
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান অভিবাসনবিরোধী ধরপাকড়ের প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন লস অ্যাঞ্জেলেস ছাড়িয়ে অন্তত ১১টি রাজ্যের ১৫টি শহরে বিস্তৃত হয়েছে। একদিকে যখন মার্কিন সরকারের অভিবাসন নীতিকে কেন্দ্র করে আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) কর্তৃক অভিবাসীদের গ্রেফতার ও আটক করার ঘটনা বেড়েই চলছে, তখন অন্যদিকে সাধারণ মানুষের রাস্তায় নেমে আসায় ক্রমাগত বেড়ে উঠেছে এক বিশাল প্রতিবাদ আন্দোলনে। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ইতোমধ্যে সহিংসতা, গণগ্রেফতার, সেনা মোতায়েন এবং কারফিউ পর্যন্ত গড়িয়েছে, বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে।
নিউইয়র্ক, শিকাগো, আটলান্টা থেকে শুরু করে ফিলাডেলফিয়া পর্যন্ত উত্তাল জনস্রোত নেমেছে রাস্তায়। অভিবাসী ধরপাকড় অভিযানের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এখন রূপ নিয়েছে এক বিস্তৃত বিক্ষোভে।
রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে হোয়াইট হাউজও। শহরে শহরে চলছে গণগ্রেফতার। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতোমধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়ার লস আঞ্জেলেস শহরের ডাউনটাউন এলাকায় মঙ্গলবার কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় মেয়র।
সাংবিধানিক নীতির তোয়াক্কা না করে ন্যাশনাল গার্ড (সেনাবাহিনীর একটি শাখা), মেরিন সেনাও মোতায়েন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
তবুও থামছে না, বরং শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভের তীব্রতা আরও বেড়েই চলেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ডাউনটাউন এলাকায় ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) এক বন্দিশালায় আটকে রাখা জনকয়েক অভিবাসীর মুক্তির দাবি থেকেই মূলত বিরাট এই বিক্ষোভ-গ্রেফতারযজ্ঞের সূত্রপাত।
বুধবার সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসের ওই অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ নিউইয়র্ক, শিকাগো, সানফ্রান্সিসকো, ডেনভার, সান্তা আনা, লাসভেগাস, আটলান্টা, ফিলাডেলফিয়া, মিলওয়াকি, সিয়াটল, বোস্টন, ওয়াশিংটন ডিসি, ডালাস, অস্টিন এবং সান আন্তোনিওতে ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বিক্ষোভ করেন বিক্ষোভকারীরা। দিনের বেশির ভাগ সময় শান্তিপূর্ণ থাকলেও সন্ধ্যায় আইসিইর অফিস ভবনের কাছে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ ঘটে। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে টেক্সাসের অস্টিনে শতাধিক মানুষের একটি বড় দল মিছিল করে জে জে পিকল ফেডারেল ভবনের দিকে যায়।
ভবনটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের আইসিই কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। টেক্সাসে এদিন বিক্ষোভকারীদের হাতে ব্যানার ও পতাকা ছিল।
এর আগে সোমবার অস্টিনে বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ডালাসেও পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে সান আন্তোনিওতেও শত শত মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সিটি হলের সামনে সমবেত হয়।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ডাউনটাউনে কারফিউ কার্যকর হওয়ার পর গণহারে বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করতে শুরু করেছে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এলএপিডি)। বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে গত কয়েকদিনে প্রায় ৪০০ জনকে আটক করা হয়েছে।
এর মধ্যে শনিবার ২৭ জন, রোববার ৪০ জন এবং সোমবার ১১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার প্রায় ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এলএপিডি। তবে কারফিউ জারির পরও লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। রাজ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তার বিরোধ বেড়েছে।
তথ্যসূত্র:
1. Which other US cities have joined LA’s protests over immigration raids?
– https://tinyurl.com/yp23fepx
2. Protests flare across US as LA imposes downtown curfew for second night
– https://tinyurl.com/4w3vz7mf