই শত শত লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

ট্যানারি শিল্পের প্রতিনিধিরা বলছেন, ট্যানারি বাণিজ্যে একসময় যে মুনাফা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে যেত, তা এখন নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে।

কানপুরের চামড়া শিল্পের উত্থানের সময় মুসলমানরা আর্থ-সামাজিক গতিশীলতা অর্জন করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, মুখতারুল আমিন এবং তার গ্রুপের নেতৃত্বে জনপ্রিয় সুপারহাউস ট্যানারি গ্রুপ “অ্যালেনহাউস” নামে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছে। মির্জা পরিবার আরেকটি বিশিষ্ট শিল্পপতি পরিবার, যারা রেড টেপ জুতার মালিক। শহরের বিশিষ্ট জেড-স্কয়ার মলটি জুলফিকার হুসেনের জাজ গ্রুপ নির্মাণ করেছিল, যারা ট্যানারি ব্যবসায় দিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু ধন-সম্পদের অধিকারী মুসলিমরা আদিত্যনাথ শাসিত উত্তর প্রদেশে তাদের ব্যবসায়ের অর্থনৈতিক বিকাশ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টসের একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সদস্যও কানপুরের ট্যানারি ও চামড়া ব্যবসায়ের পতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ব্যবসায়ি বলেছেন, “কানপুর থেকে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা হারিয়ে গেছে। আর এখন এর সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।

সুপারহাউজ ট্যানারি, রহমান ইন্ডাস্ট্রিজ সহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশে ঘাঁটি স্থাপন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আরও ৩০-৪০ জন বাংলায় চলে গেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কানপুর-উন্নাওয়ের একটি বহুজাতিক চামড়াজাত পণ্য ব্যবসায়ের একজন মালিক বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে প্রায় তিন মাসের শাটডাউন সময়ের মধ্যে বৈশ্বিক ক্লায়েন্টরা পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চীন ও ভিয়েতনামের সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকে গিয়েছেন। তার মতে, ট্যানারিগুলোর পতন হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানদেরকে প্রভাবিত করেছে অনেক বেশি।
তিনি বলেন, “আমরা (মুসলিমরা) এখন ব্যবসায়ীর পরিবর্তে কারিগর হয়ে গেছি। তবুও ট্যানারি শিল্পের বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।”

কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে, প্রভাবশালী-জাতের হিন্দু মালিকানাধীন ট্যানারি ব্যবসায়গুলি বিকশিত হয়েছে। যদিও এই অভিযোগের কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে প্রায় সকল ক্ষেত্রে এভাবেই মুসলিমরা কৌশলগত বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছেন।


তথ্যসূত্র:
———-
1. Anti-Pollution Norms & State Policies Cripple UP’s Leather Industry, Pushing Muslim Livelihoods To The Brink
https://tinyurl.com/45dm25bd

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিন ভূমি যেন এক উন্মুক্ত কারাগার
পরবর্তী নিবন্ধআরব আমিরাত-সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে শাবাবের আক্রমণ