সীতাকুণ্ডে রেলওয়ের আরও প্রায় তিনশ কোটি টাকার ভূমি বেদখল

0
90

রেলের সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাওয়া একরকম ‘স্থায়ী সংস্কৃতি’তে পরিণত হয়েছে। রেলের জমি উদ্ধারে কঠোর আইন থাকলেও এর কার্যকর প্রয়োগে তেমন কোনো তৎপরতা নেই। বর্তমানে রেলের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি দখলদারদের কবলে রয়েছে। উদ্ধার হলেও তা আবার বেদখল হয়ে যায়-এমন মন্তব্য খোদ রেল কর্মকর্তাদের। সম্প্রতি পূর্বাঞ্চল রেলের সীতাকুণ্ডে প্রায় ৩শ কোটি টাকার ৫০ একর ভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এলাকার চিহ্নিত একাধিক ভূমিদস্যুর নেতৃত্বে এই সম্পত্তি দখলে নেওয়া হয়।

সেখানে বসবাসরত প্রায় ৫০০ পরিবারকে (অধিকাংশ রেলের কর্মচারী) উচ্ছেদ করে অবৈধ দখলদাররা। এরপর প্রকাশ্যে স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই জমির চারপাশে টিন দিয়ে বেড়া দেয় তারা। প্রতিকার চেয়ে দুই ভূমিদস্যু ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপর জমি দখল মুক্ত করতে মাঠে নেমেছে। কিন্তু এ অভিযান কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে ২০১৫ সালের ৫ ডিসেম্বরে রেলওয়ের জমি বেদখল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রথম আলোর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ রেলওয়ের ৪ হাজার ৩৯১ একর জমি বেদখলে।

তখন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছে, ‘রেলের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য রেলের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার করা হবে। যারা এসব জমি দখল করে রেখেছে, সেই তালিকা হচ্ছে। যে করেই হোক এসব জমি উদ্ধার করা হবে।’

সেই বক্তব্যের প্রায় ৯ বছর অতিবাহিত হলেও রেলের জমি দখলমুক্ত রাখতে পারেনি সরকার। এখনও আগের রেলপথমন্ত্রীর সুরেই বক্তব্য দিয়েছে বর্তমান রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম।

মো. জিল্লুল হাকিম যুগান্তরকে বলেছে, সীতাকুণ্ডে রেলের জমি দখল মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তারা মাঠে আছেন। দখল মুক্ত করা হচ্ছে ওই জমি। নিশ্চয়ই দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। রেলের কোনো জমি বেদখলে থাকবে না। নিজ থেকে উচ্ছেদ না হলে কিংবা জমি লিজ নেওয়ার যথাযথ ডকুমেন্ট না দেখাতে পারলে-কাউকে রক্ষা করা হবে না। রেলের জমি উদ্ধার করে পরিকল্পনা অনুযায়ী বরাদ্দ এবং স্থাপনা তৈরি করা হবে। অব্যবহৃত জমি কাজে লাগিয়ে আয় বাড়ানো হবে। কারও দখলে রেলের জমি থাকবে না। জমি উদ্ধারে যা যা করণীয় তা করা হবে।

তবে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন, দখলকারীদের বেশির ভাগের সঙ্গেই রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক আছে। এ কারণেই অধিকাংশ সময় দখলমুক্ত করা যায় না।

তবে রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেও জমি দখলের অভিযোগ আছে। বিশেষ করে রেলের শ্রমিকনেতাদের কারণে অনেক জায়গাই দখলমুক্ত করা যায় না।

রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তর সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে আইন অনুযায়ী রেললাইনে দুপাশের (১০ ফুট করে ২০ ফুট) জায়গায় কোনো স্থাপনা করা যাবে না। বেআইনিভাবে রেলের অব্যবহৃত ভূমিতে কোনো স্থাপনা করা যাবে না। এমন আইনি বাধা থাকলেও পুরো রেলে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি ভূমিদস্যুদের দখলে রয়েছে। বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ করা হলেও সেই সব জায়গা পুনরায় বেদখলে চলে যায়।


তথ্যসূত্র:
১. সীতাকুণ্ডে তিনশ কোটি টাকার ভূমি বেদখল – http://tinyurl.com/2y5etdzu
২. রেলের ৪৩৯১ একর জমি বেদখলে – http://tinyurl.com/ms73y7cd

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ“২০২৪ সালের নির্বাচনের আগেই সিএএ কার্যকর হবে”- হিন্দুত্ববাদী নেতা অমিত শাহ
পরবর্তী নিবন্ধভিডিও|| তালিবান প্রশাসন আরও একটি আমেরিকান হেলিকপ্টার মেরামত করেছে