শহীদ আমিরুল মুমিনীন মোল্লা আখতার মুহাম্মদ মনসুর (রহ:)’র উল্লেখযোগ্য সামরিক অর্জন

0
386

শহীদ আমিরুল মুমিনীন মোল্লা আখতার মুহাম্মদ মনসুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন তালেবানের একজন অত্যন্ত শক্তিশালী রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা। তিনি ২০১৬ সালের মে মাসে ডুরান্ড সীমান্তের (পাক-আফগান সীমান্ত) নিকটে একটি আমেরিকান ড্রোন হামলায় শহীদ হন।

আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির পর, শহীদ মোল্লা আখতার মুহাম্মদ মনসুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তিনি আফগান ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের রূপদান করেছিলেন।

শহীদ আমিরুল মুমিনীন রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং সময়ে জিহাদি আন্দোলনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল, যেন এই আন্দোলনের মাঝে শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় থাকে। কারণ মোল্লা মুহাম্মদ মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির দুই জন ডেপুটি একের পর এক বন্দী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজন কারাগারেই শহীদি মৃত্যুর ভাগ্য বরণ করেছিলেন। যখন ইমারতের নেতৃত্ব শহীদ আমিরুল মুমিনীন রহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছে হস্তান্তর করা হয়, তখন আফগানিস্তানে বিদেশী দখলদারদের আক্রমণের সবচেয়ে জোরালোভাবে চলছিল। দেশটিতে তখন ১ লক্ষেরও অধিক বিদেশী সৈন্য বিদ্যমান ছিল।

সেই সময় সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে মুজাহিদগণের মধ্যে বিভক্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে শহীদ আমিরুল মুমিনীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তখন অত্যন্ত সংযমের সাথে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেন। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে তিনি কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছিলেন। তিনি জিহাদি আন্দোলনে জড়িত দলগুলোকে কার্যকরভাবে শক্তিশালী করে তুলতে পেরেছিলেন। পাশাপাশি তাদেরকে তিনি শৃঙ্খলার সাথে সুসংগঠিত করেছিলেন।

ইমারতে নিজের পদমর্যাদার বাইরেও তার দীর্ঘস্থায়ী ও ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার লাভ করেছিল, এমনকি সাধারণ আফগানবাসী তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন ও মেনে চলতেন। ফলে দেশব্যাপী জিহাদি আন্দোলন ব্যাপকভাবে সংগঠিত হয়েছিল। তার অন্যতম অর্জন ছিল, তিনি নেতৃত্বস্থানীয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছিলেন।

তিনি একটি শক্তিশালী সামরিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি কমিশন ও কমিটি আকারে প্রশাসনিক ইউনিট চালু করেছিলেন। এই ইউনিটসমূহ নির্ধারিত কার্যসীমার মধ্যে পৃথক নেতৃত্ব ও দক্ষতার মাধ্যমে পরিচালিত হত, যা একটি মন্ত্রণালয়ের মত কাজ করতো।

তার প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ তালেবান জিহাদ নিছক আন্দোলনে সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তা একই সাথে একটি সরকার কাঠামোতে রূপ লাভ করে। আফগান জনগণের জীবনে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব সরাসরি পরিলক্ষিত হয়েছে।

পূর্বে থেকেই আফগানিস্তানে একক আমীরের নেতৃত্বে জিহাদি কার্যক্রম পরিচালিত হত। তারা শত্রুদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করত। তাদের আন্দোলনগুলো মূলত সামরিক ও গেরিলা প্রকৃতির ছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে স্বাভাবিকভাবেই তা শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। ফলে বেসামরিক জনগণ নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করে।

তাই শহীদ আমিরুল মুমিনীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি একটি ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। এর মাধ্যমে তিনি সামরিক মুজাহিদদের সফলভাবে বিভিন্ন অঞ্চল, ফ্রন্ট, বিভাগ ও ছোট ছোট ইউনিটে সংগঠিত করেন। একই সাথে তিনি বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্থা যেমন বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সম্প্রচার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই কাঠামোগুলো দেশের সকল প্রদেশ ও জেলায় বাস্তবায়ন করা হয়। তখন বেসামরিক কর্মকর্তাগণ মুজাহিদদের পাশাপাশি কাজ করতেন। এই কাঠামোর হাত ধরেই বর্তমান ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে, এই সরকার আজও কার্যকরভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

শতকরা ৮০ ভাগ আফগান নাগরিক তাদের আইনি ও দৈনন্দিন বিষয়াদি সমাধানের ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত কাবুল সরকারের পরিবর্তে তালেবান পরিচালিত অফিস ও আদালতের উপর নির্ভর করতেন। পশ্চিমা গণমাধ্যম এমনকি কাবুল প্রশাসনের নির্দিষ্ট একটি অংশ বিষয়টি স্বীকারও করত। মূলত কাবুলের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের কাছ থেকে আফগানরা সত্যিকার ও ন্যায্য সমাধান প্রত্যাশা করতেন না।

আফগানিস্তানে জিহাদি আন্দোলনে সমন্বয় ও বাস্তবমুখী সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটি পরবর্তীতে ইমারতে ইসলামিয়া সরকার গঠনে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। এছাড়া এটি মুজাহিদদের সাফল্য ও বিজয় অর্জনকে ত্বরান্বিত করে। ফলস্বরূপ, দেশের অভ্যন্তরে ও বৈশ্বিক পর্যায়ে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান একটি স্বাধীন, সক্ষম এবং প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা হিসাবে বিকাশ লাভ করে।

এই অর্জনসমূহ শহীদ আমিরুল মুমিনীন মোল্লা আখতার মুহাম্মদ মনসুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর উদ্যোগের কারণেই সম্ভব হয়েছে, এগুলো তার নিরলস প্রচেষ্টার একটি প্রমাণ। ফলে ইমারতে ইসলামিয়া সরকার ও আফগান জাতি উভয়ই আজ সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে আলহামদুলিল্লাহ।

মূল লেখক: মূসা ফরহাদ
অনুবাদ: আল-ফিরদাওস টিম


তথ্যসূত্র:
1. Most significant accomplishments of Martyr Amir-ul-Momineen, may Allah accept him
https://tinyurl.com/2ezv6rdd

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধজেনিনে ইসরায়েলি হামলায় ডাক্তার, শিক্ষক, ছাত্রসহ সাত ফিলিস্তিনি নিহত
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ২২ মে, ২০২৪