
পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছেন ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ প্রধান বা আমীরুল মু’মিনীন শাইখ হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদা হাফিযাহুল্লাহ।
গত ৪ জুন, পবিত্র হজ্ব ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমীরুল মু’মিনীন শাইখ হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদা হাফিযাহুল্লাহ এর পক্ষ থেকে একটি বার্তা প্রকাশিত হয়। এই বার্তায় তিনি সকলকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা ও হাজ্বীদের জন্য দোয়া চাওয়ার পাশাপাশি ইসলামি বিশ্বাস, কুরবানীর চেতনা, শরিয়াহর গুরুত্ব, মুসলিম উম্মাহর সামষ্টিক দায়িত্ব, আফগানিস্তানের মন্ত্রী, আলেম-ওলামা সহ সর্বস্তরের জনগণের দায়দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে নসিহত ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
বার্তায় হামদ, সানা, তাকবীরের মাধ্যমে তিনি শুরু করেন। কুরবানী, নামাজ, হজ্ব ও তাওহীদের গুরুত্ব সম্বলিত আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কুরবানীর সুন্নাহকে তুলে ধরেন। মহান আল্লাহর নিকট কুরবানী কতটা প্রিয়, তা বর্ণনা করেন। কুরবানীর প্রকৃত চেতনা হিসেবে ইখলাস (নিষ্ঠা), তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) এবং পরিপূর্ণ আনুগত্যের কথা তুলে ধরেন।
তিনি শরিয়াহ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সকলের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা স্মরণ করেন এবং আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন। শরিয়াহ শাসন ধরে রাখতে সকলকে সংকল্পবদ্ধ হওয়ার এবং সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতি জোর দেন।
আলেম-ওলামাদের দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন, কুরআনের আয়াতের মধ্যে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, দ্বীন প্রচার ও সত্য কথা বলার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব আলেমদের। তারা যেনো কোন ভয় ও লোভ-লালসার বশবর্তী না হন এবং শরিয়াহর বিধান সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। এই প্রসঙ্গে তিনি অন্যান্য আসমানী ধর্মের আলেমদের উদাহরণ টেনে আনেন, যারা দুনিয়াবি স্বার্থে দ্বীনকে বিকৃত করেছিলো।
শাসক ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের ব্যাপারে বলেন, তারা যদি দ্বীন অনুযায়ী চলেন, তাহলে জনগণও সৎ পথে থাকবে। এই প্রসঙ্গে তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কিছু বর্ণনা তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে তিনি ফুটিয়ে তুলেন যে, ইসলামি নেতৃত্ব ও শাসনের স্থায়িত্ব শরিয়াহর আনুগত্যের সাথে জড়িত।
বিচারব্যবস্থা ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিচারকদেরকে নিরপেক্ষভাবে ন্যায়বিচার কায়েম ও নির্যাতিতদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। রায় প্রদানে সততা অবলম্বন করতে হবে এবং কারো প্রতি ন্যূনতম জুলুম করা যাবে না।
এছাড়া হজ্ব ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয়, ‘আমর বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকার মন্ত্রণালয়’, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শরণার্থী মন্ত্রণালয়কেও তাদের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। বিশেষত, আমর-নাহী মন্ত্রণালয়কে দায়িত্বের প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা প্রসঙ্গে বলেন, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে যে, তারা যেনো দেশকে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার পথে নিয়ে যান। যেনো আমাদের দেশ পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হতে পারে।
তিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে সম্পদ ও অর্থনৈতিক শক্তিকে বর্তমান যুগের মূল হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেন।
শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব নিয়েও কথা বলেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সাধারণ জনগণের সঙ্গে সদাচরণ, বিনয় এবং জনসেবার শিক্ষা দেন।
ছাত্র সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুল সহ সবধরণের প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদেরকে সময়ের অপচয় থেকে বাঁচতে, জ্ঞানার্জনের প্রতি মনোযোগী হতে এবং জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার নসিহত করছি।’
বার্তায় ফিলিস্তিন ইস্যুতে তিনি সন্ত্রাসী ইসরায়েল কর্তৃক গণহত্যা ও আগ্রাসনকে ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস মানবিক ট্রাজেডি আখ্যা দেন। এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান সরকারের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
পরিশেষে তিনি সকলকে আবারও পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানান এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে দোয়া করেন। আল্লাহ পাক যেনো সকলের আমল কবুল করে নেন, সেই দোয়াও করেন।
তথ্যসূত্র:
1. Congratulatory Message from His Highness Amir al-Mu’minin, Sheikh al-Quran wal-Hadith, Mawlawi Hibatullah Akhundzada (may Allah protect him), on the Auspicious Occasion of Eid al-Adha
– https://tinyurl.com/bdm4mf5y