২০২৩ সালে টিটিপির ৮৮১ অভিযানে ২১৯৩ পাকিস্তানি সেনা হতাহত

- ত্বহা আলী আদনান

0
403

২০২৩ সাল জুড়ে পাকিস্তানে অন্তত ৮৮১টি অপারেশন চালিয়েছেন প্রতিরোধ বাহিনী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)। এতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অন্তত ২১৯৩ সেনা হতাহত হয়েছে।

টিটিপি গত ৩০শে ডিসেম্বর তাদের অফিসিয়াল “উমর” মিডিয়ায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ইনফোগ্রাফি আকারে প্রকাশিত উক্ত প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে পাকিস্তান জুড়ে দলটির পরিচালিত অভিযানের বিবরণ প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২৩ ঈসায়ী সনে পাকিস্তানে সর্বমোট ৮৮১ টি অভিযান চালিয়েছে তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান। সবচেয়ে বেশি অভিযান চালানো হয় আগস্টে। এই মাসে দেশটিতে ১৪৬টি অভিযান চালানো হয়। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর অন্তত ২৮৯ সদস্য হতাহত হয়। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে ১০৫টি এবং জুলাই মাসে ১০১টি অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর অন্তত ৪৮৯ সদস্য হতাহত হয়। এমনিভাবে অক্টোবরে পরিচালিত ৮২টি অভিযানে ২১১ সদস্য হতাহত হয়, নভেম্বরে পরিচালিত ৭৮টি অভিযানে ২১৯ সদস্য হতাহত হয়, মে মাসে পরিচালিত ৭৭টি অভিযানে ২০৬ সদস্য হতাহত হয়। এছাড়া বছরের প্রথম ৬ মাসে ৩০৫টি অভিযান চালান তেহরিকে তালেবানের যোদ্ধারা। এতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অন্তত ৮৭১ সদস্য হতাহত হয়।

সবমিলিয়ে ২০২৩ সালে টিটিপির পরিচালিত অভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর অন্তত ৯৭৭ সদস্য নিহত এবং আরও ১২১৬ সদস্য আহত হয়। এদের মাঝে সেনা এবং রেঞ্জার সদস্য রয়েছে ১০৬৪ জন, পুলিশ এবং সিটিডি সদস্য রয়েছে ৫৯৮ জন, সীমান্তরক্ষী (এফসি) সদস্য রয়েছে ৪৭২ জন এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য রয়েছে ৫৯ জন। এছাড়াও টিটিপির হাতে বন্দী হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর আরও ২৩ সদস্য।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর মুজাহিদগণ ২০৬টি আক্রমণ চালিয়েছেন স্নাইপার ও লেজার গান দ্বারা। এরপর সম্মুখ লড়াইয়ের ঘটনা ঘটেছে ১২৯টি, গেরিলা আক্রমণ চালানো হয়েছে ১২৩টি, অ্যাম্বুশ করা হয়েছে ১১৪টি, পাল্টা আক্রমণ করা হয়েছে ১০৭টি, গ্রেনেড ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে ৯৬টি, লক্ষ্যবস্তুতে চিহ্নিত অভিযান চালানো হয়েছে ৮২টি, ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা হামলা চালানো হয়েছে ১৯টি আর বরকতময় শহিদি অপারেশন চালানো হয়েছে ৫টি।

টিটিপির মুজাহিদগণ তাদের এসব বীরত্বপূর্ণ অভিযানগুলো দেশের ১৩টি রাজ্যের ৪১টি জেলায় পরিচালনা করেছেন। সর্বাধিক অভিযান চালানো হয়েছে ডিআই-খান প্রদেশে, যার সংখ্যা ছিল ২৭১টি, এরপর বান্নুতে ২৬৬টি, পেশোয়ারে ১৮৪টি, মালাকান্দে ৪৬টি, বেলুচিস্তানে ৪০টি, মর্দানে ২৬টি, পাঞ্জাবে ১০টি এবং সোবে ৫টি আর সিন্ধ-সহ অন্য চারটি প্রদেশে ১টি করে অভিযান চালানো হয়েছে।

মুজাহিদগণ বীরত্বপূর্ণ এসকল অভিযান শেষে পাকিস্তানি বাহিনী থেকে ৪২টি ক্লাশিনকোভ, ১২টি বন্দুক এবং ৬টি পিস্তল-সহ অন্যান্য আরও ১৫টি অস্ত্র গনিমত লাভ করেছেন। আর এসকল অভিযানে ধ্বংস হয়েছে পশ্চিমা তাবেদার পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ৮৯টি নজরদারি গোপন ক্যামেরা, ৬৬টি সামরিক যান, ২৬টি গাড়ি, পুলিশ এবং সিটিডির ১৪টি ভবন, সেনাবাহিনীর ১৩টি ভবন এবং ৬টি মোটরসাইকেল-সহ অনান্য অসংখ্য সামরিক সরঞ্জাম।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে পাকিস্তানে দেশটির পশ্চিমা সমর্থিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছিলেন তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান। ঐবছর পাকিস্তানের বড় ২টি ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী “জামায়াতুল-আহরার এবং হিযবুল-আহরার” সহ বেশ কয়েকটি দল তেহরিকে তালেবানের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এরপর থেকে একে একে দেশটির ছোট বড় প্রায় ৪৭টি প্রতিরোধ বাহিনী তেহরিকে তালেবানের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়। সেই সাথে জোরদার হয় পশ্চিমা তাবেদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত আক্রমণ।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআশ-শাবাবের ৪ অভিযানে ১০৩ শত্রু সেনা নিহত, এলাকা বিজয়
পরবর্তী নিবন্ধসারেপুল প্রদেশে ৬ টি বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন